|
|
|
|
|
|
|
রেট্রো: সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় |
অভিনেত্রী |
ওপার বাংলা থেকে কলকাতায় এসেছে মেয়েটির পরিবার, দেশভাগের পর... স্কুলে যাতায়াতের ভাড়া বাঁচিয়ে পান খাওয়ার শখ ছিল মেয়েটির। রাসবিহারীর মোড়ে রাংতা-মোড়া পান খেতে খেতে ক্লাসের অন্য মেয়েদের সঙ্গে গল্প জুড়ে দিত। মেয়েটিকে একটু দূর থেকে দাঁড়িয়ে লক্ষ করতেন যে মানুষটি, তিনি রোগা ঢ্যাঙা, চোখ দুটো বড় বড়, পরনে ধুতি, ফুলশার্টের হাতা গোটানো। এক দিন মানুষটি এসে মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলেন ‘আমরা একটা থিয়েটার করছি। তুমি পার্ট করবে?’ মেয়েটি বলে, ‘এ সব আমাকে বলছেন কেন? আমার বাবার সঙ্গে গিয়ে কথা বলুন।’ মানুষটি বলেন ‘তা হলে তোমার আপত্তি নেই, বলো? বাঙাল ভাষার নাটক, তুমি যে রকম কটকট করে কথা বলো, এ রকম করে কথা বললেই হবে।’ “‘কটকট’ করে কথা বলি? লোকটার কথা শুনে আমার হাড়পিত্তি জ্বলে গেল।” সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের স্মৃতিলেখ, মেয়েটি তিনিই, আর মানুষটি ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়। |
|
‘নতুন ইহুদি’ নাটকের রিহার্সালে ভানু তাঁকে নিয়ে গিয়ে সংলাপ বলানোর পর কানু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন ‘এ মেয়ে চমকে দেবে।’ থিয়েটার তো বটেই, বাংলা সিনেমার দর্শককেও তো দীর্ঘকাল বিদ্যুৎস্পৃষ্ট করে রাখলেন সাবিত্রী তাঁর অসামান্য অভিনয়ে। কোনও দৃশ্যে তাঁর সঙ্গে শট টেক-এর সময় রীতিমত সতর্ক থাকতেন উত্তমকুমার, অভিনেত্রী হিসেবে সাবিত্রীকে এতটাই গুরুত্ব দিতেন তিনি। আর সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘আমার সমসাময়িক যতজন অভিনেত্রী বা নায়িকার সঙ্গে অভিনয় করেছি তাঁদের মধ্যে তর্কাতীত ভাবে সর্বশ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হলেন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়।’ উৎপল দত্তও সাবিত্রী সম্পর্কে বলেছিলেন ‘একজন অভিনেত্রী যে এত বড় মাপের কমেডিয়ান হতে পারেন তা আমার জানা ছিল না।’ সাবিত্রীর সেরা ছবিগুলি নিয়ে একটি রেট্রোস্পেকটিভ-এর আয়োজন করছে নন্দন, ১৮-২০ মার্চ। ‘যাতে নতুন প্রজন্ম শিখতে পারে তাঁর অভিনয় থেকে। একই সঙ্গে তাঁকে সংবর্ধিতও করব আমরা।’ জানালেন নন্দন-অধিকর্তা যাদব মণ্ডল। ছবিতে বাঁ দিকে ‘একতারা’ ও ডান দিকে ‘মঞ্জরী অপেরা’য় উত্তমের সঙ্গে।
|
বিটলস ও রবীন্দ্রনাথ |
প্রয়াত গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের আত্মীয়, বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা রঞ্জন ঘোষালকে এই শহর ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’র অন্যতম স্রষ্টা হিসেবেই জানে। গায়ক, সুরস্রষ্টা, নাটক-খ্যাপা রঞ্জন সম্প্রতি কলকাতায় ঘুরে গেলেন বেঙ্গালুরুর ‘জাগৃতি থিয়েটার’-এর প্রযোজনায় তাঁর নতুন নাটক ‘ক্রাইসিস অব সিভিলাইজেশন: আ জার্নি উইথ টেগোর’ নিয়ে। নিউ ইয়র্ক, লন্ডন, ঢাকা এবং চট্টগ্রাম আগেই দেখেছে এই ইংরেজি নাটক। কলকাতায় এই প্রথম। একক অভিনয়ে, আলখাল্লা পরে, দাড়িওয়ালা রঞ্জন কখনও হয়ে উঠলেন রবীন্দ্রনাথ, কখনও আজকের সঞ্চালক। দু’ঘন্টার নাটকে দশটি রবীন্দ্রসঙ্গীতও শোনা গেল তাঁর কণ্ঠে। নাইট উপাধি প্রত্যাখ্যানের চিঠি থেকে ‘আমসত্ত্ব দুধে ফেলি’ ইত্যাদি বহু প্রসঙ্গই এল সেই নাটকে। “রবীন্দ্রনাথেই ডুবে আছি,” বলছিলেন বেঙ্গালুরুর ‘ইয়েলো সাবমেরিন’ বাড়ির বাসিন্দা। বোঝা গেল, বাড়ির নামফলকে ‘বিটল্স’ আর হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ নিয়ে এখনও তারুণ্যে ভরপুর রঞ্জন।
|
ট্র্যাম্প |
|
ছবিটা নিউ ইয়র্ক-এর। এরকমই অসলো প্যারিস লন্ডন কিয়োটো কলকাতা... নানা শহরের স্থাপত্য সাদাকালো ছবির প্রদর্শনীটিতে। দেখতে-দেখতে সীমান্ত মুছে যায়, মনে হয় যেন কেবলই হাঁটছি কোনও শহরের রাস্তায়, নজরে আসছে আবজানো দরজা, জানলার খড়খড়ি, অন্যমনস্ক মুখ, ব্যস্ত যানবাহন, রাস্তার আলো-আঁধারি। প্রকাশনার কাজে পৃথিবীর এ-শহর ও-শহর ঘুরতে ঘুরতে অনবরত ছবি তুলে গেছেন নবীন কিশোর নিজের পুরনো ক্যামেরায়। ‘থিয়েটারে আলো করতাম এক সময়, লাইট ডিজাইনিং থেকেই ফোটোগ্রাফির নেশা। ছবি বেছেছেন আমাদেরই দুই সম্পাদক সুনন্দিনী বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিষাণ সমাদ্দার, আর প্রিন্ট বিকাশ বসুর, ওঁদের হাতযশেই এ-প্রদর্শনী।’ জানালেন সিগাল বুক্স-এর কর্ণধার। নবীনের এই প্রথম প্রদর্শনী। ‘ট্র্যাম্প’। সিগাল ফাউন্ডেশন ফর দ্য আর্টস-এ। চলবে ১৮ মার্চ পর্যন্ত, রোজ ১১টা-৮টা। উদ্যোগে সিগাল-এর সঙ্গে দিল্লির নরওয়ে দূতাবাস।
|
হয়ে ওঠা |
‘রয়েল বেঙ্গল রহস্য’র প্রথম খসড়া থেকে শেষ খসড়া, মায় নাম অবধি বদলে গিয়েছিল সত্যজিতের হাতে। আবার সন্দীপ রায় সে-গপ্পের চিত্রনাট্য ফেঁদে ছবি করার সময় বানিয়ে তুললেন নারায়ণী রৌপ্যমুদ্রা, ইস্পাতের তলোয়ার, ফোকলা ফকিরের গাছ, হেঁয়ালির ক্যালিগ্রাফি, সর্বোপরি কমপিউটর গ্রাফিক্স-এ বাঘের দৃশ্য। উপন্যাস লেখা থেকে শুটিং, রেকর্ডিং, লবি-কার্ড, পোস্টার পর্যন্ত এই প্রস্তুতিপর্ব নিয়ে তৈরি হয়েছে এক ডিভিডি। আছে সন্দীপ-সব্যসাচী-সাহেবের কথোপকথন, প্রয়াত বিভু ভট্টাচার্যের শেষ সাক্ষাৎকার। আর একটি ডিভিডি-তে গোটা ছবিটা। এই জোড়া ডিভিডি’র প্রকাশ অচিরেই, প্রযোজনায় ভেঙ্কটেশ ও সুরিন্দর ফিল্মস।
|
নেপথ্যে |
ওঁরা বিখ্যাত নন। অথচ নাটক মঞ্চস্থ করতে ওঁদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। যেমন, প্রবীর দাস। বাবার মৃত্যুর পর পড়াশোনায় ইতি, সত্তর দশকে দৈনিক পাঁচ টাকায় অ্যাকাডেমিতে আসন-নির্দেশকের কাজ শুরু। আসন-নির্দেশক সজল পাল বাণিজ্যে স্নাতক, কলেজ-জীবনে অভিনয় করতেন, কাজের ফাঁকে এখনও টুকটাক অভিনয় চলে। আশির দশকের শেষ থেকে অ্যাকাডেমির কাউন্টারে টিকিট বিক্রি করছেন দিলীপ চৌধুরী। পর্দা ওঠানো-নামানো ও বেল দেওয়ার কাজ করেন বাবু ঘোষ। ছাব্বিশ বছর দ্বাররক্ষকের কাজে আছেন মহম্মদ মেহফুজ আলম। আর কৈশোরেই অ্যাকাডেমির রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শুরু আবদুল আজিজের, তিরিশ পয়সার টিফিন, কুড়ি পয়সায় যাতায়াত করতেন। পঁচিশ-ত্রিশ বছর ধরে এ ভাবেই আড়ালে থেকে কাজ করে চলেছেন ওঁরা। সম্প্রতি নিজেদের ২৯তম জন্মদিনে অনসম্বল নাট্যসংস্থা অ্যাকাডেমির এই ছয় কর্মীকে সংবর্ধনা জানাল। পরিচালক সোহাগ সেনের কথায়, ‘এঁদের ছাড়া কিছুই করতে পারতাম না।’ ৯ মার্চ মিনার্ভায় নান্দীপট আয়োজিত ‘নারীমঞ্চ নাট্যোৎসব’-এ মঞ্চস্থ হবে অনসম্বল-এর নতুন নাটক ‘লাল বাক্স’ সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টায়।
|
মনে কর আমি নেই |
হুগলির বাকুলিয়া গ্রামের ধনগোপাল ও কমলমণি মুখোপাধ্যায়ের ছোট ছেলে রত্নেশ্বরের জন্ম কলকাতায়, ১৯২৯। তবে বাংলা গানের ভুবনে তিনি রতু মুখোপাধ্যায়। পড়াশোনা খিদিরপুর অ্যাকাডেমি থেকে আশুতোষ কলেজ। বাবা বিখ্যাত ফুটবলার। প্রত্যাশা মতো ছেলেও খেলায় পারদর্শিতা দেখিয়েছিলেন, কিন্তু অনুরাগ সঙ্গীতে। ১৯৪৯-এ প্রথম অডিশন রাইচাঁদ বড়ালের সামনে। সঙ্গীতজগতে আর এক বিখ্যাত রত্নেশ্বর মুখোপাধ্যায় থাকায় তিনি হলেন ‘রতু’। তাঁর সুরে গান গেয়েছেন কলকাতা ও মুম্বইয়ের শিল্পীরা। তাঁর সুরেই মুকেশের প্রথম বাংলা গান, ‘ওগো আবার নতুন করে ভুলে যাওয়া নাম ধরে ডেকো না’। ‘আবার হবে তো দেখা’ (শিল্পী: মান্না দে), ‘বনতল ফুলে ফুলে ঢাকা’ (হেমন্ত মুখোপাধ্যায়), ‘মনে কর আমি নেই’ (সুমন কল্যাণপুর)... এমন আরও অনেক অবিস্মরণীয় গানের সুরকার তিনি। তাঁর সুরে বহু গান গেয়েছেন অখিলবন্ধু ঘোষ, মান্না দে, নির্মলা মিশ্র। সুর করেছেন রম্যগীতি ও রেডিয়ো ফিচারে। ছিলেন রাজ্য সঙ্গীত আকাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। পাশাপাশি ছিল শিকার, মাছধরা, আড্ডা, রান্না। হঠাৎ চলে গেলেন ২৮ ফেব্রুয়ারি। রেখে গেলেন স্ত্রী ও মেয়েকে।
|
স্বর্গ যদি |
১৪ হাজার গাছ আর ২৪টি পুকুর। পাখি আর প্রজাপতির স্বর্গরাজ্য। আর স্বর্গ তাঁদের, যাঁরা গলায় বাইনোকুলার ঝুলিয়ে কখনও ভোরে, কখনও শেষ-দুপুরে অভিযান চালান শিবপুরের বোটানিক্যাল গার্ডেনে। পোশাকি নাম আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু ইন্ডিয়ান বোটানিক গার্ডেন। দু’শো বছরেরও বেশি পুরনো এই বাগানে প্রকৃতি-পড়ুয়াদের জন্য এ বার তৈরি একটা গাইড। তিরাশি রকম পাখি, ৫৪ রকম প্রজাপতির ছবি ও পরিচয় দেওয়া রয়েছে, সঙ্গে বলা রয়েছে কোনটা স্থায়ী বাসিন্দা আর কোনটা পরিযায়ী, কে সুলভ কে দুর্লভ। চিনিয়ে দেওয়া হয়েছে সেই সব গাছ, যেখানে পাওয়া যাবে ওদের। হিমাদ্রি শেখর দেবনাথ আর বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরীর ‘বার্ডস, বাটারফ্লাইড অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েট প্লান্টস অব এ জে সি বোস ইন্ডিয়ান বোটানিক গার্ডেন’ ছিমছাম, হালকা, সুদৃশ্য বই, ঢিলে জামার পকেটে দিব্যি ঢুকে যাবে। বোটানিক সার্ভে অব ইন্ডিয়া প্রকাশ করেছে, ‘অফিশিয়াল গাইড’ বলাই চলে।
|
স্থানান্তর |
এ শহর থেকে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে স্থানান্তরিত হয় ১৯১১-১২’য়। সেই ঐতিহাসিক ঘটনার তথ্য ও নথির এক গুরুত্বপূর্ণ সংকলন প্রকাশিত হল শতবর্ষ উপলক্ষে, ট্রান্সফার অব ক্যাপিটাল ক্যালকাটা টু দিল্লি (দে’জ)। সমকালীন পত্রপত্রিকা ও দুটি পুরনো বই থেকে নথি ও প্রবন্ধগুলি সংকলন করেছেন নিত্যপ্রিয় ঘোষ ও কৃত্যপ্রিয় ঘোষ। রয়েছে বেশ কয়েকটি দুর্লভ ছবিও, একটিতে আছে: প্রিন্সেপ ঘাট থেকে চলে যাচ্ছেন ব্রিটিশ রাজপুরুষেরা।
|
দিদিগিরি |
“‘দিদিগিরি’-র ছোঁয়াটি না-হয় রাখাই গেল বইয়ের শিরোনামে। এ চূড়ান্ত নামকরণের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল আরেকটি নাম, যার উল্লেখ করার লোভ সামলানো মুশকিল: ‘দিদিবাবু’।” ভূমিকায় লিখেছেন সুমন দে। ২৭ মার্চ ’০৯ থেকে ১৪ ডিসেম্বর ’১১ পৌনে তিন বছরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সতেরোটি সাক্ষাৎকার ‘স্টার আনন্দ’র জন্য। দিদিগিরি-র (দীপ প্রকাশন) পাতা উল্টে গেলে নিখাদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একটা দৃষ্টান্ত। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, ‘সুকান্ত বামপন্থী কবি বলে কেউ বলতে পারেন, আমি বলতে পারি সুকান্ত বাস্তববাদী কবি। তফাতটা এটাই।’ অতঃপর সুমন: ‘আর ভ্রাতুষ্পুত্র?’ মমতা: ‘আর কী বলব? ও তো অপপ্রচার করে খাচ্ছে। একটা ফলও দেয়নি।...’
|
বোষ্টমী |
‘বহুরূপী’তে কুমার রায়ের শিষ্য ছিলেন সৌমিত্র বসু আর আভেরী দত্ত। বিয়ের পর আভেরী চৌবে হয়ে চলে গেলেন দিল্লিতে। বহু বছর পর, রবীন্দ্রজন্মের দেড়শো বছরে তাঁরা আবার একসঙ্গে মঞ্চে। রবীন্দ্র-গল্পের নাট্যরূপ ‘বোষ্টমী’তে (সঙ্গের ছবি), সন্দর্ভ-র প্রযোজনায়। চণ্ডীগড়ে সঙ্গীত নাটক আকাদেমির নাট্যাঞ্জলিতে প্রথম অভিনয়ের পর কলকাতায় এ নাটকের প্রথম অভিনয় ৭ মার্চ মধুসূদন মঞ্চে, ১০ মার্চ হাওড়ার রামগোপাল মঞ্চে, আর ১১ মার্চ সল্টলেকের পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্রে। দু’বছর আগে দোলের আগের দিনই প্রয়াত হন কুমার রায়। এ বারে সেই দিনটিতেই ‘বোষ্টমী’র অভিনয়।
|
রি-ক্রিয়েট |
|
তিরিশ-চল্লিশ-পঞ্চাশের দশক। কলকাতায় হলিউডের ছবি এলেই সিনেমা হলে ছুটে যাওয়া, পছন্দ হলে বার কয়েক দেখেও ফেলা। স্মৃতিই একমাত্র ভরসা, ক্যাসেট ডিভিডি-র বালাই নেই। তেমন স্মৃতির সঞ্চয় থেকেই ’৪২-এর ‘র্যানডম হার্ভেস্ট’ নতুন করে জন্ম নিল ’৫৭-য় অজয় করের হাতে: ‘হারানো সুর’ (সঙ্গের ছবি); ’৩৭-এর ‘দ্য প্রিজনার অব জেন্ডা’ ’৬১-তে তপন সিংহের হাতে: ‘ঝিন্দের বন্দী’। হলিউডের দু’টি ছবিতেই রোনাল্ড কোলম্যান-এর রোমান্টিক উপস্থিতি, বাংলা ছবি দুটোতেও রোমান্টিক উত্তমকুমার। নন্দন-এ ১২-১৩ মার্চ দেখানো হবে চারটি ছবিই। ‘নতুন প্রজন্ম দেখে শিখতে পারবে হলিউডকে কী চমৎকার বাঙালিয়ানায় রি-ক্রিয়েট করতেন তখনকার গুণী পরিচালকেরা’, জানালেন নন্দন-সভাপতি সন্দীপ রায়।
|
‘স্ট্যাচু’ সাজা |
কেষ্টপুরে একটি পুজোর প্যান্ডেলে দেখলাম, সাজানো হয়েছে রাজধানী এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনা। লাইনচ্যুত কামরা আর ছড়ানো ‘মৃত’-দেহ। তেমনই একটি ‘মৃত’ হয়ে নিথর শুয়েছিলেন কৃষ্ণ বৈরাগী। সঙ্গে একচিলতে বিজ্ঞাপন, ‘স্ট্যাচু’ সাজি, সঙ্গে ফোন নম্বর। সেটাই সূত্রপাত’ বললেন বিক্রমজিৎ গুপ্ত (নীচের ছবিতে বাঁ দিকে)। অতঃপর, শুরু হল তাঁর কাহিনিচিত্র। ‘অচল’। নিজের সঞ্চয় ঢেলে, একটি প্রাচীন ক্যামেরায়, ২০০৯-এর অগস্টে। শেষ হল ২০১১-য়। নাম-ভূমিকায় কৃষ্ণ বৈরাগী! মহানগরের একটি বিচিত্র দর্পণ এই ছবি। এই শহরের পথে পথে কৃষ্ণ বিচিত্র সব সাজে ঘোরেন। কখনও মার্ক্স, কখনও রামমোহন! তাঁর স্বপ্নসুন্দরীটিও নিথর। একটি ম্যানেকুইন। বিক্রমের প্রথম কাহিনিচিত্র (ভিডিয়োয়) ‘লাদেন ইজ নট মাই ফ্রেন্ড’ কেরালা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে শিরোপা পেয়েছিল। ‘অচল’-ও সাড়া জাগাচ্ছে সিনে-দুনিয়ায়। নিউ ইয়র্ক-এ সাউথ এশিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল-এ ‘কম্পিটিটিভ সেকশন’-এ ছিল ‘অচল’। যাওয়া হয়নি ভিসার গোলমালে। ডাক এসেছে ভ্যাঙ্কুভার থেকে। অনুরাগ কাশ্যপ ছবিটি দেখে উৎসাহী। দমদমের ছেলে বিক্রম চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সি না পড়ে ফিল্মের স্বপ্ন দেখেছিলেন। কৃষ্ণ (ছবিতে ডান দিকে) ‘স্ট্যাচু’ সেজেই এখনও উপার্জন করেন। কখনও ভাবেননি, তাঁকে নিয়ে একটি ছবি হবে, তাতে অভিনয়ও তিনিই করবেন। স্বপ্নেরা ডালপালা মেলছে। ‘অচল’-ই প্রমাণ! |
|
|
|
মধুর সাধনা |
অভিনয়কে যাঁরা পেশা হিসেবে গ্রহণ করতে চান, তাঁদের দ্বারা সংসারধর্ম পালন করা সম্ভব নয়। এদেশে আজ পর্যন্ত কাউকে দেখলাম না, যিনি উভয় দিকই সমানভাবে এবং সম্মানের সঙ্গে মানিয়ে চলেছেন। সাগরপারেও যেমন, এদেশেও তেমনই।’ আত্মজীবনী আমার জীবন-এ অকপটে এমন লিখতে পারেন যিনি, তিনি বাঙালির চলচ্চিত্র ইতিহাসে হয়ে রয়েছেন এক বৃহৎ বাঙালির প্রতিনিধি। বাংলাতেই আটকে থাকেননি তিনি, সিনেমার শিক্ষানবিশি করেছেন ইউরোপে, হাতেকলমে কাজ করেছেন অ্যালফ্রেড হিচককের সঙ্গে। সিভিলিয়ান-সাহিত্যিক রমেশচন্দ্র দত্তের দৌহিত্র, ভূতত্ত্ববিদ প্রমথনাথ বসু ও কমলা বসুর পুত্র সুকুমার, মধু বসু নামেই খ্যাতির শীর্ষে উঠেছেন। বিজ্ঞানের স্নাতক হয়ে ১৯২৪-এ চলচ্চিত্র-জগতে প্রবেশ। দু বছর পরে হিমাংশু রায়ের আগ্রহে বিলেত যাত্রা। দেশে ফিরে পরিচালক হিসেবে প্রথম ছবি ‘গিরিবালা’। শুধু বাংলা নয়, ছবি করেছেন হিন্দি উর্দু ইংরেজি ভাষাতেও। পাশাপাশি চালিয়ে গিয়েছেন মঞ্চ প্রযোজনা। ১৯২৮-এ তাঁর প্রথম ছবি, সে বছরই প্রতিষ্ঠা করেন ক্যালকাটা আর্ট প্লেয়ার্স। সেখানে সাফল্যের সঙ্গে মঞ্চায়িত করেন আলিবাবা, দালিয়া, বিদ্যুৎপর্ণা, মন্দির, ওমরের স্বপ্নকথা, রাজনটী, রূপকথা। তবে ‘আলিবাবা’ আজও তাঁকে খ্যাতির শীর্ষে রেখেছে। ছবিটির ৭৫ বছর উপলক্ষে দেখানো হবে নন্দন-এ ২৪ মার্চ। পরিচালনার পাশাপাশি এ ছবিতে আবদাল্লার চরিত্রে অভিনয়ও করেন তিনি, আর মর্জিনা সাধনা বসু। ‘ছি ছি এত্তা জঞ্জাল’-এর সঙ্গে চিরস্মরণীয় হয়ে রয়েছে বাংলা চলচ্চিত্রের ওই জুটি মধু বসু-সাধনা বসু, পর্দায় এবং জীবনে। সেই জুটিই আরও এক বার ‘আত্মপ্রকাশ’ করল প্রতিভাস থেকে প্রকাশিত হল মধু বসুর আমার জীবন আর সাধনা বসুর শিল্পীর আত্মকথা। শেষোক্তটি মূল ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন কল্যাণাক্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়। দুটিরই সম্পাদক দেবজিত্ বন্দ্যোপাধ্যায়। |
|
|
|
|
|
|
|