|
|
|
|
তরাই-ডুয়ার্স নিয়ে আন্দোলন শুরু |
জিটিএ-র নির্বাচনী বিধি সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ) গঠন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হতেই তরাই-ডুয়ার্সের অন্তর্ভুক্তির প্রশ্নে পাহাড় ও সমতল কিছুটা উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে আজ, শুক্রবার মহাকরণে মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠক হবে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা নেতৃত্বের। কথা হতে পারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও।
বুধবার জিটিএ আইন কার্যকর করে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার ‘জিটিএ নির্বাচনী বিধি’ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি হয়েছে। বস্তুত, এটাই হল নির্বাচনের মাধ্যমে ৪৫টি আসন বিশিষ্ট জিটিএ গঠনের লক্ষ্যে প্রথম ধাপ। সরকারি সূত্রে বলা হয়েছে, এর পরে জিটিএ-র নির্বাচন প্রক্রিয়া তদারকির কর্তৃপক্ষ এবং নির্বাচনী অফিসার নিয়োগ করে আরও দু’টি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। সেই সঙ্গেই জারি হবে ৪৫টি আসনের সীমানা নির্ধারণের কাজ শুরু করার বিজ্ঞপ্তি। এই সমস্ত কাজ সম্পূর্ণ হলে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হবে।
এক সরকারি মুখপাত্র জানান, গোটা নির্বাচন পরিচালনা করবে রাজ্য সরকার। নির্বাচনী অফিসার হিসাবে সম্ভবত দার্জিলিংয়ের জেলাশাসককেই দায়িত্ব দেওয়া হবে। তাঁর উপরে থাকবেন নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ। ভোটার তালিকা এবং বুথ ধরে ধরে ৪৫টি আসনের সীমানা নির্ধারণ করা হবে। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন মহাকরণ ছেড়ে যাওয়ার আগে বলেন, “রোশন গিরি শুক্রবার আসছেন। মুখ্যসচিবের সঙ্গে দেখা করবেন। আমার সঙ্গেও দেখা করতে চাইলে করবেন।”
নির্বাচন নিয়ে সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি হলেও সবার আগে তরাই, ডুয়ার্সের এলাকা জিটিএ-তে অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে একটা ‘ফয়সালা’ চান মোর্চা নেতৃত্ব। মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি এ দিন বলেন, “তরাই, ডুয়ার্সের এলাকা অন্তর্ভুক্ত ছাড়া জিটিএ-র নির্বাচন মানা আমাদের পক্ষে কী ভাবে সম্ভব? এটা রাজ্য সরকারকে বুঝতে হবে। আমরা রাজ্য সরকারকে মনোনীত জিটিএ গঠনের জন্য অনুরোধ করব।”
পাহাড়ে মোর্চার বিরোধী দলের অনেক নেতাও প্রশ্ন তুলেছেন, তরাই-ডুয়ার্সের কোনও অংশ অন্তর্ভুক্ত না করেই কেন জিটিএ-র ভোট হবে? এমনকী, মোর্চা গোর্খাল্যান্ডের নাম করে আন্দোলনে নেমে শেষ পর্যন্ত কাজের কাজ করতে পারেনি অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নেমেছে কমিউনিস্ট পার্টি অফ রেভোলিউশনারি মার্ক্সিস্ট (সিপিআরএম)। ১৭ মার্চ নয়াদিল্লিতে যন্তর-মন্তরে অনশন আন্দোলন করবে সিপিআরএম। অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগ, জিএনএলএফের নেতাদের একাংশও পরিস্থিতি দেখে ফের রাস্তায় নামার কথা ভাবছেন।
পাশাপাশি, আদিবাসী বিকাশ পরিষদ, বাংলা ও বাংলা ভাষা বাঁচাও সমিতি, কামতাপুর প্রোগ্রেসিভ পার্টি-সহ ১১টি সংগঠনের যৌথ মঞ্চ জিটিএ-তে তরাই-ডুয়ার্সের অন্তর্ভুক্তির চেষ্টার বিরোধিতায় আগামী ৫ ও ৬ এপ্রিল বাংলা বন্ধের হুমকি দিয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তরাই-ডুয়ার্সের নানা এলাকায় রেল অবরোধ করে ১১টি সংগঠনের যৌথ কমিটি। তাতে উত্তর-পূর্ব রেলের বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রায় ২ ঘণ্টা ট্রেন চলাচল স্তব্ধ হয়ে যায়। নিউ মাল জংশনে কমিটির সদস্যরা আপ কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস অবরোধ করেন। মালবাজার জনজাগরণের সম্পাদক তথা যৌথ কমিটির আহ্বায়ক নীলাদ্রি চক্রবর্তী বলেন, “জিটিএতে তরাই-ডুয়ার্সের সামান্যতম এলাকার অন্তর্ভুক্তিও মানা হবে না।” এ দিন সকাল ১০টা থেকে ১২টার মধ্যে শিলিগুড়ির রাঙাপানিতে দু’দফায় রেল অবরোধ হয়।
এই অবস্থায় জিটিএ নির্বাচন হলে ফল কী হতে পারে, তা নিয়ে মোর্চার অন্দরে চলছে নানা জল্পনা। কারণ, সুবাস ঘিসিংকে হটিয়ে পাহাড়ে কর্তৃত্ব কায়েম করার পর থেকেই মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ তরাই-ডুয়ার্সের কিছু অংশ পাহাড়ের স্বশাসনের আওতায় আনা হবে বলে আশ্বাস দিয়ে এসেছেন। কিন্তু, জিটিএ গঠনের পরে রাজ্য সরকার জানিয়েছে, আপাতত দার্জিলিং গোর্খা পার্বত্য পরিষদের (ডিজিএইচসি) আওতাধীন এলাকাতেই জিটিএ-এর নির্বাচন হবে।
এতে মোর্চার কট্টরপন্থীরা বেঁকে বসেছেন। তাঁদের আশঙ্কা, শুধু ডিজিএইচসি আওতাভুক্ত এলাকায় ভোট হলে ঘরে-বাইরে সমালোচনার মুখে পড়তে হতে পারে। তাই তাঁরা রাজ্য সরকারের কাছে মনোনীত বোর্ড গঠনের জন্য আর্জি জানাবেন। সে জন্যই আজ, শুক্রবার রোশন গিরির নেতৃত্বে এক প্রতিনিধিদল মুখ্যমন্ত্রীকে ওই অনুরোধ করবেন। যদিও প্রশাসনিক সূত্রের খবর, জিটিএ আইন অনুসারে নির্বাচন ছাড়া জিটিএ-এ বোর্ড গঠন হতেই পারে না। সে ক্ষেত্রে কী ভাবে মনোনীত জিটিএ গঠন হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। রোশন গিরি বলেন, “আমরা কিছু জানি না। কী ভাবে কী হবে তা কেন্দ্র ও রাজ্যকে ঠিক করতে হবে।”
রাজ্য-কেন্দ্রের কোর্টে বল ঠেললেও মোর্চার নেতাদের কয়েক জন জানান, রাজ্য সরকারকে বেকায়দায় ফেলা তাঁদের উদ্দেশ্য নয়। সে জন্য মোর্চার ‘রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা’-র কথা মাথায় রেখে আপাতত মনোনীত বোর্ড গঠনের জন্য অনুরোধ করা হবে। পরে সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত বিচারপতি শ্যামল সেনের কমিটির রিপোর্ট এলে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হবে। ইতিমধ্যে জিটিএ-এর মাধ্যমে বড় মাপের উন্নয়নমূলক প্রকল্পে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে পারলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া অপেক্ষাকৃত সহজ হবে বলে কিছু মোর্চা নেতার ধারণা। মোর্চা সূত্রের খবর, ১৮ মার্চ মংপুতে তরাই ও ডুয়ার্সের মোর্চা নেতা-কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করবেন বিমল গুরুঙ্গ। |
|
|
|
|
|