|
|
|
|
বকেয়া আদায় না হলে খুলবে না ব্যাঙ্ক, উদ্বেগ |
অনির্বাণ রায় • জলপাইগুড়ি |
এক সময়ে যে ঘরটি গমগম করত, এখন তা বেশিরভাগ সময়ে সুনসান। ফাইলের স্তুপে ঘুণপোকার সংসার। বেলা এগারোটার আগে ঝাঁপ খোলে না। বন্ধ দু’টোয়। জলপাইগুড়ি পিপলস কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের সদর দফতরের এটাই প্রতিদিনের ছবি।
বছরের পর বছর অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ বাড়তে থাকলে সমবায় ব্যাঙ্কের কী হাল হতে পারে, তার অন্যতম উদাহরণ এই শতাব্দী প্রাচীন ব্যাঙ্কটি। দু’বছর ধরে কর্মীদের বেতন বন্ধ। ১৯১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ব্যাঙ্কটি এক সময়ে উত্তরবঙ্গের অগ্রণী সমবায় ব্যাঙ্ক হিসেবে পরিচিত ছিল। জেলা জুড়ে ১০টি শাখা। এখন যার মধ্যে ৭টিই বন্ধ। যে তিনটে শাখা চলছে সেগুলিও ধুঁকছে। আমানতকারীরা টাকা না পেয়ে প্রতিদিনই মেটেলি শাখায় হত্যে দিচ্ছেন।
কেন ব্যাঙ্কের এই হাল? যে ব্যাঙ্কের মাধ্যমে বছর চোদ্দ আগে ২৫-৩০ কোটি টাকার লেনদেন চলত, সেই ব্যাঙ্কের আর্থিক রিপোর্ট বলছে, অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ সীমা ছাড়িয়ে যাওয়াতেই একের পর এক শাখাগুলি বন্ধ হতে শুরু করে। পাশাপাশি দুর্নীতি, অনিয়মের নানা অভিযোগ তো রয়েইছে। তবে দুর্দশার মূল কারণ অনাদায়ী ঋণ। ব্যাঙ্কের কাজকর্ম নিয়ে তৈরি সরকারি রিপোর্টেই সেই কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ব্যাঙ্কে গচ্ছিত আমানতকারীদের টাকার পরিমাণ বর্তমানে প্রায় ৫ কোটি টাকা। কিন্তু অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ সাড়ে ৬ কোটি টাকা। সেই টাকার খানিকটা আদায় হলেই আমানতকারীদের কিছু কিছু করে টাকা ফেরত দিয়ে ব্যাঙ্ক ফের ঘুরে দাঁড়াতে পারে বলে অডিট রিপোর্টে অবশ্য উল্লেখ করা হয়েছে। সেই আশাতেই কর্মীরা সকালেই নিয়ম মাফিক ব্যাঙ্কের দরজা খুলে বসেন। কিন্তু, মুখ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বিবৃতির পরে কর্মীরা ঘোর দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
অনাদায়ী ঋণ আদায় করতে না পেরে ২০০০-০১ সালে ব্যাঙ্কটি আগেও একবার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তখন অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা। সরকারের তরফে ব্যাঙ্কে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। সেই প্রশাসকের তত্ত্বাবধানেই ২০০৪-০৫ সালে ফের অনাদায়ী ঋণ আদায়ের প্রক্রিয়া শুরু হয়। ঋণ পরিশোধ করা না হলে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে বলে ঋণখেলাপিদের নামে পোস্টারও দেওয়া হয়। তাঁদের বাড়িতে হানা দিতে শুরু করেন ব্যাঙ্ক কর্মীরা। সেই উদ্যোগের ফলে বছর দু’য়েকে মধ্যে প্রায় দেড় কোটি টাকা বকেয়া ঋণ আদায় হয়। সেই টাকা দিয়ে ব্যাঙ্ক আবার ব্যবসা শুরু করে। কিন্তু যে প্রশাসকেরা বকেয়া আদায়ে সচেষ্ট হয়েছিল, তাঁদের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় উদ্যোগে ভাঁটা পড়ে। অনাদায়ী ঋণ আর উদ্ধার করা যায়নি। তার ফলেই ২০০৯ সালে ফের ব্যাঙ্কের শাখাগুলি বন্ধ হতে শুরু করে। কর্মীদের বেতন বন্ধ হয়ে যায়।
বর্তমানে ব্যাঙ্কের কাজকর্ম দেখভালের জন্য সরকারের তরফে এক আধিকারিককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি পুরনো পথেই বাকেয়া ঋণ উদ্ধারের চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নোটিস দেওয়া যাবে না বলে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরে আর তা সম্ভব কি না, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ব্যাঙ্ক কর্মীরা। বুধবার জলপাইগুড়িতে ব্যাঙ্কের সদর দফতরে দাড়িয়ে ব্যাঙ্কের এক কর্মী বলেন, “ঋণ আদায় করতে না পারলে সমবায় ব্যাঙ্কের টিকে থাকা সম্ভব নয়। কয়েক বছর আগে ব্যাঙ্ক কোটি টাকার ওপরে বকেয়া ঋণের টাকা উদ্ধার করেছে। তখন ব্যাঙ্ক চালুও করা গিয়েছিল। ব্যাঙ্ককে বাঁচাতে ফের সেই ভাবে উদ্যোগী হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে তা কী আদৌ সম্ভব হবে?”
ব্যাঙ্কের দায়িত্বে থাকা আধিকারিক সুভাষ গুহ বলেন, “অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ ক্রমেই বেড়ে গিয়েছে। সেগুলি পরিশোধ না হওয়ায় আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বকেয়া ঋণ আদায় করতে ফের নোটিস দেওয়ার সিদ্ধান্তও হয়েছে। দেখা যাক কী হয়?”
|
এই সংক্রান্ত অন্য খবর
• তমলুকের ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের নামেই অভিযোগ
|
|
|
|
|
|