সরকারি হাসপাতাল চত্বরেই গজিয়ে উঠেছে বস্তি। মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ ওই বস্তিতেই আগুন লেগে আতঙ্ক ছড়াল উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর হাসপাতালে। কেউ হতাহত না হলেও হাসপাতাল চত্বরে কী ভাবে এই ‘বেআইনি’ বস্তি গজিয়ে উঠল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার বাসিন্দারা।
ইসলামপুর হাসপাতালের সাফাইকর্মীরা থাকেন ওই বস্তিতে। আগুন লেগে সেখানে মজুত রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারে পরের পর বিস্ফোরণে আতঙ্ক আরও ছড়ায়। চিকিৎসাধীন রোগী, তাঁদের আত্মীয়স্বজন এবং হাসপাতাল কর্মীরা ভয়ে ছুটোছুটি শুরু করেন। হাসপাতালে ৬৪টি শয্যা হলেও গড়ে ২০০ জন রোগী সব সময়েই থাকেন। আগুন লাগার পরে অনেক রোগী হাসপাতাল ভবন থেকে ছুটে বেরোন। হাসপাতালের কর্মীরাও অনেক রোগীকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেন। সরিয়ে নেওয়া হয় ‘সিক নিউবর্ন কেয়ার ইউনিট’-এ (এসএনসিইউ) ভর্তি হওয়া নবজাতকদেরও। দমকলকর্মীরা প্রায় দু’ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন আয়ত্বে আনেন। দেরিতে আসার অভিযোগ তুলে উত্তেজিত জনতা দমকলের একটি গাড়িতে ভাঙচুরও চালায়। পুলিশ জনতাকে সরিয়ে দেয়।
|
ইসলামপুর হাসপাতাল চত্বরে আগুন। মঙ্গলবার অভিজিৎ পালের তোলা ছবি। |
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান ইসলামপুরের মহকুমাশাসক পার্থ ঘোষ, এসডিপিও নীলকান্ত সুধীরকুমার, পুরপ্রধান কানাইয়ালাল অগ্রবাল। শিলিগুড়ি থেকে রাত ৯টা নাগাদ রওনা হন বিধানসভার স্বাস্থ্য বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য। রায়গঞ্জ থেকে রওনা হন উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসক পাশাং নরবু ভুটিয়া। আতঙ্কিত রোগীদের হাসপাতালে ফিরে যাওয়ার জন্য মহকুমাশাসককে মাইকে আবেদন করতে দেখা যায়। বেশি রাতের খবর, এসএনসিইউ-এর একটি অসুস্থ শিশু এবং অন্য ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা আরও ১১টি শিশুর খোঁজ মেলেনি বলে হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে। এক চিকিৎসক বলেন, “সম্ভবত আতঙ্কেই ওই শিশুগুলিকে নিয়ে তাদের পরিবার অন্য কোথাও চলে গিয়েছে। তাদের খোঁজ চলছে।”
তবে কী ভাবে বস্তিতে আগুন লাগল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। প্রাথমিক ভাবে দমকলের অনুমান, শর্ট-সার্কিট থেকেই আগুন ছড়িয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের জেরে বস্তির সমস্ত ঘর পুড়ে গিয়েছে বলে দমকল সূত্রের খবর। রুদ্রনাথবাবু বলেন, “আগুনে ক্ষতি হওয়াটা দুঃখের। আবার হাসপাতাল চত্বরেই বস্তি থাকলে রোগীদের নিরাপত্তা যে বিঘ্নিত হবে, সেটাও উদ্বেগের বিষয়। জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে বলা হবে।”
হাসপাতালের মূল ভবন থেকে মাত্র ৫০ মিটার দূরে গজিয়ে ওঠা ওই বস্তিতে ২৫টির বেশি ঘর রয়েছে। ওই বস্তি নিয়ে কর্তৃপক্ষের দীর্ঘ দিন ধরেই অভিযোগ রয়েছে। বেআইনি ওই বস্তি সরানো নিয়ে কর্তৃপক্ষের তরফে বহু বার দাবি জানানো হলেও এত দিন স্বাস্থ্য দফতর কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি বলে অভিযোগ। |
হাসপাতাল থেকে বাইরে বেরিয়ে এসেছেন রোগীরা। — নিজস্ব চিত্র |
স্থানীয় মানুষের মতে, এ দিনের অগ্নিকাণ্ড থেকে স্পষ্ট বস্তি সরানো না হলে কোনও দিন আরও বড় বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে। আমরি-কাণ্ডের পরেও কেন স্বাস্থ্য দফতর বস্তি সরানোর ব্যবস্থা নেয়নি, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও। হাসপাতালের সুপার জ্যোতি বিশ্বাস বলেন, “প্রায় ত্রিশ বছর ধরে ওই বস্তি রয়েছে। সম্প্রতি স্বাস্থ্য দফতরে প্রস্তাব পাঠানো হয় যাতে হাসপাতাল চত্বরের বাইরে ভবন তৈরি করে সাফাই কর্মীদের সরিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু এখনও সে সংক্রান্ত কোনও নির্দেশ আসেনি।”
ইসলামপুরের পুরপ্রধান কানাইয়ালাল অগ্রবাল বলেন, “পরিস্থিতি কতটা উদ্বেগজনক, এই ঘটনায় সেটা স্পষ্ট হয়ে গেল। বস্তির লোকেদের কী ভাবে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা সম্ভব, সেটা সকলে মিলে আলোচনা করে ঠিক করতে হবে।” স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী আবদুল করিম চৌধুরী বলেন, “হাসপাতালের ভিতরে বস্তি রাখা যাবে না। ওই ঝুপড়ির বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।” |