ঋণ মকুবের নির্দেশ দেয়নি হাইকোর্টও
তমলুকের ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের নামেই অভিযোগ
মুখ্যমন্ত্রীর ‘হুঁশিয়ারি’ মতোই তমলুকের সেই সমবায় ব্যাঙ্কের ম্যানেজারের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের হল। বুধবার সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী যখন নন্দীগ্রামে ‘কৃষক-দিবস’ পালনে ব্যস্ত, তখনই মেদিনীপুর-২ রেঞ্জের অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার অফ কো-অপারেটিভ সোসাইটিজ (এআরসিএস) অনিমেষ সেন ওই তমলুক কোঅপারেটিভ এগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল ডেভলপমেন্ট ব্যাঙ্ক লিমিটেডের তমলুক শাখার ম্যানেজার প্রণবকুমার ভুঁইয়ার নামে ডায়েরি করেন। ঋণখেলাপিদের বন্ধকী জমির নিলাম-সংক্রান্ত নোটিসের পোস্টার ছড়ানোয় ‘অশান্তির আশঙ্কা’ জানিয়ে তমলুক থানায় ওই ডায়েরি করা হয়েছে। পোস্টারে মুদ্রকের নাম ছিল না। ডায়েরি হয়েছে অনামা মুদ্রকের বিরুদ্ধেও।
পুলিশ অবশ্য এ হেন অভিযোগে দণ্ডবিধির কী ধারা প্রয়োগ হবে, ভেবে পাচ্ছে না। অভিযোগের বিষয়টি আদালতে জানিয়ে আদালতের নির্দেশক্রমেই পদক্ষেপ করা হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এআরসিএস-এর ডায়েরি নিয়ে অবশ্য বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ওই সমবায় ব্যাঙ্কটির চেয়ারম্যান তথা শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লক তৃণমূল সভাপতি এবং কাঁখরদা পঞ্চায়েতের প্রধান নিকুঞ্জ মান্না। তাঁর দাবি, “এআরসিএসের অনুমতি নিয়েই নিলাম-নোটিস দেওয়া হয়েছিল। সমবায় আইনে বন্ধকী সম্পত্তি নিলামের ক্ষেত্রে এআরসিএসের অনুমতি বাধ্যতামূলক। আমরা যা করেছি সবই আইন মেনে।” রাজ্য সরকারের সর্বোচ্চ স্তরের নির্দেশে ইতিমধ্যেই অবশ্য নিলাম স্থগিত করতে হয়েছে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে। অনাদায়ী ঋণ আদায়ে এর পর কী করবেন, সে নিয়ে স্পষ্ট কিছু জানাতেও পারছেন না নিকুঞ্জবাবুরা। তাঁর বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী বলার পর আর কিছু ভাবছি না।”
অন্য দিকে, সমবায়-কর্তা অনিমেষবাবুর দাবি, “বন্ধকী সম্পত্তি নিলামের ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী সেল্স অফিসার নিয়োগ করা আমার দায়িত্ব। এ ক্ষেত্রেও করেছিলাম। কিন্তু নিলামের জন্য ঋণখেলাপির ছবি-সহ পোস্টার ছাপিয়ে তাঁর সম্মানহানির অধিকার আইন দেয়নি। কে বা কারা পোস্টার দিল, তাতে অশান্তি হতে পারে আশঙ্কা করে থানায় ‘রিপোর্ট’ করেছি।” ‘অভিযুক্ত’ ব্যাঙ্ক ম্যানেজার প্রণববাবু ডায়েরি-র বিষয়টি ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলেই মন্তব্য করেছেন। তাঁর কথায়, “অনাদায়ী ঋণ আদায়ে কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মতো এবং আইন মেনে পদক্ষেপ করার পরেও যা হল, তা দুর্ভাগ্যজনক।”
ব্যাঙ্ক ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ২০০৮-এর ফেব্রুয়ারিতে কেন্দ্রীয় বাজেটে কৃষি-ঋণ মকুব সংক্রান্ত একটি ঘোষণার পরেই তমলুক মহকুমায় ঋণ ছাড়ের দাবিতে রীতিমতো ‘কৃষক সংগ্রাম কমিটি’ তৈরি করেন ঋণগ্রহীতাদের একাংশ। সেই কমিটি একাধিক বার জেলা প্রশাসন এবং ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের কাছে ঋণ মকুবের দাবি জানায়। কেন্দ্রীয় বাজেটের ঘোষণার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যাঁদের সুদে-মূলে ছাড় দেওয়া যায়, তাঁদের জন্য ছাড়ের ব্যবস্থাও করে ব্যাঙ্ক। কিন্তু সবার ঋণ মকুবের জন্য কমিটির দাবি মানা যে সম্ভব নয়, তা স্পষ্টই জানান ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। জেলা প্রশাসনেও গুরুত্ব না পেয়ে কমিটির সমর্থক পাঁশকুড়ায় একদল ঋণগ্রহীতা কলকাতা হাইকোর্টেরও দ্বারস্থ হয়েছিলেন। হাইকোর্টও ঋণ মকুবের নির্দেশ না দিয়ে ২০১১-র নভেম্বরে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গেই গ্রাহকদের আলোচনা করার পরামর্শ দেয়। তার পরে ফের এক দফা ব্যাঙ্ক ও জেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয় কমিটি। কিন্তু ঋণ মকুব কিছুতেই সম্ভব নয় বলে ফের জানায় ব্যাঙ্ক। তাগাদা দিয়ে ঋণগ্রহীতাদের বার বার নোটিস দেওয়ার পরে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা হিসাবে কয়েক জনের বন্ধকী সম্পত্তির নিলাম-নোটিস জারি করা হয়। তবে তাগাদা-নোটিসের পরেই অবশ্য ‘কৃষক-কমিটি’র নেতা শঙ্করী আচার্য-সহ অনেকে ঋণ শোধ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু একাংশ ঋণগ্রহীতা মরিয়া চেষ্টা হিসাবে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হন।
আর মুখ্যমন্ত্রীর কথাতেই এখন থমকে গিয়েছে অনাদায়ী ঋণ আদায়ের উদ্যোগ। সমবায় চলবে কী ভাবে, ঋণ আদায় না হলে দরিদ্র ক্ষুদ্র চাষিকে সমবায়ই বা ভবিষ্যতে কী ভাবে ঋণ দেবে--সব নিয়েই এখন ধোঁয়াশা। শঙ্করীবাবুও এখন মানছেন, “সবার ঋণ মকুব করা হলে সত্যিই করুণ হবে ব্যাঙ্কের অবস্থা। আলোচনা চাই ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে।”

এই সংক্রান্ত অন্য খবর


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.