বেশ কয়েক বছর আগের কথা। নিউ ইয়র্কের ব্রডওয়ে প্রেক্ষাগৃহের অন্যতম নাট্যপ্রযোজক রবিন গুডম্যান মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, ব্রডওয়ের সর্বোচ্চ বাণিজ্যিক সাফল্য পাওয়া প্রথম পাঁচটি প্রযোজনার তিনটির পরিচালক মহিলা।
গুডম্যানের তালিকায় ছিল জুলি টেমরের ‘লায়ন কিং’, ফিলিডা লয়েডের ‘মাম্মা মিয়া’ ও সুসান স্ট্রোমানের ‘দ্য প্রোডিউসার্স’। তবু মার্কিন নাট্যমহলে আজও প্রশ্ন ওঠে, কেন ব্রডওয়েতে মহিলা পরিচালক কম?
আশার কথা, কলকাতায় মহিলা নাট্যপরিচালকের সংখ্যা কম হলেও নগণ্য নয় তৃপ্তি মিত্র থেকে ঊষা গঙ্গোপাধ্যায়, শাঁওলী মিত্র থেকে স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত, চন্দ্রা দস্তিদার থেকে তুলিকা দাস...। এবং যে শহরে বিনোদিনীর নামে নাট্যমঞ্চ তৈরিতে বাধা এসেছিল, সেখানেই এখন আছে ‘নারীর মঞ্চ’। সেখানে একগুচ্ছ মহিলা পরিচালকদের নাটক দেখার সুযোগ মেলে। ‘নারীর মঞ্চ’ মানে নারীর প্রেক্ষাগৃহ নয়। এটি মহিলা পরিচালকদের নিয়ে একটি নাট্যোৎসব, যার নামকরণ করেছিলেন শঙ্খ ঘোষ।
শুরু হয়েছিল আন্তর্জাতিক নারী দিবসের শতবর্ষ পালন দিয়ে। এ বার কলকাতয় মহিলা পরিচালকদের নিয়ে এই নাট্যোৎসব ৩ বছরে পড়ল। ৬ মার্চ থেকে সপ্তাহভর উৎসব চলবে মিনার্ভায়। কলকাতার পাশাপাশি দেখা যাবে দিল্লি, মুম্বই, অসম ও বাংলাদেশের নাটকও। |
মহিলা পরিচালকের নাট্যকর্ম কি পুরুষ পরিচালকের চেয়ে কোথাও আলাদা? সোহাগ সেন বললেন, “একটা সময় আমারও মনে হত, মহিলা পরিচালকদের নিয়ে আলাদা করে কথা বলার দরকার কী? কিন্তু এখন মনে হয়, প্রয়োজন আছে। বিশ্বজুড়ে না হলে মহিলাদের কাজ নিয়ে আলাদা প্রদর্শনী হত না।” তার মানে অবশ্য এই নয় যে, মহিলা পরিচালকের নাটক মানে তাতে শুধু মহিলাদের কথা! অর্পিতা ঘোষের কথায়, “নাটক যখন তৈরি হয়, তখন আমি নারী বা পুরুষ নই, আমি পরিচালকই। মহিলারা পরিচালক হলে যে শুধুই মহিলাকেন্দ্রিক নাটক করবেন, এমনও নয়।” তবে মহিলা পরিচালকদের কাজ আলাদা করে তুলে ধরার সার্থকতা কোথায়? অর্পিতা বলেন, “একটা কথা অস্বীকার করা যাবে না, মহিলা ও পুরুষদের দেখার দৃষ্টি আলাদা। মহিলারা যখন কোনও চরিত্র দেখছেন, সেটা নারী বা পুরুষ যা-ই হোক না কেন, চরিত্রটা নারীর দৃষ্টি দিয়েই দেখা হয়।” নারীর দৃষ্টি তার মানে স্বতন্ত্র? “মানতে চাই বা না চাই, পুরুষ আর নারীর দৃষ্টিকোণে তফাৎ আছে,” বললেন সোহাগ।
বিভিন্ন নারীর ‘দৃষ্টিকোণ’কে এক সূত্রে গাঁথতেই ‘নারীর মঞ্চ’। আয়োজকদের তরফেও তা-ই বললেন প্রকাশ ভট্টাচার্য। এ বারে কলকাতা থেকে সোহাগ সেন (লাল বাক্স), সীমা মুখোপাধ্যায় (মায়ের মতো), অর্পিতা ঘোষ (এবং দেবযানী), অবন্তী চক্রবর্তীদের (ইচ্ছের অলিগলি) নাটকের সঙ্গে অসম থেকে আসছেন ভাগিরথী, ‘জুলিয়াস সিজার’ নিয়ে। মুম্বইয়ের সীমা বিশ্বাস এবং দিল্লির গীতা গুহ, দু’জনেই অভিনয় করবেন ‘স্ত্রীর পত্র’ অবলম্বনে দুই নাটকে। বাংলাদেশ থেকে থাকবে নুনা আফরোজের নাটক ‘স্বদেশী’।
আর সব বাদ দিলেও একটা বাস্তবতা থাকেই, সোহাগ বললেন, “আর পাঁচটা ক্ষেত্রের মতোই মহিলা নাট্যপরিচালকও সারা পৃথিবী জুড়েই এখনও বেশ কম।” অর্পিতার কথায়, ‘নারীর মঞ্চ’ সে ক্ষেত্রে একটা জানলা হতে পারে। বিভিন্ন মহিলার কাজ একসঙ্গে দেখলে তাঁদের অন্বেষণের একটা মূল সুর খুঁজে পাওয়া হয়তো সম্ভব। সেই সুরটাই এই নিয়ে তিন বছর খুঁজছে কলকাতা। |