আগাম নির্বাচন নয়, পঞ্চায়েতে উন্নয়নই এখন লক্ষ্য মুখ্যমন্ত্রীর
নমোহন সিংহের সরকারের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার অথবা অন্তর্বর্তী নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করা আপাতত লক্ষ্য নয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তিনি চাইছেন, আগামী বছর মে মাসের পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তৃণমূলের পায়ের তলার জমি আরও শক্ত করে নিতে।
এমনিতে ২০১৩-র মে মাসে পঞ্চায়েত ভোট হওয়ার কথা থাকলেও কিছু দিন আগে পর্যন্ত মনে করা হচ্ছিল তা এগিয়ে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি নাগাদ করতে পারেন মমতা। তৃণমূলের একটা অংশের অভিমত ছিল, ভোট যত তাড়াতাড়ি হবে ততই তাদের সুবিধা। কারণ, সে ক্ষেত্রে সিপিএম তথা বামফ্রন্ট ঘর গোছানোর সুযোগ কম পাবে। কিন্তু এখন তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, পঞ্চায়েত ভোট না-ও এগিয়ে আনা হতে পারে।
কেন ভোট না-এগোনোর ভাবনা সে সম্পর্কে রাজনীতিকদের দু’টি মত রয়েছে। একটি অংশ বলছে, প্রবীণ নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে পঞ্চায়েত দফতরের দায়িত্ব দেওয়ার পরে দফতরের কাজে গতি এসেছে। গ্রামীণ উন্নয়নের লক্ষ্যে তিনি জেলায় জেলায় নানা প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করতে চাইছেন। পঞ্চায়েত দফতরের বক্তব্য হল, ভোট ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পরে যে হেতু আর নতুন প্রকল্প ঘোষণা করা যায় না, সে হেতু ভোট এগিয়ে আনলে উন্নয়নের প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে। সেই কারণেই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাতে ভোট দেরিতে হলেও আখেরে তৃণমূলের প্রচারের পক্ষে ভালই হবে।
রাজনীতিকদের অন্য একটি অংশ আবার বলছে, বিধানসভা ভোটের সময় গ্রাম বাংলায় তৃণমূলের পক্ষে যে উন্মাদনা ছিল, সাম্প্রতিক নানা ঘটনার পরে যে তাতে কিছুটা হলেও ভাটা পড়েছে, সেটা বুঝতে পারছেন মমতা। সেই কারণেই পঞ্চায়েত ভোট এগিয়ে না-এনে উন্নয়নমূলক কাজের প্রকল্পে জোর দিতে চাইছেন তিনি। যাতে তাকে মূলধন করে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে দলের প্রভাব-প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠা করা যায়।
কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটের আগে কংগ্রেসের সঙ্গে মমতার সমীকরণ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? আপাতত সেই সম্পর্কের কেন্দ্র আরও একটি নির্বাচন। রাষ্ট্রপতি পদের জন্য।
কংগ্রেস সূত্র বলছে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন জুলাই মাসে হলেও তার প্রক্রিয়া এপ্রিল থেকেই শুরু হয়ে যাবে। কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব জানেন, বিজেপি-র সঙ্গে ঐকমত্য না-হলে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে জেতাতে মমতা এবং মুলায়ম সিংহ যাদবের সমর্থন তাঁদের দরকার হবেই। আর সেই প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে মমতার সঙ্গে কোনও রকম সংঘাতে যেতে চাইছেন না তাঁরা।
সেই কারণেই দীনেশ ত্রিবেদীকে নিয়ে জেদাজেদির পথে যায়নি কংগ্রেস। বরং মমতার কথাই মেনেছে। দীপা দাশমুন্সির মতো আক্রমণাত্মক রাজনীতিতে বিশ্বাসী প্রদেশ কংগ্রেস নেত্রীকেও হাইকম্যান্ড বলেছে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পর্যন্ত ধৈর্য ধরুন। তার পর অবস্থা বুঝে পরবর্তী রণকৌশল স্থির করতে হবে।
তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ আবার মনে করছেন, দীনেশের বদলে মুকুল রায়কে রেলমন্ত্রী করায় কেন্দ্রের সঙ্গে দলের সমঝোতা আরও শক্তিশালী হবে। কারণ, মুকুল মমতার ঘনিষ্ঠ। পূর্ণমন্ত্রী হওয়ার সুবাদে এখন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর নিয়মিত যোগাযোগ থাকবে। ফলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মমতার যোগাযোগের নির্ভরযোগ্য সেতু হিসেবে কাজ করতে পারবেন তিনি। তৃণমূলের এক নেতার কথায়, “দীনেশ ছিলেন কংগ্রেস-ঘনিষ্ঠ। আর মমতার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল কম। এখন মমতার নিজের লোক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন। ফলে জোট আরও শক্তিশালী হবে।”
কিন্তু ঘটনা হল, মমতা যে ভাবে তথাকথিত ‘তৃতীয় ফ্রন্ট’ গঠনের জন্য সক্রিয় হয়েছেন, তাতে কেন্দ্রে কংগ্রেসের একাংশ আশঙ্কিত। আঞ্চলিক দলগুলির এই একজোট হওয়া প্রসঙ্গে মমতা অবশ্য স্পষ্টই বলেছেন, “এটা কোনও তৃতীয় ফ্রন্টের রাজনীতি নয়। আসলে বিভিন্ন রাজ্যের সমস্যা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীরা চিরকালই একযোগে কাজ করেন। এটা নতুন কিছু নয়।” আর কেন্দ্রে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়ে সরকার ফেলার জল্পনা সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য, “আমি অন্তর্বর্তী নির্বাচনের পক্ষে নই। ভোটে জিতে ইউপিএ পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় এসেছে। আমরা রাজনৈতিক অস্থিরতা চাই না।” তবে একই সঙ্গে তিনি বলেন, প্রতিটি রাজনৈতিক দলকেই যে কোনও ধরনের সম্ভাবনার জন্য প্রস্তুত থাকা উচিত।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.