সম্পাদকীয় ১...
মানসিকতার সন্ধানে
ণতন্ত্র বস্তুটি মূলত কী? গণতন্ত্র মানে কি একটি সংসদ? প্রতিনিধিত্ব? সংখ্যার প্রতিযোগিতা? না কি অন্য কিছু? ভাবিয়া দেখিলে গণতন্ত্রের সার কথা কিন্তু এইগুলির কোনওটিই নহে। গণতন্ত্রের সার হইল একটি ‘পদ্ধতি’ এক বিশেষ ভাবে কাজ করিবার, ভাবনাচিন্তা করিবার পদ্ধতি, যাহা গোটা ব্যবস্থার প্রতিটি স্তরে ও কোণে বিধৃত থাকিবার কথা। অর্থাৎ আরও গভীর ভাবে ভাবিয়া দেখিলে, গণতন্ত্র প্রকৃতপক্ষে একটি ‘মানস-প্রক্রিয়া’, যাহা কর্ম ও ভাবনার সকল ক্ষেত্রেই প্রকাশিত হইয়া ‘পদ্ধতি’তে পরিণত হয়। সেই মানসপ্রক্রিয়া বলে, নিজের মতই শেষ কথা নয়, অন্যের মতও সম্মানযোগ্য। সকল মতকে পাশাপাশি রাখিয়া বিচার করা, বিচারপূর্বক গরিষ্ঠের মতটি বাছিয়া লওয়াই হইল লক্ষ্য। কিন্তু ভারতে যে গণতন্ত্র দেখা যায়, সেখানে অধিকাংশ সময়েই কী ব্যক্তি, কী দল, কোথাও এই গণতান্ত্রিক মানসপ্রক্রিয়ার প্রতিফলন দেখা যায় না। অন্যের মতকে সম্মান করা বা তাহার যথাযোগ্য বিচারবিবেচনার প্রয়াস দেখা যায় না। গণতান্ত্রিক পদ্ধতির ‘পদ্ধতি’ অংশটি বাদ দিয়া সিদ্ধান্ত অংশটিকেই কেবল বলবৎ হয়। অর্থাৎ যে দলের সংখ্যার জোর বেশি, তাহার মত ছাড়া অন্য কিছু শুনিবার, ভাবিবার, বিচার করিবার অভ্যাসটি সম্পূর্ণ উধাও হইয়া যায়।
অথচ, সিদ্ধান্ত যাহাই হউক না কেন, পদ্ধতিটি নিয়মিত অভ্যাস হিসাবে মানিয়া চলাটাই অত্যন্ত জরুরি ছিল। কেবল যান্ত্রিক অভ্যাস পালন নহে, জরুরি ছিল ভিন্ন মতকে অন্তর হইতে সম্মান করা ও তৎসঙ্গে আলাপ-আলোচনার অবকাশ রাখা। জাতীয় কংগ্রেস যখন ঢাকঢোল পিটাইয়া ঘোষণা করে যে এখন হইতে সরকারের অন্যান্য শরিক দলের সহিত তাহারা নিয়মিত সপ্তাহে তিন বার করিয়া বসিবে, এবং তাহাদের সঙ্গে মত আদানপ্রদান করিবে, শুনিয়া ঈষৎ হাস্য আসে। যাহা হওয়া উচিত ছিল স্বাভাবিক ও অন্যতম প্রধান কর্তব্য, তাহাই এখন গ্রাম্ভারি উদারতা হইয়া বসিয়াছে। কংগ্রেসের দলীয় অভ্যাসের কোনও স্তরে এই গণতান্ত্রিক মানস-প্রক্রিয়ার আভাস নাই, কেবল উপরিস্তরের নির্দেশ মানিবার পন্থাটি রহিয়াছে। সমমানের কোনও ব্যক্তি বা দলের সহিত পারস্পরিক বিনিময়ের অভ্যাস নাই, কেবল যেন তেন প্রকারেণ নিজের মতটি হাসিল করিয়া লওয়া আছে। তিন, চার, পাঁচ যত বারই শরিকদের সহিত বসা হউক না কেন, মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গিটি না বদলাইলে সমস্যার সুরাহা হইবে না। আর, কেবল শরিকরাই বা কেন? বিরোধীদের সহিতও ‘বসা’ দরকার নয় কি? তাঁহারা কি জানেন না যে, সরকার ও বিরোধী দুইটি পক্ষ মিলিয়াই সংসদ, এবং সেই মিলিত অস্তিত্বের পারস্পরিকতাতেই গণতন্ত্রের যাহা কিছু অর্থ? বাস্তবিক কংগ্রেস ও বিজেপির যদি মাঝে মধ্যে পারস্পরিক মত-বিনিময় ও সৌহার্দ্যমূলক আদানপ্রদানের অভ্যাস থাকিত, তাহা হইলে শরিক দলগুলিও এ ভাবে কথায় কথায় সরকারকে বিপন্ন করিয়া গণতন্ত্রের সর্বনাশ করিতে পারিত না।
বিরোধীদের সহিত সৌহার্দ্যের কিয়ৎ চর্চা লক্ষিত হয় পশ্চিমি বিশ্বে। নিয়মিত ভিত্তিতে নহে, একমাত্র কোনও বড় সংকটময় পরিস্থিতিতে। পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও গোড়ায় সৌহার্দ্য অভ্যাসের কিছু প্রচেষ্টা করিয়াছিলেন। তবে সময় যতই কাটিতেছে, তিনিও গোড়ার অভ্যাস কাটাইয়া উঠিয়া চালু মেজাজটি রপ্ত করিয়া ফেলিয়াছেন, সংঘর্ষ ব্যতীত বিরোধীদের সহিত তাঁহার অন্য সম্পর্ক ইতিমধ্যেই লুপ্ত। একটি কথা কেন্দ্রে রাজ্যে সর্বত্র নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা ভুলিয়া যান। ভুলিয়া যান যে, আদানপ্রদানের মাধ্যমে কেবল অন্যকেই গুরুত্ব দেওয়া হয় না, নিজের গ্রহণযোগ্যতাও অনেকাংশে বাড়ে। এই মানসপ্রক্রিয়াটি রপ্ত করিলে তাঁহাদের নিজেদেরও মঙ্গল।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.