কারিগরি প্রশিক্ষণে জীবনে বদল রিনা, শেফালিদের
গ্রামের মহিলাদের স্বনির্ভর গোষ্ঠী মানেই ঘর সাজানোর কাগজের ফুল, ফুলদানি, আচার তৈরির চিরাচরিত কাহিনী। বর্তমানে প্রযুক্তি নির্ভর জীবনযাপনকেই স্বনির্ভরতার উপায় করেছেন গ্রামের মহিলাদের গোষ্ঠীগুলি। সংসারে স্বাচ্ছন্দ্য আনতে বছর ১০ আগে পড়শি মহিলাদের নিয়ে গোষ্ঠী তৈরি করেছিলেন খারিজা বেরুবাড়ি গ্রামের উদাপাড়ার গৃহবধূ শেফালি অধিকারি। গোষ্ঠীর ঋণের টাকা মূলধন করে বাঁশ কেটে ফুল, নানান ঘর সাজানোর জিনিস তৈরি করে বাজারে বিক্রি করতেন। কখনও বা বাড়িতে মুড়ি তৈরি করে হাটে পাঠাতেন। তাতে আয় হত সামান্য। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী দুই ছেলে মেয়ের পড়াশোনার খরচ ক্রমেই বাড়তে থাকায় চিন্তায় পড়ে যান শেফালিদেবী। স্বামী বিশ্বনাথবাবু কর্মসূত্রে দীর্ঘদিন বাড়ির বাইরে। সবদিক সামলে খানিকটা হতাশই হয়ে পড়েন পঞ্চাশ ছুইছুই শেফালিদেবী। বাজারের অভাবে পরিশ্রম সাপেক্ষ কিন্তু সামান্য আয়ের হাতের কাজ তৈরিতেও নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েন। এর পরেই ৩০ কিলোমিটার দূরে জলপাইগুড়ি শহরে এসে তিন সপ্তাহের মোবাইল মেরামতির প্রশিক্ষণ নেন। এখন বাড়ির সামনে হাতে লেখা পোস্টার লাগিয়েছেন। সেখানে ‘এখানে মোবাইল সারাই করা হয়’। মোবাইল মেরামতির সঙ্গে সিমকার্ড এবং ব্যাটারিও বিক্রি শুরু করেছেন। আয়ের পরিমাণ দ্বিগুণ বেড়ে গিয়েছে। ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচের চিন্তাও আর নেই। উল্টে তিনি গ্রামের আরও পাঁচ জনকে মোবাইল মেরামতি শেখানোর ক্লাসও শুরু করেছেন। শেফালি দেবীর সঙ্গেই প্রশিক্ষণ নিয়েছেন রিনা শীলশর্মা। সুকান্তনগর কলোনীর বাসিন্দা রিনাদেবী ৮ বছর আগে স্বনির্ভরতার জন্য ওই গোষ্ঠীতে যোগ দিয়েছিলেন। গোষ্ঠীর থেকে ঋণ নিয়ে জ্বালানি কাঠের ব্যবসা শুরু করেন। তাছাড়া মাসে পাঁচ থেকে ছশো টাকার বেশি আয় হত না। মোবাইল মেরামতির প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরে রিনাদেবীর উপার্জনের ছবিটাও পাল্টে গিয়েছে। একটি জলে পড়া অকেজো মোবাইল বা কি-প্যাড ঠিক করেই ৫০০ টাকা আয় হচ্ছে। স্ত্রীর উপার্জন বৃদ্ধিতে সন্তুষ্ট স্বামীও। ছবি একে সংসার চালান শঙ্করবাবু। তিনি বলেন, “মোবাইল মেরামতির কাজ শুরু করায় রিনার উপার্জন বেড়েছে। সংসারেও টাকা দেওয়ার পাশাপাশি বাড়ির নানা কাজেও সহযোগিতা করছে।” সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের গ্রামীণ স্বরোজগার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে মাস দু’য়েক আগে গ্রামের মহিলাদের তিন সপ্তাহের মোবাইলের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। নূন্যতম কম যন্ত্রপাতির সাহায্যে মোবাইল মেরামতির করার কারিগরি শিক্ষা দেওয়া হয় ২০ জন মহিলাকে। সেই প্রশিক্ষণও জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে বেরুবাড়ি, খড়িয়া, বাহাদুর এলাকার ২০ জন বিভিন্ন বয়সী মহিলার। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধিকর্তা প্রশান্ত চৌধুরী বলেন, “সাধারণত গোষ্ঠীর মহিলারা হাতের কাজ, আচার, ধান, মুড়ি তৈরি করার কাজ করেন। কিন্তু হাতের কাজের বাজার সীমিত। বাজারে গিয়ে পাকা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ায় সব সময় সম্ভব হয় না। সেই কারণেই মোবাইলের মেরামতির মত লাভজনক কাজের প্রশিক্ষণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। প্রশিক্ষণের পরে সকলেই ভালো কাজ করছেন।” বেরুবাড়ির শেফালিদেবীর বলেন, “বাড়িতে বসেই কাজ করছি। আয়ও খুব ভাল হচ্ছে। ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ নিয়ে আর চিন্তিত নই। সংসার ভালই চলছে। গোষ্ঠীর অন্য মহিলারাও আমার কাছে মোবাইলের প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।” সদ্য বিবাহিত রীনাদেবীর কথায়, “এই কাজে বাজারের জন্য অপেক্ষায় বসে থাকতে হচ্ছে না। প্রতিদিনই গ্রাহকদের ভিড় বাড়ছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.