বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র তাপস রায় এক নিশ্বাসে অন্তত কুড়িটি প্রজাতির পাখির নাম গড়গড় করে বলতে পারে। বেশির ভাগই তিস্তা নদীর পাড়ে গজলডোবা এলাকায় দেখতে পাওয়া যায়। তার বাইরে শীতকালে গজলডোবায় তিস্তা ব্যারাজে যে সমস্ত হাঁস চরে বেড়ায় সেগুলির বেশির ভাগই আবার সে চেনে না। সপ্তম শ্রেণির যমুনা বারুই অবশ্য চিল, কাক, বকের বাইরে শঙ্খচিল, চখা, ডাহুকের মতো পরিযায়ী পাখি চেনে। কিন্তু গ্রামের বিভীষণ দাস, নরেশ রায় কিংবা উমেশ দাসরা কখনও ব্যারাজের জলে চরে বেড়ানো পাখিদের নামই শোনেনি। বুধবার তারা অনেকটাই জানল, চিনলও। সৌজন্য বন দফতর ও হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশন। বৈকুণ্ঠপুর বন দফতরের পক্ষ থেকে এদিন গজলডোবা ব্যারাজ লাগোয়া মাঠে আয়োজন করা হয়েছিল কর্মশালার। কর্মশালার উদ্দেশ্য ছিল এলাকার স্কুল পড়ুয়াদের পাখি চেনানো। সহযোগী সংগঠন হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের (ন্যাফ) মুখপাত্র অনিমেষ বসু প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে স্কুল পড়ুয়াদের শোনালেন পাখির গল্প। কেন পুরুষ বাবুই বাসা বানায়। কেনই বা পুরুষ ধনেশ পাখি ডিম ফোটার আগে সহজেই গ্রামগঞ্জে ধরা পড়ে। মন্ত্রমুগ্ধের মতো সে গল্প শুনলো তাপস, নরেশ, যমুনারা। পাখি নিয়ে পড়ুয়াদের কৌতুহল মেটালেন বনপাল মণীন্দ্রচন্দ্র বিশ্বাস, ডিএফও ধর্মদেব রাই-সহ অন্যরা। বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ছাত্র তাপস রায়ের প্রশ্ন যেমন ছিল, পাখি বাঁচিয়ে রাখার সহজ উপায় কী? অনিমেষবাবু বলেন, “পাখিকে ভাল বাসতে হবে। পরিবেশ রক্ষায় একটা পাখিও দায়িত্ব পালন করে। পরিবেশের স্বার্থেই তাই পাখিকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব নিতে হবে।” বনপাল মণীম্দ্র বিশ্বাস বলেন, “একটা সময়ে এই এলাকায় পরিযায়ী পাখি ধরে মাংস হিসাবে বিক্রি করা হত। লাগাতার প্রচার চালানোর পরে এলাকার বাসিন্দারা সচেতন হয়েছেন। পাখিদের ভালবাসতে শিখেছেন। তাতেই পাখি শিকার বন্ধ হয়ে গিয়েছে।”
পিকনিকের মরসুমে মাইক বাজানো বন্ধ করার ব্যাপারে স্কুলের ছেলেমেয়েদেরই উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দেন অনিমেষবাবু। গত কয়েক বছর ধরে গজলডোবা এলাকায় পরিযায়ী পাখি রক্ষার ব্যাপারে সচেতনতা গড়ার কাজে নেমেছেন বৈকুণ্ঠপুর বন দফতর। এলাকার বাসিন্দাদের নিয়ে পরিযায়ী পাখি রক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। এ বছর স্কুল পড়ুয়াদের মধ্যে ওই সচেতনতা তৈরির কাজে নেমেছেন বনকর্তারা। বৈকুণ্ঠপুরের ডিএফও ধর্মদেব রাই বলেন, “পরিবেশ রক্ষার কাজে নতুন প্রজন্মকেই তুলে আনতে হবে। কেননা, আজ যারা স্কুল ছাত্র কয়েক বছর পরে তাঁরাই এলাকার উন্নয়নে সামিল হবেন। গজলডোবার পরিযায়ী পাখিদের কেন রক্ষা করা দরকার সেটা স্কুলের ছেলেমেয়েদেরও এখন বোঝানো দরকার।” ন্যাফের অনিমেষ বসুও মনে করেন, নতুন প্রজন্মকে নিয়েই ভাবনাচিন্তা করা দরকার। তিনি বলেন, “ইতিমধ্যেই সর্বত্র স্কুলের ছেলেমেয়েদের পরিবেশ সম্পর্কে ভাবনাচিন্তা বড়দেরও হার মানিয়ে দিচ্ছে। গজলডোবাও ব্যতিক্রম হবে না।”
বৈকুণ্ঠপুর বন দফতর থেকে গজলডোবা এলাকাকে ‘সংরক্ষিত’ এলাকা ঘোষণার জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এদিনও বনপাল বলেন, “আমাদের আশা, উর্ধ্বতন কর্তারা এই ব্যাপারে দ্রুত অনুমতি দেবেন।” অনুষ্ঠানে ওদলাবাড়ি নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার সোসাইটির বলবীর সিংহ-সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। স্কুল পড়ুয়াদের নিয়ে সেখানে একটি বসে আঁকো প্রতিযোগিতাও হয়। প্রতিযোগিতায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান পেয়েছে তাপস রায়, যমুনা বারুই এবং বিভীষণ দাস। |