|
|
|
|
পশ্চিম মেদিনীপুর |
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় চিন্তায় সমবায় ব্যাঙ্ক |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
পশ্চিম মেদিনীপুরের বিদ্যাসাগর সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ ১৩ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা। মেদিনীপুর এগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল ডেভলপমেন্ট ব্যাঙ্কের অনাদায়ী ৮ কোটি। শুধুমাত্র কৃষি-ঋণের ক্ষেত্রেই এই হিসাব দু’টি সমবায় ব্যাঙ্কে। প্রতি বছরই ঋণের কিছু পরিমাণ অর্থ অনাদায়ী থেকে যায়। বাড়তে বাড়তে এখন ১৩ কোটি, ৮ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। ঋণ পরিশোধের জন্য নানা ভাবে চাপ দেওয়ার পরেও টাকা আদায়ে ব্যর্থ ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। যাঁদের কাছ থেকে ঋণের টাকা আদায় করা যায়নি, তাঁদের প্রত্যেকেরই জমি বন্ধক রেখে ঋণ দিয়েছিলেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। তেমন হলে এত দিন বন্ধকী-জমি নিলাম করেই টাকা ফেরৎ পেত ব্যাঙ্ক। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরে সে রাস্তা বন্ধ। ঋণ-শোধের আগ্রহও আরও কমবে বলেই আশঙ্কা সমবায় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের। তাই, এ বার থেকে কৃষি ক্ষেত্রে ঋণদানে বিরত থাকারই চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে সমবায়-মহলে।
কোনও ব্যাঙ্কই অবশ্য এখনও নির্দেশিকা জারি করেনি। একটি সমবায় ব্যাঙ্কের এক আধিকারিকের বক্তব্য, “নির্দেশিকা জারি করে সরকারের কোপে পড়ব নাকি! তবে এটা ঠিক যে এ বার থেকে আর কৃষি-ঋণ দিতে পারব না। সরকারি কর্মী বা ব্যবসায়ীদেরই ঋণ দেব। দিনের পর দিন অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ বাড়লে ব্যাঙ্কই তো দেউলিয়া হয়ে যাবে।” |
|
বিদ্যাসাগর সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক |
মেদিনীপুর এগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল ডেভলপমেন্ট ব্যাঙ্কের সিইও সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ঋণ আদায়ের জন্য এখনও আমাদের কারও জমি বাজেয়াপ্ত করে তা নিলাম করতে হয়নি ঠিকই। নানা ভাবে বুঝিয়েই ঋণ আদায় চলছিল। তবে জমি বাজেয়াপ্ত করে নেওয়া হবে, কখনও কখনও এই ভয়টাও দেখাতে হত। তাতেও আমাদের ব্যাঙ্কের ৮ কোটি টাকা অনাদায়ী হয়েছে। এ বার সেই ভয়টাও না থাকলে ঋণ আদায় কঠিন হয়ে যাবে। সরকার কিছু চিন্তাভাবনা করবে, সে দিকেই তাকিয়ে রয়েছি।” ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান বীরেশ দেব বলেন, “সরকারের নতুন ঘোষণার পর অনেকেই চিন্তিত। রাজ্য সরকার নিশ্চয়ই সব দিক খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করবে।”
বিদ্যাসাগর সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের জেনারেল ম্যানেজার বিবেক সেন অবশ্য একটু অন্য ভাবনার পক্ষপাতী। তাঁর কথায়, “প্রথমে ভাবতে হবে কৃষকেরা কেন ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। কৃষকেরা কি ফসলের সঠিক মূল্য পাচ্ছেন? সহয়াকমূল্যে কেন ধান বিক্রি করতে পারছেন না, কেন আলু বেচতে পারছেন নাসেটাও ভাবতে হবে।” কিন্তু ঋণ পরিশোধের মানসিকতা থাকাও তো জরুরি? অনেকেই তো রয়েছেন, যাঁদের ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা রয়েছে কিন্তু শোধ করছেন না? |
|
মেদিনীপুর এগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল ডেভলপমেন্ট ব্যাঙ্ক |
এ ব্যাপারে বিবেকবাবুর বক্তব্য, “সেটা যেমন ঠিক, আবার প্রকৃত কৃষকেরা ঋণ পরিশোধ করেন তা-ও ঠিক। না হলে এতদিনে সমবায় ব্যাঙ্কগুলো তো উঠেই যেত।” যিনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এতটাই সহমত, তিনিও কিন্তু মেনে নিচ্ছেন যে, “এ বার অনাদায় বাড়তে পারে। এত দিন একটা ভয় ছিল। এ বার সেটা থাকছে না।”
এক ব্যাঙ্ক আধিকারিকের মন্তব্য, “ছেলেমেয়েরা পড়াশোনায় ফাঁকি দিতে চায়। আবার বাবা-মায়েরা চান, তাদের উপর ‘চাপ’ রাখতে। জমি নিলামের ভয়টা ছিল অনেকটাই অভিভাবকের ভূমিকার মতো। চাপ না থাকলে ছেলেপুলেরা অনেক সময়ে বখাটে হয়ে যায়। এ বার ব্যাঙ্কের চাপ দেওয়ার ক্ষমতা না থাকলে ব্যাঙ্কের কারবারের যেমন ক্ষতি, তেমনই ক্ষতিটা চাষিরও। ব্যাঙ্কের কারবার বন্ধ হলে তিনি তো আর ঋণ চাইতেই পারবেন না! মহাজনের যাঁতাকলে পড়ে আরও প্রাণান্ত হবে বাংলার চাষির।” সিপিআইয়ের কৃষক সংগঠন সারা ভারত কৃষকসভার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক বিমল ভট্টাচার্যের আবার দাবি, “সরকারকে আগে ঋণনীতি ঠিক করতে হবে।” তাঁরও বক্তব্য, “এই পরিস্থিতিতে সমবায় ব্যাঙ্কগুলি যদি চাষিদের ঋণ দেওয়া বন্ধ করে দেয়, তা হলে মহাজনি কারবার বাড়বে। তার ফলে আখেরে চাষিরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই সরকারের উচিত সব দিক খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা।” |
ছবি: রামপ্রসাদ সাউ। |
|
|
|
|
|