দুর্গা মন্দিরের স্তম্ভগুলিতে টেরাকোটার কল্কার অপূর্ব ভাস্কর্য এখনও অক্ষত। দরজার ওপর বড় খিলান আছে। মন্দিরগুলির দেওয়ালের কিছু খিলানে কুলঙ্গি রয়েছে। কিন্তু বট, করবী, ও ও শ্যাওড়া গাছের দাপটে মন্দিরের অস্তিত্ব আজ বিপন্ন। এখানকার মন্দিরের একটি অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য হল যে মাথার ওপরে কোনও চূড়া নেই। মন্দিরগুলির বয়স কত তা নিয়ে নানা রকম মত রয়েছে। মুখোপাধ্যায় পরিবারের মতে এর বয়স দু’শো বছরের বেশি বা চারশো বছরের কম হতে পারে। স্থানীয় বাসিন্দাদের কারও কারও মতে এগুলি ষোড়শ শতকের। সুতরাং মন্দিরের আসল বয়স জানা যায় না। তবে দীর্ঘ দিন এর কোনও সংস্কার হয়নি। অনেকে সাপের ভয়ে ভেতরে ঢুকতে চায় না। স্থানীয় পঞ্চায়েত, প্রশাসন কেউই কোনও দিন মন্দিরের সংস্কারের তাগিদ অনুভব করেনি। হেরিটেজ কমিশন বা পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ উদ্যোগ না নিলে দক্ষিণ দিনাজপুরের টেরাকোটার অমূল্য মন্দির চিরতরে হারিয়ে যাবে।
|
অযত্নে অবহেলায় কত ঐতিহাসিক নিদর্শন যে নষ্ট হয়ে যায় তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ কোচবিহার শহরের বুকে অবস্থিত শতবর্ষ প্রাচীন ‘সাবিত্রী লজ’। এই বাড়িটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক ইতিহাস। মহারাজ হরেন্দ্রনারায়ণের প্রপৌত্র এবং নৃপেন্দ্রনারায়ণের জ্ঞাতি ভ্রাতা কুমার গজেন্দ্র নারায়ণ ১৮৮৫-তে এই দোতালা বাড়িটি তৈরি করেছিলেন তাঁর পত্নী সাবিত্রী দেবীর নামে। সাবিত্রী দেবী ছিলেন ব্রহ্মানন্দ কেশবচন্দ্র সেনের দ্বিতীয় কন্যা। মহারানী সুনীতিদেবীর ছোট বোন। সাগরদীঘির দক্ষিণ পশ্চিম কোণে বাড়িটি অবস্থিত। টেম্পল স্ট্রিটের পাশের এলাকায়। সেই আমলে এই জায়গাটির নাম ছিল ব্রাহ্মপল্লি। কোচবিহারে ব্রাহ্মসমাজের গোড়াপত্তন এবং ব্রাহ্মধর্মের প্রচারের কাজ এই বাড়িটি থেকেই করা হত। নারীকল্যাণের জন্য এই বাড়িটিতেই প্রথম ‘আর্য নারী সমাজ’ গঠিত হয়। এ ছাড়া ১৯০৮-এ স্থানীয় মহিলাদের জন্য কারিগরি শিক্ষামূলক বিদ্যালয় তৈরি হয় এই বাড়িটিতে। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, অতুলপ্রসাদ সেন প্রমুখ বিদগ্ধজনেরা এক সময় এই বাড়িতে অবস্থান করেছেন। বর্তমানে পুলিশের কর্মকর্তারা এই ধ্বংসোন্মুখ বাড়িটিকে আবাসন হিসেবে ব্যবহার করলেও বাড়িটির অধিকাংশ জায়গাই ঘন জঙ্গলে ঢাকা। ঐতিহাসিক ‘সাবিত্রী লজ’ এখন ভুতুড়ে বাড়ির অনুরূপ।
|
একটি প্রত্যন্ত এলাকা। এলাকাবাসীর প্রায় প্রত্যেকেই দারিদ্রসীমার নীচে বসবাস করেন। এদের ছেলেমেয়েরা পড়াশুনো করে স্থানীয় রাজডাঙা পি এম উচ্চবিদ্যালয়ে। জলপাইগুড়ি জেলার ক্রান্তিহাট থেকে চার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা এ বছর প্রজাতন্ত্র দিবসে বিদ্যালয় থেকে তিন কিলোমিটার দূরত্ব পায়ে হেঁটে রীতিমত তাক লাগিয়ে দিয়েছে। ছিল এক কিলোমিটার লম্বা বিশাল শোভাযাত্রা। জাতীয় পতাকা হাতে ভারতমাতা, ফাঁসির মঞ্চে ক্ষুদিরাম, বিনয়-বাদল-দীনেশ, মহাত্মা গাঁধী, নেতাজী। দেশপ্রেমের বার্তার পাশাপাশি ‘বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান’ সেই বার্তা ক্রমে ক্রমে রটে গেল গ্রামে। সে দিন কেউ সেজেছে খ্রিস্টান, কেউ মুসলমান, কেউ শিখ। সকলের কাছে জাতীয় সংহতির বার্তা পৌঁছে দিতেই এই উদ্যোগ। নাই বা থাকলো ইন্টারনেট, কম্পিউটার বা গৃহশিক্ষক। ঝাঁ-চকচকে স্কুল পোশাকও নেই। শীতে গরম জামাও নেই। আছে শুধু ইচ্ছে আর মনোবল। এই দুই সম্বল করে ওরা জানিয়ে দিল, আমরা পারি।
|
পাট থেকে তৈরি করা বিশেষ সুতো দিয়েই রকমারি শতরঞ্জি, পরিধানের মেখলা, জ্যাকেট আরও কত কী তৈরি হয়। প্রাচীন এই বয়ন শিল্পটির নাম ‘মেখলি’। এর থেকেই এলাকার নাম মেখলিগঞ্জ। এটি কোচবিহার জেলার একটি মহকুমা। এখানকার বাড়িতে বাড়িতেই এক সময় মেখলি শিল্পের চল ছিল। বাড়ির মহিলারাই ছিল বেশি উৎসাহী। পুরনো এই শিল্প কিন্তু এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। যদিও বিয়ে উপলক্ষে বরপক্ষকে বা নবজাতককে বাড়ির বয়স্কদের তরফ থেকে এই মেখলি শিল্প উপহার দেবার চিরাচরিত রীতি আজও চালু আছে। ছয় বাই চার ফুটের একটি শতরঞ্জি বানাতে কমপক্ষে কুড়ি দিন সময় লাগে। দেশি পাট বা তিতা পাটই এই শিল্পের উৎকৃষ্ট উপাদান। প্রথমে পাট ঝুলিয়ে রেখে পরে সেখান থেকে সুতো পাকানো হয়। একে বলে ‘পাঞ্জিপাড়া’। স্লেট পাথরের অংশ নিয়ে প্রায় চার ইঞ্চি ব্যাসার্ধ ঘিরে বৃত্ত করা হয়। তার মাঝখানে ফুটো করে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় বাঁশের কাঠি। একে বলে ‘টাকুরি’। পাঞ্জিপাড়ার সুতো নিয়ে টাকুরির গোড়ার দিকে বেঁধে দিয়ে হাত ও হাঁটুর নীচের অংশের সাহায্যে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে তৈরি হয় বুননের সুতো। সেই সুতো নিয়ে দেশি তাঁত যন্ত্রের সাহায্যে চলে বোনার পালা।
গতানুগতিক পদ্ধতিতে পাট থেকে সুতো বের করে কাজ করা অনেক পরিশ্রমের ব্যাপার। তাই উৎসাহেও ভাটা পড়ছে। একমাত্র অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারলে মেখলিশিল্পকে বাঁচানো সম্ভব বলে বলে মনে করেন শিল্পীরা।
|
উত্তরের কড়চা বিভাগে ছবি ও লেখা দিলে
পুরো নাম ও ঠিকানা উল্লেখ করবেন।
উত্তরের কড়চা
এ বি পি প্রাঃ লিমিটেড
১৩৬/৮৯ চার্চ রোড
শিলিগুড়ি ৭৩৪৪০১ |
|