ভাষা দিবসে আবেগাপ্লুত পেট্রাপোল-বেনাপোল
গেট খুইল্যে দিয়েসে রে...।
চিৎকার করতে করতে উদ্বাহু হয়ে পেট্রাপোল সীমান্তের দিকে ছুটছিলেন এক বাংলাদেশি যুবক। জানা গেল, তখনই খুলে দেওয়া হয়েছে সীমান্তের গেট। ভারত ও বাংলাদেশের অসংখ্য মানুষ যে মুহূর্তটুকুর জন্য বছর ভর অপেক্ষা করে থাকেন। একুশে ফেরুয়ারি আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসের এই দিনটিতে দু’দেশের রাজনৈতিক গণ্ডি মুছে যায়। যে জন্য বাংলাদেশের সাংসদ আলহাজ্ব আফিলুদ্দিন বলেই ফেললেন, “আজ কোনও বাধা নেই। দুই বাংলার অন্তরের দাবির সামনে দু’দেশের সরকারও মাথা নত করতে বাধ্য হয়েছে।”
২০০০ সালে পেট্রাপোলে ভাষা দিবস পালনের সূচনা করেছিল ‘একুশে উদযাপন কমিটি’। তার দু’এক বছরের মধ্যেই অনুষ্ঠানের ‘দখল’ নেয় সিপিএম। এ বছর রাজ্য সরকারের উদ্যোগে হয়েছে অনুষ্ঠান। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ এই গানের সুরে সুরে সকাল থেকেই বাঁধা হয়ে গিয়েছিল দুই পারের মানুষের আবেগের তার। বনগাঁ পুরসভার পক্ষে বনগাঁর বিএসএফ ক্যাম্প মোড়ে ভাষা শহিদ বেদি স্থাপন করা হয়। সেখানে মাল্যদান করেন সরকারি অতিথিরা। বহু সাধারণ মানুষও সেখানে এসে মালা দিয়ে ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেছেন।
দুই বাংলার মিলন মেলা। ছবি: পার্থসাথি নন্দী।
বাম নেতৃত্ব নো-ম্যানস ল্যান্ডের কাছেই অনুষ্ঠানের তোড়জোড় শুরু করেছিল। মাইক ব্যবহারের অনুমতি দেয়নি প্রশাসন। যা নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোরও চলছে। শ্যামল চক্রবর্তী, নেপালদেব ভট্টাচার্য, অমিতাভ নন্দীর মতো সিপিএম নেতারাও এ দিন শহিদ বেদিতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
পেট্রাপোল ও বেনাপোল দুই সীমান্ত এলাকাতেই পৃথক অনুষ্ঠান হয়েছে দু’দেশের তরফে। রাজ্যের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল সভাপতি নির্মল ঘোষ, স্থানীয় বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস, বনগাঁর পুরপ্রধান জ্যোৎস্না আঢ্য, প্রাক্তন বিধায়ক গোপাল শেঠ প্রমুখ। বাংলাদেশের তরফে সে দেশের সাংসদ ছাড়াও এসেছিলেন বেনাপোল পুরসভার চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম লিটন, দেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামি লিগের নেতা-সহ বহু শিল্পী, বুদ্ধিজীবী। এ পারের অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করেন অভিনেত্রী সোনালি চৌধুরী। ‘জ্যোতিস্মরম’ এবং ‘অমরা’ দুই নৃত্যসংস্থাও নাচের অনুষ্ঠান করে। গান শোনান স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত। ছিলেন অভিনেতা হারাধন বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ অনেকে। গান, কবিতা, ভাষ্যপাঠে জমে ওঠে অনুষ্ঠান। দু’পারের অসংখ্য ভাষাপ্রেমী মানুষ ভিড় করেন। বিশ্বজিৎবাবু বলেন, “পাখির যেমন সীমানা থাকে না, তেমনই ভাষারও কোনও বন্ধন নেই। আমরা যাঁরা একই ভাষায় কথা বলি, তাঁদের মধ্যে কাঁটাতারের কোনও বেড়া নেই।” দু’দেশের বহু মানুষ এ দিন একে অন্যের সঙ্গে দেখা করেন। মিষ্টি, ফুল বিতরণ করেন নিজেদের মধ্যে। গভীর আলিঙ্গনের সময় অনেককে চোখের জল ফেলতেও দেখা গেল।
রাজনৈতিক তরজা ছাড়াও এ দিনের অনুষ্ঠানের আলোকবৃত্তের বাইরে থেকে গিয়েছে কিছুটা অভিমানের সুর। একুশে উদযাপন কমিটি যখন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করত, সে সময়ে সংগঠনের কনভেনর ছিলেন পার্থসারথি দে। এ দিন সরকারি অনুষ্ঠান মঞ্চে আমন্ত্রণ পাননি তিনি। বললেন, “আমাদের এক সময়ে এই অনুষ্ঠান থেকে উৎখাত করা হয়েছিল। এ বার রাজ্যের নতুন সরকার অনুষ্ঠান করল। তবু আমরা ব্রাত্যই থেকে গেলাম।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.