রক্ষা করবে? কীসের থেকে?

মে ওয়েস্ট
সাতাশি বছরের জীবনে মে ওয়েস্ট-এর বিস্তর পুরুষ-বন্ধু ছিল। উইলিয়ম জোনস তাঁদের অন্যতম। দুর্দান্ত বক্সার, লোকে ডাকত ‘গোরিলা জোনস’ বলে। যে বাড়িতে মে ওয়েস্ট-এর অ্যাপার্টমেন্ট, তার রক্ষীরা খুব ঝামেলা শুরু করল, কৃষ্ণাঙ্গ উইলিয়মকে তারা বিল্ডিংয়ে ঢুকতে দেবে না। মে ওয়েস্ট শুনলেন ব্যাপারটা। তার পর পুরো বিল্ডিংটা কিনে নিলেন।
পুরো নাম মেরি জন ওয়েস্ট। জন্ম ১৮৯৩, নিউ ইয়র্ক। সাত বছর বয়েস থেকে নিয়মিত নাটকে অভিনয় শুরু। চোদ্দো বছরে পেশাদারি স্টেজে পৌঁছে গেল ‘বেবি মে’। তার চার বছর পরেই ব্রডওয়েতে প্রথম অভিনয়। এক সময় নিজেই নাটক লেখা শুরু করলেন। এবং প্রথম যে নাটকে বড় ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন মে ওয়েস্ট, সেটির নাট্যকার, পরিচালক ও প্রযোজক তিনি নিজেই। নাটকের নাম: সেক্স। নাটক হিট, কিন্তু সমালোচকরা সমস্বরে ছ্যা-ছ্যা করল, এবং অচিরেই পুলিশের আবির্ভাব, অন্য কুশীলবদের সঙ্গে গ্রেফতার হলেন মে ওয়েস্ট। ‘তরুণ সমাজের নৈতিক চরিত্র কলুষিত করা’র দায়ে অভিযুক্ত হলেন তিনি। ১৯ এপ্রিল, ১৯২৭, দশ দিনের জেল হল তাঁর। পরের নাটক: দ্য ড্র্যাগ। বিষয় সমকামিতা।
১৯৩২। হলিউডের ডাক এল। ছবির নাম ‘নাইট আফটার নাইট’। মে ওয়েস্ট-এর আবির্ভাব-দৃশ্যে তাঁকে দেখে একটি মেয়ে বলে, ‘গুডনেস! কী সুন্দর হিরেগুলো!’ মে ওয়েস্ট জবাব দেন, ‘ওগুলোর পিছনে গুডনেস-এর কোনও ভূমিকাই ছিল না বাছা।’ মূল স্ক্রিপ্টে এই ডায়ালগ ছিল না। মে ওয়েস্ট সেই স্ক্রিপ্ট দেখে অভিনয় করতে রাজি হননি, কারণ সেখানে তাঁর বিশেষ কিছু করার ছিল না। তাঁর দাবি, তাঁকে নিজের দৃশ্যগুলি নতুন করে লিখতে দিতে হবে। সেই দাবি মঞ্জুর হয়। অনেক কাল পরে মে ওয়েস্ট আত্মজীবনী লেখেন: গুডনেস হ্যাড নাথিং টু ডু উইথ ইট।
মে ওয়েস্ট খুব কম বয়সে ঠিক করে নিয়েছিলেন, নিজের শর্তে বাঁচবেন। এবং তাঁর প্রখর বাস্তববুদ্ধি শুরুতেই বুঝে গিয়েছিল, ‘ভাল’ হয়ে থাকলে নিজের শর্তে বাঁচা সম্ভব নয়। হলিউড এবং ব্রডওয়ে তাঁকে দেখেছে ‘সেক্স সিম্বল’ হিসেবে, সেই দেখাকেই তিনি নিজের মতো করে ব্যবহার করেছেন। এ খেলা অতি কঠিন, বিপজ্জনক। পুুরষের মন ভুলিয়ে তাকে জয় করব এই ধারণা শেষ পর্যন্ত অগণন নারীকে পুরুষের সম্পূর্ণ বশীভূত করে তোলে, পুরুষের মন ভোলানোই তার জীবনের অর্থ হয়ে দাঁড়ায়, জয়ের বদলে মেনে নিতে হয় সম্পূর্ণ পরাজয়, খুব কম চিত্রাঙ্গদাই পারে সেই পরাজয়কে পুড়িয়ে ভস্মশয্যা থেকে নতুন প্রত্যয়ে ও মর্যাদায় উঠে দাঁড়াতে।
মে ওয়েস্ট কোনও চিত্রাঙ্গদা নন। নারীমুক্তি আন্দোলনের সমর্থক হলেও তিনি স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, তিনি ‘ফেমিনিস্ট’ নন। পুরুষকে মুগ্ধ করার, আকৃষ্ট করার ‘মোহিনী’ শক্তিকে তিনি অস্বীকার করেননি, নিজের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তাঁর অভিনীত ছবিতে এবং তাঁর নির্মিত চিত্রনাট্যে পুরুষরা সেই শক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করে, তাকে পদানত করতে পারে না। নারীর এই মোহিনী শক্তি অবশ্যই পুরুষতন্ত্রের সৃষ্টি, কিন্তু মে ওয়েস্ট সেই শক্তিকে অস্বীকার করেননি, পুরুষতন্ত্রকেও চ্যালেঞ্জ জানাননি, বরং সেই শক্তিকে ব্যবহার করে পুরুষতন্ত্রে অন্তর্ঘাত ঘটিয়েছেন।
অভিনয়েও, জীবনেও। বহু পুরুষের সঙ্গে তাঁর সহবাস, একাধিক বিয়ে, যাদের শুরু ও শেষ, কোনওটাই স্পষ্ট নয়, বিভিন্ন পুরুষের সঙ্গে তাঁর সমান্তরাল সম্পর্ক সবটাই তাঁর নিজের শর্তে। তাঁর জীবনের পুরুষরা হয়তো সেটা বুঝেছে, হয়তো বা বোঝেনি। তাঁর বয়েস যখন একষট্টি, সেই সময়ে তাঁর সঙ্গে প্রেম হয় চেস্টার রিবনস্কি নামে এক কুস্তিগিরের। মে ওয়েস্টের চেয়ে তিনি ত্রিশ বছরের ছোট। আমৃত্যু মে ওয়েস্টের সঙ্গী ছিলেন তিনি। বলেছিলেন সেই পুরুষ, ‘আমার বিশ্বাস, মে ওয়েস্টের দেখভাল করার জন্যই আমাকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছিল।’ কথাটা শুনলে মে ওয়েস্টের মনটা ঈষৎ আর্দ্র হত কি? সন্দেহ হয়। ‘মাই লিটল চিকাডি’ ফিল্মে মে ওয়েস্টের একটা উক্তি ছিল: ‘প্রত্যেকটি পুরুষ আমাকে রক্ষা করতে চায়। কীসের থেকে রক্ষা করতে চায়, সেটাই বুঝে উঠতে পারিনি।’



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.