তদন্তের সূত্র বলতে ‘প্রেমিকা’কে একটি ফোন-কল। তার সাহায্যেই পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণ মামলার প্রধান অভিযুক্ত কাদের খানকে ধরার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা।
সোমবার রাতে কাদের তার প্রেমিকা, অভিনেত্রী নুসরত জহানকে ফোন করেছিল বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। সেই ফোন-কল থেকেই কাদের কোথায় রয়েছে, তার একটি সূত্র পেয়েছে পুলিশ। সেই অনুযায়ী কাদেরকে ধরতে গোয়েন্দাদের একটি দল ইতিমধ্যেই রওনা হয়ে গিয়েছে বলেও লালবাজার সূত্রের খবর।
কোথায় রয়েছে কাদের? তদন্তের স্বার্থে তা জানাতে চাননি গোয়েন্দারা। তবে এ দেশেরই একটি বড় শহরে সে গা-ঢাকা দিয়ে রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে ওই শহরে কোনও একটি বিশেষ ডেরায় না-থেকে সে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে পুলিশ কয়েকটি সূত্র মারফত জানতে পেরেছে। কাদের এখন বিদেশে পালানোর চেষ্টা করছে বলে পুলিশের সন্দেহ। নুসরত সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খোলার কিছুক্ষণের মধ্যেই কাদেরের ফোন আসায় পুলিশের আর একটি সন্দেহও জোরালো হচ্ছে। লালবাজারের গোয়েন্দাদের ধারণা, কলকাতায় কারও সঙ্গে যোগাযোগ রেখে পুলিশি তদন্তের গতি-প্রকৃতির উপরে সতর্ক নজর রাখছে কাদের। নুসরত সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার পরেই কাদেরের ওই ‘সুহৃদ’ তাকে খবর দেয়। এর পরেই নুসরতকে ফোন করে কাদের। দু’জনের কী কথা হয়েছে, তা নিয়ে অবশ্য গোয়েন্দারা মুখ খুলতে চাননি। আগের দিন মুখ খোলার পরে কাদেরের ফোন-কল নিয়ে এ দিন আর কোনও কথা সংবাদমাধ্যমকে বলতে চাননি নুসরতও। তবে লালবাজারের এক কর্তা বলেন, “তদন্তের প্রয়োজনে নুসরতের সঙ্গে কথা বলা হতে পারে।”
পার্ক স্ট্রিটের ঘটনাটি ঘটে ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে। ১৪ ফেব্রুয়ারি কাদের শহর ছেড়েছে বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। ধর্ষণের ঘটনাটি তখনও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়নি। এই মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে সবার আগে ফেরার হয় কাদেরই। আর এক ফেরার, জনির খোঁজও চলছে। পুলিশের দাবি, ধর্ষণের সময়ে রুমান খান আর জনিই গাড়ির পিছনে সিটে ছিল। সুমিত বজাজ ও নাসির (কাদেরের দাদা) ছিল সামনের সিটে। গাড়ি চালাচ্ছিল সুমিত। জনি আর কাদের এখন একসঙ্গে রয়েছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে একটা বিষয়ে পুলিশ নিশ্চিত। কলকাতার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে কাদেরের। কাদের এবং অন্য অভিযুক্তদের বন্ধুদের পুলিশ এখনও জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে যাচ্ছে। এই ক’দিনে কাদের কার কার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, তা বার করার চেষ্টা চলছে। অভিযোগকারিণীকে হুমকি-ফোনের পিছনেও কাদেরের হাত ছিল বলে তদন্তকারীরা মনে করছেন। কাদের ঘন ঘন মোবাইল নম্বর পাল্টাচ্ছে বলেও পুলিশের সন্দেহ। এর আগে দিল্লি ও বিহারের বেগুসরাইয়ে দল পাঠিয়েছিল লালবাজার। কিন্তু তারা খালি হাতেই ফিরেছে। সুতরাং নুসরতের ফোন থেকে কী সূত্র মিলেছে, তা নিয়ে বাড়তি সাবধানতা নিচ্ছেন গোয়েন্দারা। ফোনটি মোবাইল থেকে এসেছে, না ল্যান্ডলাইন থেকে সেটাও এখনই বলা ঠিক হবে না বলে গোয়েন্দারা জানিয়েছেন।
ধনী পরিবারের ছেলে কাদের বিদেশে পালাতে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলতে পারে এই আশঙ্কা থেকে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সাহায্য নিচ্ছে লালবাজার। কাদেরের কতগুলি এটিএম কার্ড রয়েছে, সে ব্যাপারে পুলিশ বিস্তারিত খবর নিয়েছে। দেশের যে কোনও শহরের এটিএম থেকে কাদের টাকা তুললেই সে খবর যাতে তাদের কাছে চলে আসে, সেই চেষ্টাই করছে লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ।
জনির পরিচয় নিয়েও বিস্তর খোঁজ খবর নিয়েছেন গোয়েন্দারা। জানা গিয়েছে, ২৮ বছরের জনিও এই দলের সঙ্গেই নিয়মিত নাইটক্লাবে যায়। গোয়েন্দারা জানান, জনি ওয়াটগঞ্জের নাজির লেনের বাসিন্দা। ফ্যান্সি মার্কেটের কাছে ‘গ্রিন প্লাজা’-য় তার মোবাইলের দোকান রয়েছে। ঘটনার পর থেকেই সে-ও উধাও। অভিযোগকারী মহিলা গাড়িতে যে অপরিচিত যুবকের কথা বলেছিলেন, জনি-ই সেই ব্যক্তি বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা।
পার্ক স্ট্রিট কাণ্ডের উপরে নজর রেখেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকও। ওই মন্ত্রকের কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক বিভাগ বিভিন্ন রাজ্যে মহিলাদের উপরে অপরাধের বিষয়টি নজরে রাখে। আজ, বুধবার পার্ক স্ট্রিটের ঘটনা সম্পর্কে জানতে চেয়ে রাজ্যের কাছে চিঠি দেওয়া হবে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে। |