টানাপোড়েন রাজনীতির
সামনে মাধ্যমিক, লাগাম পড়ল ভাষা দিবসে
ক দিন আগেই মাইক বাজিয়ে ‘বিবেক মেলা’ হয়ে গিয়েছে বর্ধমান টাউন হল চত্বরে। অথচ মঙ্গলবার একই জায়গায় বর্ধমান পুরসভার সাংস্কৃতিক কমিটি আয়োজিত ভাষা দিবসের অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিল প্রশাসন। গোটা ঘটনার পিছনে ‘রাজনীতি’ দেখছে সিপিএম।
মাধ্যমিকের তিন দিন আগে থেকে মাইক বাজানো নিষিদ্ধ হওয়াতেই এই পদক্ষেপ বলে প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে। যদিও আয়োজকদের দাবি, মাইক বাজানো হয়নি। ত্রিপলের ঘেরাটোপে আস্তে সাউন্ডবক্স বাজানো হচ্ছিল। তবে তাঁরা যে লিখিত অনুমতি নেননি, আয়োজকেরা তা মেনে নিয়েছেন। অবশ্য বিবেক মেলার জন্যও লিখিত অনুমতি নেওয়া হয়নি বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।
বিধানসভা নির্বাচনে জেলা জুড়ে সিপিএমের বিপর্যয় হলেও বর্ধমান পুরসভা এখনও তাদের নিয়ন্ত্রণে। কাউন্সিলর ও স্থানীয় বিদ্বজ্জনদের নিয়ে গঠিত সাংস্কৃতিক কমিটিতেও বামপন্থীদের একচ্ছত্র আধিপত্য। অন্য দিকে, রাজ্য যুবকল্যাণ দফতর আয়োজিত বিবেক মেলায় প্রশাসনের মূল সহযোগী ছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। ফলে প্রশাসন একটি অনুষ্ঠান হতে দিয়ে অপরটি বন্ধ করায় রাজনৈতিক টানাপোড়েন শুরু হয়েছে।
এখানেই চলছিল অনুষ্ঠান। নিজস্ব চিত্র।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই টাউন হল চত্বরে ভাষা দিবসের অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল। শহিদ বেদিতে মালা দিয়ে পুরপ্রধান আইনুল হক তার উদ্বোধন করেন। বেলা ১০টা নাগাদ প্রথম পর্যায়ের অনুষ্ঠান শেষ হয়। বিকেল ৪টে থেকে ফের অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দুপুর ২টো নাগাদ বর্ধমান (উত্তর) মহকুমাশাসক প্রশান্ত অধিকারী নিষেধাজ্ঞা জারি করে জানানো হয়, প্রয়োজনে টাউন হলের ভিতরে অনুষ্ঠান করা যেতে পারে। কিন্তু সেখানে তখন কো-অর্ডিনেশন কমিটির একটি অনুষ্ঠান চলছিল। ফলে সন্ধ্যায় হল ফাঁকা পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া উদ্যোক্তাদের গতি ছিল না। অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা দলগুলিকে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকতে হয়।
পুরপ্রধানের দাবি, “বক্স বাজিয়ে মণ্ডপের ঘেরাটোপে অনুষ্ঠান হচ্ছিল। শব্দ বাইরে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। কিন্তু প্রশাসনের অফিসারেরা এসে আমাদের বলেন, এই অনুষ্ঠান নিয়ে তাঁরা ব্যাপক চাপে আছেন। এটা করা যাবে না। ওঁদের চাপে ফেলতে না চাওয়ায় অনুষ্ঠানটিকে আমরা টাউন হলের ভিতরে স্থানান্তরিত করেছি।” পুরসভার সাংস্কৃতিক কমিটির আহ্বায়ক অরিন্দম মৌলিক বলেন, “প্রশাসনের এই ভূমিকায় আমরা ব্যথিত। যখন বিষয়টি আমাদের বলা হয়, অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ২৪টি দল এসে গিয়েছিল তাদের বসিয়ে রাখতে হয়।” অনুষ্ঠান সঞ্চালক দেবেশ ঠাকুর বলেন, “কো-অর্ডিনেশন কমিটির অনুষ্ঠান শেষ না হওয়ায় সন্ধ্যা ৭টার আগে আমাদের হল পাওয়ার উপায় ছিল না।”
গোটা ঘটনাটি প্রথমে পুলিশের জানাই ছিল না। বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা প্রথমে বলেন, “এ সব কিছুই তো আমি জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখছি।” পরে তিনি বলেন, ‘‘২৪ ফেব্রুয়ারি মাধ্যমিক শুরু হচ্ছে। মহকুমাশাসকের নির্দেশ, তার তিন দিন আগে থেকে মাইক বাজিয়ে অনুষ্ঠান করা যাবে না। সে কথাই উদ্যোক্তাদের জানানো হয়েছে। সম্ভবত ওঁরা মহকুমাশাসকের কাছ থেকে অনুমতি নেননি।”
অরিন্দমবাবু পাল্টা বলেন, “টাউন হল পুরসভার সম্পত্তি। আশপাশে তেমন ঘরবাড়িও নেই। প্রতি বছরই এখানে অনুষ্ঠান হয়। এটা তো স্থানীয় ব্যাপার নয়, আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস। আলাদা করে প্রশাসনের অনুমতি নেওয়ার কী আছে? আর মাইক তো বাজানোই হচ্ছিল না, মাইক ব্যবহারের অনুমতি নেব কেন?” পুরপ্রধানের মতে, “সংকীর্ণ রাজনীতির চাপেই প্রশাসন পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বলে আমাদের মনে হচ্ছে।”
মহকুমাশাসক অবশ্য পক্ষপাতের অভিযোগ মানতে চাননি। তিনি বলেন, “হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী মাধ্যমিক শুরুর তিন দিন আগে থেকে মাইক ব্যবহার করতে নিষেধাক্ষা জারি করা হয়েছে। জনসাধারণকে আমাদের তরফে এসএমএস করেও নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হচ্ছে। এখানে পক্ষপাতের অভিযোগ উঠছে কী করে?” বর্ধমান শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তথা কাউন্সিলর খোকন দাসের মতে, “প্রশাসন আইন মেনেই অনুষ্ঠান বন্ধ করেছে। এই ব্যাপারে কারও কোনও অভিযোগ থাকা উচিত নয়।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.