|
|
|
|
|
|
|
চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১... |
|
সুরের সঙ্গে মিলে যায় দিগন্ত বিস্তৃত অপরূপ সৌন্দর্য |
সম্প্রতি গগনেন্দ্র প্রদর্শশালায় অনুষ্ঠিত হল রিনি দত্তের প্রথম একক প্রদর্শনী। ঘুরে এসে লিখছেন মৃণাল ঘোষ। |
গগনেন্দ্র প্রদর্শশালায় সম্প্রতি যে জাগায় চোখে নূতন- দেখার দেখা এই শিরোনামে প্রথম একক আলোকচিত্রের প্রদর্শনী করলেন তরুণ শিল্পী রিনি দত্ত। শিরোনাম থেকে আভাসিত হয় যে ছবিগুলির ভিতর তিনি রাবীন্দ্রিক অনুষঙ্গ রাখতে চেষ্টা করেছেন। গান এবং কবিতার প্রতি রিনির নিবিড় ভালবাসা। চর্চাও করেন। ছবি তোলা তাঁর নতুন প্যাশন। প্রকৃতির সৌন্দর্য তাঁকে মুগ্ধ করে। সেই মুগ্ধতাকে তিনি নিজের ক্যামেরায় ধরে রাখতে চান। একটি পরম মুহূর্তের সন্ধান এক জন আলোকশিল্পীর প্রধান সাধনা। আমাদের সামনে প্রকৃতি ও জীবন সব সময়ই নানা রূপে, নানা ভাবে ছড়িয়ে থাকে। কিন্তু সব দৃশ্য সফল আলোকচিত্রের জন্য অনুপযুক্ত। এক জন আলোকচিত্রীকে সেই পরম মুহূর্তটির সন্ধান করে যেতে হয় যে মুহূর্তে সেই দৃশ্যটি কোনও না কোনও ভাবে অনন্য হয়ে ওঠে। আগে বা পরে যার কোনও বিকল্প থাকে না। দৃশ্যের এই অনন্যতা ভাল আলোকচিত্রের একটি শর্ত। রিনি তাঁর প্রকৃতি মুগ্ধতা থেকে এই সফল নির্বাচনটি করতে পেরেছেন অনেক ছবিতেই।
প্রদর্শনীটিকে তিনি করে তুলতে চেয়েছেন রবীন্দ্র জন্মসার্ধশতবর্ষে কবির প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি। সে জন্য তিনি ১৫০টি ছবি নির্বাচন করেছেন। প্রতিটি ছবিকে যুক্ত করতে চেয়েছেন রবীন্দ্রনাথের কবিতার গান বা কবিতার একটি বা দু’টি লাইনের অন্তর্গত বাণীর সঙ্গে। কবিতা থেকে ছবিতে নয়। ছবিকে যুক্ত করতে চেয়েছেন কবিতার সঙ্গে। অর্থাৎ কবিতার সচিত্রকরণ পদ্ধতির বিপরীত তাঁর পরিক্রমা। কবিতার সঙ্গে যুক্ত করার ফলে ছবিটিতে এক নতুন মাত্রা আরোপিত হয়। |
|
শিল্পী: রিনি দত্ত |
দৃশ্যটি নতুন প্রাণে স্পন্দিত হতে থাকে। রবীন্দ্রনাথের গানের বাণীর অন্তর্গত কবিতায় প্রকৃতির অফুরন্ত ছবি প্রবাহিত হতে থাকে। শিল্পী চেষ্টা করেছেন তাঁর আলোকচিত্রের দৃশ্যতার সঙ্গে উপযুক্ত একটি বাণীকে যুক্ত করে দিতে।
যেমন একটি ছবিতে আমরা দেখি সবুজ পত্রপুঞ্জের প্রেক্ষাপটে দু’টি নীল অপরাজিতা ফুটে আছে। এই ছবিটিকে শিল্পী যুক্ত করেছেন গানের এই বাণীর সঙ্গে
“দু’টি প্রাণ এক ঠাঁই তুমি তো এনেছ ডাকি,
শুভ কার্যে জাগিতেছে তোমার প্রসন্ন আঁখি।”
এই বাণীর তাৎপর্য অনেক বিস্তৃত হতে পারে। শিল্পী অপরাজিতার এই দৃশ্যটির সঙ্গে একে যুক্ত করে উভয়কেই যেমন নন্দিত করেছেন, তেমনি বাণীটিকে সীমাবদ্ধও করে দিয়েছেন। শিউলি গাছে একটি পূর্ণ প্রস্ফুটিত শিউলিকে শুধু ধরেছেন ক্যামেরায়। সঙ্গে যুক্ত করেছেন গানের সুর
“শিউলি বনের মধুর স্তরে
জাগবে শরৎলক্ষ্মী যবে...।”
এই বাণীর খানিকটা আভাস হয়তো ধরা পড়ে ছবিতে। সবটা ধরা যায় না। ছবি ও কবিতার সম্পর্কের এই একটি সীমাবদ্ধতা। ছবি একটি মুহূর্তে স্থির।
কবিতা সময়ের ভিতর প্রবহমান। এই দুই বিপরীতের মধ্যে কেমন করে সমন্বয় সাধন করা যায় রবীন্দ্রসাহিত্যের চিত্রায়ণে তা নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধতা দূর করা যায়নি। সফলতার অনেক ক্ষেত্রের মধ্যে দু’টি দৃষ্টান্তকে আমরা চিহ্নিত করতে পারি। ১৯১২তে প্রকাশিত গগনেন্দ্রনাথের ‘জীবনস্মৃতি’ চিত্রায়ণ এবং ১৯৩০-এ নন্দলাল বসুর ‘সহজ পাঠ’ প্রথম ভাগের জন্য করা ছবি।
রিনি কোথাও কোথাও এই সূক্ষ্ম ব্যঞ্জনাকে ছুঁতে পেরেছেন।
যেমন,
‘নীল দিগন্তে ওই ফুলের আগুন লাগল...
সর্ষেক্ষেতে ফুল হয়ে তাই জাগল’
এই সুরের সঙ্গে তিনি যখন যুক্ত করেন দিগন্ত বিস্তৃত ফুটে থাকা সর্ষে ফুলের সৌন্দর্য তখন তা গভীরতর তাৎপর্য পায়।
যে ক’টি ছবির কথা উল্লেখ করা হল এখানে সেগুলি সবই ‘ফুল’ পর্যায়ের। এ ছাড়াও শিল্পী ছবিগুলিকে অনেকগুলি পর্যায়ে ভাগ করেছেন। যেমন ‘আকাশ’, ‘নৌকা’, ‘দেবতা’, ‘সবুজ’, ‘কাশ’, ‘প্রাণী’ ইত্যাদি। ‘দেব-দেবী’ পর্যায়ের একটি ছবিতে তিনি ধরেছেন গৃহাভ্যন্তরে একটি প্রজ্বলিত দীপশিখাকে।
সঙ্গে গানের বাণী
“আমি সন্ধ্যাদীপের শিখা
অন্ধকারের ললাট মাঝে পরানু রাজটীকা।”
এই বাকপ্রতিমা সুপ্রযুক্ত। কিন্তু দু’টি গণেশ মূর্তির উপস্থাপনাকে তিনি যখন যুক্ত করেন এই গভীর বাণীর সঙ্গে ‘সত্যমঙ্গল প্রেমময় তুমি, ধ্রুবজ্যোতি তুমি অন্ধকারে’ তখন বাণীর নিহিত সত্যটি খুবই সীমাবদ্ধ হয়ে যায়।
তা সত্ত্বেও শিল্পীর আলোকচিত্রীয় দক্ষতা, কবিতার বোধ অধিকাংশ ছবিতেই গভীরের ব্যঞ্জনা এনেছে। তবে আরও সুসম্পাদিত হলে, উপস্থাপনায় আর একটু পেশাদারিত্ব থাকলে, আরও অভিনব হয়ে উঠতে পারত প্রদর্শনী। |
|
|
|
|
|