|
|
|
|
শব্দব্রহ্মের সাধ্য কী |
শরীর নিজের খেয়ালে ব্যবহার করেছেন, পালটেও নিয়েছেন। |
|
পামেলা অ্যান্ডারসন |
কোন মূর্খ বলে, শব্দই ব্রহ্ম? মোটেও না। মোক্ষম প্রমাণ: পামেলা অ্যান্ডারসন। পামেলা ‘বাজে মেয়ে’। এত বাজে যে, দুনিয়ার কোনও নিষ্প্রাণ শব্দ এবং অক্ষরের তাঁকে ধরার সামর্থ্য নেই। পামেলা অ্যান্ডারসনকে বুঝতে গেলে তাঁর ছবি দেখতে হয়। প্লেবয় পত্রিকা, ইউটিউব কিংবা বেওয়চ-এর সাইটে গিয়ে সেই স্বর্ণকেশী, পীনস্তনীকে ‘সার্চ’ করতে হয়।
নব্বইয়ের দশকে এই পামেলার ছবি নিয়েই একটি প্রজন্মের সাবালক হয়ে ওঠা। শিবপুর থেকে যাদবপুর, হিন্দু হস্টেল থেকে মেডিক্যাল কলেজে এমন কোনও বয়েজ হোস্টেল ছিল না, যেখানে দরজার পিছনে পামেলা অ্যান্ডারসনের রঙিন ছবি সাঁটা নেই। ইন্টারনেট আসেনি, স্যাটেলাইট টিভির সেই আদিযুগে রাত ১১টার পর ‘বেওয়চ’ সিরিয়ালটা দেখা যায়। লাল সুইম-স্যুটে তন্বী এক কোস্টগার্ড। সুন্দরী, সেক্সি এবং রিভলভার ছোড়ায় দুরন্ত। নাম তার সি জে পার্কার। ওই চরিত্রেই পামেলাকে চিনেছিল আসমুদ্রহিমাচল।
লাল সুইম-স্যুটের ছবিটাও কয়েক দিন বাদে নিরামিষ হয়ে গিয়েছিল। পামেলা অ্যান্ডারসন মানেই তখন আঁটোসাটো পোশাক, লো-কাট টপ, ছোট স্কার্ট এবং হট প্যান্ট। ‘আমি কোনও বিশেষ সিম্বল হওয়ার চেষ্টা করি না। আমি যে পোশাক পরি, যে জীবন যাপন করি, সেটাই ছবিতে দেখাই’, সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন এই ‘শো গার্ল’। খারাপ বলেই বলেছিলেন। ভাল মেয়েরা কি আর সমাজের দিকে এ ভাবে চ্যালেঞ্জ ছোড়ে?
রিগ্যাল সিনেমার পাশে, নিউ মার্কেটের পিছনে শস্তায় পুরনো ‘প্লেবয়’, ‘পেন্টহাউস’ পত্রিকা পাওয়া যেত। তাতে পামেলা নগ্নবেশে চমৎকার সব ‘পোজ’ দিতেন। পুরুষ্টু ঠোঁট, উজ্জ্বল চোখ, সুডৌল স্তনে লেগে থাকত আহ্বানের মায়াবী আবেশ। পামেলার পরে পৃথিবীতে অনেকেই এসেছেন কিম কাদারসিয়া, ‘সেক্স অ্যান্ড দ্য সিটি’র ক্যাডেন্স বুশনেল... কিন্তু একটা রেকর্ড এখনও ভাঙেনি। পামেলা ১৩ বার ‘প্লেবয়’ পত্রিকার মডেল হয়েছিলেন। ভাল মেয়েরা কি নগ্ন হয়?
আর পামেলা কোথায় না পোজ দিয়েছেন? তিনি নিরামিষাশী, প্রাণী হত্যা বন্ধে ‘পিটা’ (পিপ্ল ফর এথিক্যাল ট্রিটমেন্ট অব অ্যানিম্যালস)-র মডেল। পিটা-র একটা পোস্টার ছিল। নগ্ন পামেলা, একটা হাতে ঠিক করছেন এলোমেলো চুল, অন্য হাত নাভিমূলে। দুই স্তন এবং উরুসন্ধিতে সবুজ পাতার আড়াল। ওপরে লেখা ‘টার্ন ওভার আ নিউ লিফ’। পামেলা খুব বাজে মেয়ে। তিনি মানবজাতিকে নিরামিষ ভক্ষণে প্রলুব্ধ করছিলেন।
বাৎস্যায়ন এবং কালিদাস যা পারেননি, পামেলা অ্যান্ডারসনই সেটা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। পামেলা আর তাঁর প্রেমিক টমি লি-র একটি ‘সেক্স ভিডিয়ো’ ছিল। নগ্ন পামেলার কাঁধে পিছন থেকে মুখ রেখেছেন টমি লি, দু’জনের শরীরেই উজ্জ্বল উল্কির আঁকিবুকি (তখন কলকাতা শহরের পাড়ায় পাড়ায় ট্যাটু-পার্লার গজায়নি)। পামেলার সোনালি চুল আর টমির কালো চুলে জড়াজড়ি, উঁচিয়ে আছে পামেলার কাঁধের ‘কলার বোন’। মেয়ে মানে যে শুধু ‘শ্রোণীভারে অলসগমনা’ বা ‘স্তনভারে স্তোকনম্রা’ নয়, শরীরের প্রতিটি অস্থিসন্ধি, তরুণাস্থিতে যৌনতার আবেশ উপভোগ করে সে, তিনিই আমাদের প্রথম সেই কথা বুঝিয়েছিলেন।
এটুকুতেই শেষ নয়। ভিডিয়োতে দেখা যেত, ওই অবস্থায় পামেলার হাতে ড্রাগের সিরিঞ্জ ‘পুশ’ করছেন টমি। মেয়েরা যে আদতে বিপজ্জনক, ছেলেদের মতোই শরীরে মাদক এবং যৌনতার ককটেল উপভোগ করে, পামেলাই আমাদের জানিয়েছিলেন।
১৯৬৭ সালের ১ জুলাই কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় পামেলার জন্ম। সেটি কানাডার শতবর্ষ, ‘শতবর্ষের শিশু’র জন্ম দেওয়ার জন্য পামেলার বাবা ব্যারি ও মা ক্যারল অ্যান্ডারসন পুরস্কার পেয়েছিলেন। শিশুটির ছবিও পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। তার পর বিখ্যাত মডেল, প্লেবয় পত্রিকা, ‘বেওয়াচ’ টিভি সিরিজ, ‘র জাস্টিস’, ‘কোস্টারিকান সামার’ ইত্যাদি ছবি। ছবিগুলি ফ্লপ, কিন্তু নম্বরদৌড়ে কী আসে যায়? ভাগ্যিস তিনি নায়িকা নন। যাবতীয় নিয়ম ভেঙে জীবন্ত এক নারী।
সেই জীবনীশক্তি কী রকম? সে দিনও মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে গাঁজা আইনসিদ্ধ করার আবেদন জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন। তার আগে বয়ফ্রেন্ড টমি লি-র সঙ্গে বিয়ে হচ্ছে, বিয়ে ভাঙছে, ফের বিয়ে জোড়া লাগছে। তার পর দু’জনের একই সিরিঞ্জ থেকে মাদক নেওয়ার জেরে পামেলার ‘হেপাটাইটিস সি’। অতঃপর মার্কাস স্কেনকেনবার্গ এবং কিড রকের সঙ্গে বিয়ে হচ্ছে, এবং দু’মাসের মধ্যে ভেঙে যাচ্ছে। শুধু কি তাই? পামেলা এক দিন বললেন, ‘‘সকালবেলা ভালবাসাবাসির কাজটা করলে ‘মর্নিং সিকনেস’ কেটে যায়। তখন নিজেকে একই সঙ্গে সুখী এবং বিষণ্ণ লাগে।’’ সন্দেহ নেই, পামেলা বাজে মেয়ে। ভাল মেয়েরা কি এ ভাবে শরীরী উপভোগের কথা ভাবতে পারে?
পামেলা অ্যান্ডারসন নিজের শরীরটাকে নিজের পছন্দমাফিক ব্যবহার করেছেন, এমনকী পরিবর্তনও ঘটিয়েছেন সেই শরীরে। পামেলার ‘সিলিকন ইমপ্লান্ট’ নিয়ে এক কালে ঢি-ঢি পড়ে গিয়েছিল। আজ সেই কাল কোন মহাকালে বিলীন হয়েছে! সিলিকন ইমপ্লান্ট নিয়ে আজও অনেক তর্ক, কিন্তু সেটা স্বাস্থ্যের কারণে, নৈতিকতার কারণে নয়। পুরনো নৈতিকতার ডিবেটটাকেই হারিয়ে দিয়েছেন পামেলা।
ভাগ্যিস পামেলা ‘ভাল মেয়ে’ ছিলেন না! |
|
|
|
|
|