|
|
|
|
জ্ঞান দেবেন না পিতা... |
শুধু ভাঙছেন না, গড়ছেনও। নতুন কোড। |
|
ম্যাডোনা |
আমাদের সমাজের যাঁরা আসলি রক্ষাকর্তা, তাঁদের থেকে ভগবান নন-স্টপ ধন্যবাদ পান, নির্ঘাত। পৃথিবীতে একটাই ম্যাডোনা পাঠিয়েছেন, ভাগ্যিস! আর তাও দূর আমেরিকাতে। আমাদের কোনও ইনফেকশনের আশঙ্কা নেই। ম্যাডোনা পুরোদস্তুর বিষ, এ তো ছোটবেলার প্রাচীন প্রবাদ। আর নিহিত নীতিকথা শুধু রাতের অন্ধকারেই নয়, দিনের ঠা ঠা রোদ্দুরেও ওকে (ওঁকে বললে সম্মান দেওয়া হয়) মনে আনা পাপ। বারণ।
ল্যাম্প পোস্টে এ রকম বারণের ছাপ্পা এর আগে অনেকের নামেই পড়েছে। কিন্তু সমাজের অন্য সব ‘নোংরা’ বা ‘সস্তা’ মেয়েদের যখন লগা দিয়ে ঠেলে বাউন্ডারি পার করিয়েই খেলা থেমেছে, তখন ম্যাডোনা’র বেলায় স্ট্রেট চোখ বন্ধ করতে বলা কেন? সে এমন কী সাংঘাতিক? আর, ইন্টারনেটের এই যুগে সাংঘাতিক বলে সত্যিই কি কিছু হয়? আশি বা নব্বইয়ের দশকের কাছেও যা সাংঘাতিক বলে মান পেত, তা আমাদের কাছে নেহাতই মিনমিনে। কিন্তু তাও নাকি ম্যাডোনা সাংঘাতিক!
তা ম্যাডোনার অপরাধটা কী? এম টিভি ভিডিয়ো মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস-এ ‘লাইক আ ভার্জিন’ গাইতে গাইতে হঠাৎই ব্রিটনি স্পিয়ার্সকে বুকে টেনে তীব্র চুমু খেলেন ঠোঁটে, পোশাকের ওপরই প্যান্টি পরলেন, ভেতরে নয়, বা বেশ বিজ্ঞাপন করেই সেই পুরুষকে খুঁজলেন, যে তাঁকে গর্ভবতী করবে। এ সবই একটা-দুটো থিতু সীমা উলঙ্ঘনের ঘটনা। কিন্তু ক্ষণিকের সর্বনাশ মার্কামারা শয়তানের রূপ ধরছে, যখন ম্যাডোনা বলছেন, এ সব ঝোঁক নয়, বেফাঁস নয়, এমন আরও অনেক কিছুই তো আমি রোজ করি। অভ্যেস আমার।
চোখ বন্ধ করতে বলার কারণ এইটাই। এক জন মহিলা, যখন নাম যশ প্রতিপত্তির শিখরে দাঁড়িয়ে, ‘পাবলিক স্পেস’-এ ঘোষণা করেন, হস্তমৈথুন আমার অভ্যেস, পছন্দসই পার্টনার-এর (নারী হোক বা পুরুষ) সঙ্গে শারীরিক ঘনিষ্ঠতা আমার অভ্যেস, দারুণ লাগে, আমার পছন্দের কাজ করে যাওয়াই আমার অভ্যেস, তখন সমাজ তার চোখ খোলা রাখে কী করে?
খুব সহজেই ম্যাডোনা বলছেন ‘সেক্স-পজিটিভ মুভমেন্টের’ কথা। যেখানে যৌন আনন্দ পাওয়ার জন্যে যা ইচ্ছেই করা যায়, হওয়া যায় ‘এথিকাল স্লাট।’ একই সময়ে একাধিক পুরুষ বা/ও নারীর সঙ্গে যৌনক্রীড়ায় মত্ত হতে দোষ কী? এবং এর কোনওটাই প্রতারণা নয়, অনৈতিকও নয়। ম্যাডোনা বারে বারে মনে করাতে চান, আমাদের যৌনতার মালিক আমরাই, আমার ফ্যান্টাসি’র দায়িত্ব তো আমারই। তাকে কোথায় কী ভাবে ব্যবহার করব, সেও আমরাই বুঝব, অন্য কেউ নয়। আর হ্যাঁ, ব্যবহার করব, নিজের শর্তে।
ওঁর Papa don’t Preach গানটি শুনুন। একটি টিনএজ অন্তঃসত্ত্বা মেয়ে তার বাবাকে এই খবর দিতে আসে। বাবা রুদ্ধবাক। তার পর অনেক বোঝায় মেয়েকে। মেয়েটির বন্ধুরাও তাকে গর্ভপাত করানোর রাস্তা বলে। কিন্তু সে বলল, না আমি আমার শর্তে বাঁচব। বলল, আমি আমার বাবাকে ভালবাসি, আর এই বাচ্চাটিকেও, অতএব... বলা হল, এ তো টিনএজ প্রেগন্যান্সি’র বিজ্ঞাপন। ম্যাডোনা কিছুই বললেন না, তাঁর বয়েই গিয়েছে। কিন্তু যাঁরা বোঝার বুঝলেন, যে এটা নিজের দায়িত্ব নিজেই বহন করার সেরা বিজ্ঞাপন। Like a Virgin গানটি ভাবুন। বিয়ের গাউন পরে ম্যাডোনাকে এই গান গাইতে দেখে সব্বাই চটে গেলেন, বললেন ভার্জিন-এর মতো এমন পবিত্র শব্দকে কেন ম্যাডোনা বেশ্যার লেভেলে নামিয়ে দিচ্ছেন? তিনি কি বিয়ের আগেই যথেচ্ছ যৌনতা চাইছেন?
চাইছেন হয়তো। তা ছাড়া ম্যাডোনার কাছে ভার্জিন শব্দটা শুধুমাত্র যৌনগন্ধী নয়। তিনি তো বলেইছেন, প্রতি বার একটা গাঢ় সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর তিনি নিজেকে আবার ভার্জিন মনে করেন। আগের সম্পর্কের ভার নতুনে বয়ে নিয়ে এলে কি নতুনের প্রতি বিচার করা হয়? কিন্তু সমাজ কি এ ভাবে চলে? এ সব মানে? স্পাইস গার্লস-এর একটা বিখ্যাত স্লোগান ছিল, If you haven’t got it, fake it. মানে ঘুরিয়ে বলা, যৌনতার মোক্ষম মুহূর্তে তোমার অর্গাজম না হলে, ভান করো। তাতেই সবার মঙ্গল। জীবনের নানা ক্ষেত্রে আমরাও সেই কোড মেনে মঙ্গলকামনায় লেগে যাই। নিজের সব শর্ত বন্ধক রেখে। নইলে তো চিহ্নিত হয়ে যাব। লাইন ছেড়ে বেরোনোর ঝক্কি। কিন্তু ম্যাডোনা? বিছানায় যা, স্টেজেও তাই। কোনও ভান ছাড়াই লাইন কাটেন দিব্যি। এবং নিজের তালে। তাই বাজে মেয়েটাকে এড়িয়ে যেতে পারলেই আশপাশ বাঁচে যখন, ম্যাডোনা আরও আরও হেসে নেচে যান। |
|
|
|
|
|