একটা দরজা, অনেক সুযোগ
প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ তখন প্রেসিডেন্সি কলেজে পদার্থবিদ্যায় অধ্যাপনা করেন। সেটা বিংশ শতাব্দীর কুড়ির দশক। সেই সময়ে সরকারের বিভিন্ন রিপোর্টের সংখ্যাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করার জন্য কোনও প্রথাগত গবেষণাগার বা পরিকাঠামো ছিল না। আর ভারতেও তখন সংখ্যাতত্ত্বের খুব একটা প্রচলন হয়নি। ফলে সংখ্যাতত্ত্বের কাজ করতে বেশ অসুবিধাই হত। ১৯২৮ সালে বিহার এবং ওড়িশা সরকারের একটি রিপোর্ট তৈরির খাতিরে মহলানবিশ তাঁর সহকারীদের সঙ্গে প্রেসিডেন্সি কলেজেই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে একটি সংখ্যাতাত্ত্বিক গবেষণাগার শুরু করেন। ১৯৩১ সালে কৃষি সংক্রান্ত সংখ্যাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করতে গিয়ে ইম্পিরিয়্যাল কাউনসিল অব এগ্রিকালচারাল রিসার্চের কাছ থেকে ২৫০০ টাকার ভাতা পান তাঁরা। দিন দিন বাড়তে থাকা কাজের চাপ এবং খ্যাতির কথা মাথায় রেখেই মহলানবিশ এই গবেষণাগারটিকে একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার পরিকল্পনা নেন। এই ভাবেই আরও কয়েকজন বিশিষ্ট অধ্যাপকের সাহায্যে প্রশান্ত মহলানবিশ ১৯৩১ সালে ‘ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউট’ (আই এস আই) প্রতিষ্ঠা করেন। এবং ১৯৫৯ সালে ভারতীয় সংসদীয় আইনের অধীনে ‘জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান’-এর মর্যাদা পায় আই এস আই।
প্রতিষ্ঠানের সুবিশাল কর্মধারা আজ দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রথাগত বিজ্ঞান, সমাজ বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির বিভিন্ন শাখায় সংখ্যাতত্ত্বের প্রয়োগ ও গবেষণার ফলে আজ আই এস আই-কে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রথম দিকে শুধু স্ট্যাটিসটিক্স-এই ডিগ্রি এবং ডিপ্লোমা দিতে পারত আই এস আই। তবে বেশ কিছু বছর থেকে স্ট্যাটিসটিক্স ছাড়া ম্যাথমেটিক্স, কোয়ান্টিটেটিভ ইকনমিক্স, কম্পিউটার সায়েন্স এবং স্ট্যাটিসটিক্স সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়েও ডিগ্রি ও ডিপ্লোমা দেওয়ার ক্ষমতা পায় এই প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়টি কলকাতায়। এ ছাড়া দিল্লি, বেঙ্গালুরু এবং চেন্নাইতে আই এস আই-এর শাখা রয়েছে। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানের উত্তর পূর্ব শাখাটি খুলেছে অসমের তেজপুরে।

এই প্রতিষ্ঠানে নানা ধরনের পাঠ্যক্রম আছে। প্রথমেই সেগুলি নিয়ে আলোচনা করা যাক:

বি স্ট্যাট (অনার্স)
৩ বছরের কোর্সটিতে ভর্তি হতে ইংরেজি এবং অঙ্ক বা সহমানের বিষয় নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক বা সমতুল্য পরীক্ষায় পাশ করতে হবে। কোর্সটি করানো হবে কলকাতায়।

বি ম্যাথ (অনার্স)
বেঙ্গালুরু আই এস আই-তে করানো হবে কোর্সটি। ভর্তি হতে ইংরেজি এবং অঙ্ক বা সহমানের বিষয়-সহ উচ্চমাধ্যমিক বা সমতুল্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। মেয়াদ ৩ বছরের।
যে সব ছাত্রছাত্রী ভারত সরকারের অ্যাটমিক এনার্জি বিভাগের ন্যাশনাল বোর্ড ফর হায়ার ম্যাথমাটিক্স-এর দ্বারা পরিচালিত ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ম্যাথমাটিক্যাল অলিম্পিয়াড’ পরীক্ষায় সফল হয়েছে, তাদের বি স্ট্যাট এবং বি ম্যাথ-এর লিখিত পরীক্ষায় বসতে হবে না। আবেদন করার পর ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে ভর্তি হতে পারবে তারা।

এম স্ট্যাট (দুই বছর)
স্নাতকস্তরে ৩ বছরের পূর্ণ বিষয় হিসেবে স্ট্যাটিসটিক্স থাকতে হবে অথবা আই এস আই থেকে বি ম্যাথ কিংবা সংখ্যাতাত্ত্বিক ডিপ্লোমা/ সিনিয়র ডিপ্লোমা করা থাকলে আবেদন করা যাবে। এ ক্ষেত্রে বি স্ট্যাট (অনার্স)-এর ছেলেমেয়েরা এম স্ট্যাট পড়ার সুযোগ পায় কলকাতায়। এই কোর্স করা যাবে দিল্লি ও চেন্নাইতে।

এম ম্যাথ (দুই বছর)
৩ বছরের স্নাতক ডিগ্রি অথবা অঙ্ক সহ বি ই/ বি টেক ছাড়াও বিশ্লেষণী এবং বিমূর্ত বীজগণিতে (Analysis and Abstract Algebra) বিশেষ দক্ষতা থাকতে হবে। এ ছাড়া আই এস আই থেকে বি স্ট্যাট পাশ করেও আবেদন করা যাবে। তবে প্রতিষ্ঠানের বি ম্যাথ (অনার্স)-এর ছাত্রছাত্রীরা এখানে সরাসরি এম ম্যাথ পড়তে পারে। পড়ানো হয় কলকাতা এবং বেঙ্গালুরু ক্যাম্পাসে। এ বছর কোর্সটি হবে কলকাতায়।

মাস্টার অব সায়েন্স ইন কোয়ান্টিটেটিভ ইকনমিক্স (দুই বছর)
অঙ্ক, অর্থনীতি, স্ট্যাটিসটিক্স, পদার্থবিদ্যায় ৩ বছরের স্নাতক ডিগ্রি/আই এস আই-এর বি স্ট্যাট ডিগ্রিধারীরা আবেদন করতে পারেন। ইঞ্জিনিয়ারিং-এর স্নাতকরাও আবেদনযোগ্য। বি ই বা বি এসসি পাশ কোর্সে আবেদনকারীদের অঙ্ক ও অর্থনীতির জ্ঞান চাই।

মাস্টার অব সায়েন্স ইন লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন সায়েন্স (দুই বছর)
প্রার্থীরা যে কোনও বিষয়ে স্নাতক হলেই চলবে। কোর্সটি বেঙ্গালুরুতে করা যাবে।

এম টেক ইন কম্পিউটার সায়েন্স (দুই বছর)
অঙ্ক, স্ট্যাটিসটিক্স, পদার্থবিদ্যা, ইলেকট্রনিক সায়েন্স, কম্পিউটার সায়েন্স, কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন, ইনফরমেশন টেকনলজিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অথবা ইঞ্জিনিয়ারিং বা প্রযুক্তিতে স্নাতক হলেও আবেদন করা যাবে। এ ছাড়া AMIE বা GRAD-IETE অথবা DOEACC ‘B’ লেভেল করা থাকলে আবেদন করতে পারেন ছাত্রছাত্রীরা। কোর্সটি করা যাবে কলকাতায়। গেট-এর নম্বরের ভিত্তিতে আবেদন করা যায়। তবে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব একটা কাট অফ মার্কস থাকে। যদি ছাত্রের গেট-এ প্রাপ্ত নম্বর এর মধ্যে পড়ে তবেই তাকে ইন্টারভিউতে ডাকা হয়।

এম টেক ইন কোয়ালিটি রিলায়াবিলিটি অ্যান্ড অপারেশনস্ রিসার্চ (দুই বছর)
প্রধান বিষয় প্রোব্যাবিলিটি এবং স্ট্যাটিসটিক্স সহ অঙ্ক ও সংখ্যাতত্ত্বে স্নাতকোত্তররা আবেদনযোগ্য। ইঞ্জিনিয়ারিং ও প্রযুক্তির স্নাতক বা আই এস আই থেকে এসকিউসি এবং ওআর বিষয়ে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা করা থাকলে আবেদন করা যাবে। প্রার্থীদের অঙ্কে স্নাতক স্তরের জ্ঞান এবং পদার্থবিদ্যা ও রসায়নে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। কোর্সটি করানো হবে কলকাতা ক্যাম্পাসে।

পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন স্ট্যাটিসটিক্যাল মেথডস উইথ অ্যাপ্লিকেশন (এক বছর)
গত বছরই প্রতিষ্ঠানের একটি শাখা তৈরি হয় অসমের তেজপুরে। কোর্সটি সেখানেই করানো হয়। যোগ্যতা: তিন বছরের স্নাতক ডিগ্রি। সেই সঙ্গে আন্ডার গ্র্যাজুয়েট স্তরে অঙ্ক একটি বিষয় হিসেবে থাকতে হবে। এ ছাড়া বি ই বা বি টেক-এর ছেলেমেয়েরাও আবেদন করতে পারে।

জুনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ
অঙ্ক, স্ট্যাটিসটিক্স, কোয়ান্টিটেটিভ ইকনমিক্স, কম্পিউটার সায়েন্স, কোয়ালিটি রিলায়াবিলিটি ও অপারেশনস্ রিসার্চ, বায়োলজিক্যাল অ্যানথ্রোপোলজি, পদার্থবিদ্যা ও অ্যাপ্লায়েড ম্যাথেম্যাটিক্স, এগ্রিকালচার ও ইকোলজি, সোশিয়োলজি, হিউম্যান জেনেটিক্স, সাইকলজি, জিয়োলজি, লিঙ্গুইস্টিক্স এবং লাইব্রেরি ও ইনফরমেশন সায়েন্স এই সব বিষয়ে জুনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ করা যায়।
এখন বিভিন্ন কোর্সে ভর্তির জন্য ফর্ম দেওয়া হচ্ছে।

এ বার আলোচনা করা যাক এই প্রতিষ্ঠানের যে পরীক্ষা হয় তা নিয়ে
আই এস আই-এর যে কোনও কোর্সে ভর্তি হতে প্রবেশিকা পরীক্ষা দিতে হয়। এবং সাধারণ ভাবে এই পরীক্ষা বেশ কঠিন হয় বলে মনে করা হয়। তাই এ নিয়ে একটু আলোচনা দরকার। পরীক্ষাগুলি হয় দুটো ভাগে। প্রত্যেকটি ভাগের ক্ষেত্রে সময় দু’ঘন্টা। প্রথম ভাগে মাল্টিপল চয়েস প্রশ্ন। প্রত্যেকটি প্রশ্নের উত্তরের চারটি অপশন। দ্বিতীয় ভাগে ডেসক্রিপটিভ প্রশ্ন দেওয়া হয়। তবে কোনও কোনও কোর্সে পরীক্ষার ধরনে কিছু বদলও হতে পারে। অধিকাংশ পরীক্ষাতেই প্রথম ভাগে অঙ্ক, দ্বিতীয় ভাগ সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ওপর বড় প্রশ্ন। যেমন, এম স্ট্যাট এবং এম ম্যাথ-এ সেকেন্ড হাফে যথাক্রমে স্ট্যাটিসটিক্স এবং অঙ্ক পরীক্ষা হয়। কোয়ান্টিটেটিভ ইকনমিক্স-এর ক্ষেত্রে থাকে ইকনমিক্স-এর ওপর প্রশ্ন। এম টেক কম্পিউটার সায়েন্স এবং লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন সায়েন্সে-এর জন্য দ্বিতীয় পত্রে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ওপর পরীক্ষা। সেটা স্ট্যাটিসটিক্স, ইঞ্জিনিয়ারিং, অঙ্ক, ফিজিক্স ইত্যাদি যা কিছু হতে পারে। আগের বছর পর্যন্ত আলাদা হলেও এ বছর থেকে বি ম্যাথ এবং বি স্ট্যাট কোর্সের জন্য একটাই পরীক্ষা হবে। তবে অন্যান্য কোর্সের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা পরীক্ষা। সাধারণত মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার অ্যাডমিশন টেস্ট হয়। এর পর থাকে ইন্টারভিউ। সেটাতে পাশ করলে প্রার্থী ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়।
কলকাতা আই এস আই-এর কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের শিক্ষক কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় জানালেন, ‘যাদবপুর, শিবপুর কিংবা খড়্গপুর আই আই টি-র যে কোনও ইঞ্জিনিয়ারিং শাখা থেকে শুরু করে স্ট্যাটিসটিক্স, ফিজিক্স, আই টি, ইলেকট্রনিক্স-এ এম এসসি করা ছেলেমেয়েদেরও এখানকার কম্পিউটার সায়েন্স-এ এম টেক করার জন্য উৎসাহ দেওয়া হয়। অনেক ছাত্রছাত্রীরই ধারণা আছে যে এখানকার কম্পিউটার সায়েন্সের প্রবেশিকা পরীক্ষার অঙ্ক পেপারটি নাকি খুব শক্ত হয়। এটি একটি কম্পিটিটিভ পরীক্ষা। সেই জন্য এখানে প্রশ্ন খুব সোজা না আসাই স্বাভাবিক। তবে যদি প্রশ্ন থাকে তিরিশটি, তা হলে এমন তো নয় যে প্রার্থীকে সব প্রশ্নেরই উত্তর দিতে হবে, না হলে সে চান্স পাবে না। তোমার দরকার তো পাওয়ার লিস্টে নামটা ঢোকানো। সে ক্ষেত্রে তুমি বারোটা অঙ্ক করে যে নম্বর পেলে সেটা যদি আমাদের নির্ধারিত কাট অফ নম্বরের মধ্যে থাকে তা হলে তোমার চান্স পেতে অসুবিধে নেই।
মেয়াদ বড় জোর আট থেকে বারো সপ্তাহ। আর এখন তো তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। ফলে ইন্ডাস্ট্রিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এরা ভাল চাকরি পায়।’
এ বার পড়ার খরচ ও বৃত্তি নিয়ে আলোচনা
কোনও কোর্সের ক্ষেত্রেই কোনও টিউশন বা অ্যাডমিশন ফি নেই। বরং এখানে স্নাতকস্তর থেকে ফেলোশিপ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠান থেকেই ছাত্রছাত্রীরা স্টাইপেন্ড পায়। বি ম্যাথ এবং বি স্ট্যাট ক্ষেত্রে মাসিক ৩০০০ টাকা, এম স্ট্যাট, এম ম্যাথ, কোয়ান্টিটেটিভ ইকনমিক্স এবং লাইব্রেরি ও ইনফরমেশন সায়েন্স-এ মাস্টার অব সায়েন্স-এর জন্য ৫০০০ টাকা পাওয়া যায়। এম টেক কোর্সগুলির (কম্পিউটার সায়েন্স এবং কোয়ালিটি, রিলায়াবিলিট অ্যান্ড অপারেশনস্ রিসার্চ) দেওয়া হয় মাসিক ৮,০০০ টাকা করে। আর ফেলোশিপ করতে আগ্রহী ছাত্রছাত্রীদের এম টেক/ এম ই বা সমতুল্য ডিগ্রি থাকলে তাদের প্রতি মাসে ১৮,০০০ টাকা এবং অন্যান্যদের ১৬০০০ টাকা দেওয়া হয়। এ ছাড়া চারটি বিষয় সংখ্যাতত্ত্ব, অঙ্ক, কম্পিউটার সায়েন্স, কোয়ান্টিটেটিভ ইকনমিক্স এবং কোয়ালিটি রিলায়াবিলিটি অ্যান্ড অপারেশনস্ রিসার্চ-এ অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের মাসিক ২০,০০০ টাকার বিশেষ বৃত্তি দেয় আই এস আই।
আর চাকরি? কিংবা আরও উচ্চশিক্ষা?
বি ম্যাথ বা বি স্ট্যাট করে ছাত্রছাত্রীরা আই এস আই-তেই এম স্ট্যাট বা এম ম্যাথ করার সুযোগ পায় সরাসরি। অনেক ছাত্রছাত্রী স্নাতকোত্তর পাশ করার পরই বড় বড় সংস্থায় কাজ পেয়ে যায়। রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, অ্যাকচুয়ারি, ফিনান্স, ব্যাঙ্কিং, অ্যানালিটিক্স, মার্কেট রিসার্চ, সফটওয়্যার ও টেকনলজি এমন বহু ক্ষেত্রেই যোগ দেয় এখানকার ছেলেমেয়েরা। তবে যারা আরও পড়াশোনা ইচ্ছুক তারা অনেক সময়েই বিদেশের বিভিন্ন নাম করা বিশ্বববিদ্যালয় যেমন, হার্ভাড, প্রিন্সটন, স্ট্যানফোর্ড, কর্নেল-এ রিসার্চ করতে চলে যায়। অথবা প্রতিষ্ঠানেই জুনিয়র রিসার্চ ফেলো, তার পর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো এবং শেষে পিএইচ ডি করে নিতে পারে। এ ছাড়াও এম ম্যাথ বা এম স্ট্যাট করার পর স্ট্রিম বদলাতে চাইলে ছাত্রটি অনায়াসেই এম টেক কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করতে পারে। তেজপুরে স্ট্যাটিসটিক্যাল মেথডস্ উইথ অ্যাপ্লিকেশনস-এ যে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা কোর্সটি রয়েছে সেটি করার পর আই এস আই-তে এম স্ট্যাট পড়ার জন্যে আবেদন করা যায়। অধিকাংশ মাস্টার অব সায়েন্স এবং এম টেক কোর্সের ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের ইন্টার্নশিপের সুযোগ থাকে। প্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষকই বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যুক্ত থাকেন নানান কাজের সূত্রে। ফলে কোয়ালিটি রিলায়াবিলিটি অ্যান্ড অপারেশনস রিসার্চ-র মতো কোর্সের ক্ষেত্রে এরা তাঁদের কাজের অভিজ্ঞতা ভাল মতোই আদানপ্রদান করতে পারেন ছাত্রদের সঙ্গে। মূলত পাঁচটি বিষয় স্ট্যাটিসটিক্স, অঙ্ক, কম্পিউটার সায়েন্স, কোয়ান্টিটেটিভ ইকনমিক্স এবং কোয়ালিটি রিলায়াবিলিটি অ্যান্ড অপারেশনস রিসার্চ-এর ওপর পিএইচ ডি ডিগ্রি দিতে পারে আই এস আই। এ ছাড়া, এগ্রিকালচার, সোশিয়োলজি, অ্যানথ্রোপোলজি, জিয়োলজির মত আরও যে সব বিষয়ে প্রতিষ্ঠানে জে আর এফ করানো সেই সব কোর্সগুলির ক্ষেত্রে ডিগ্রিটা দেয় অন্য কোনও বিশ্ববিদ্যালয় ।
প্রতিষ্ঠানের কোয়ান্টিটেটিভ ইকনমিক্স-এর শিক্ষক মণিপুষ্পক মিত্র বললেন, মাস্টার অব সায়েন্স (কোয়ান্টিটেটিভ ইকনমিক্স)-এ শুধু অর্থনীতি নয়, স্ট্যাটিসটিক্স, অঙ্ক এমনকী ইঞ্জিনিয়াররাও পড়তে আসে। দেশে বিদেশে রিসার্চ-এর সুযোগের পাশাপাশি সরকারি বেসরকারি ব্যাঙ্ক, স্টক মার্কেট, মার্কেট রির্সাচ, অ্যাকচুয়ারি সংক্রান্ত বহু সংস্থায় চাকরি পায় ছেলেমেয়েরা।’ এ ছাড়া বাজারে ভাল চাহিদা থাকার ফলে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন সায়েন্স এবং কোয়ালিটি, রিলায়াবিলিটি অ্যান্ড অপারেশনস রিসার্চ-এর কোর্সগুলিও।

ডিন অব স্টাডিজ, আই এস আই, ভবানী প্রসাদ সিংহের পরামর্শ
যতগুলি প্রশ্ন জানা রয়েছে ততগুলিরই উত্তর দাও বিস্তারিত...

এটা আমাদের ‘সেকেন্ড হোম’
প্রজ্ঞা সুর
আ ই এস আই সম্পর্কে অনেকেরই ধারণা, এখানে ছেলেমেয়েরা রাত-দিন বইয়ের মধ্যে মুখ গুঁজে বসে থাকে। এই ধারণা একেবারেই ভুল। ইনস্টিটিউটে এক্সট্রা-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি-র সুযোগ প্রচুর। খেলাধুলো থেকে শুরু করে গানবাজনা, অ্যাডভেঞ্চার সব রকম ব্যবস্থা রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষকেরাও যোগ দেন আমাদের সঙ্গে। গোটা ইনস্টিটিউটাই যেন একটা বড় পরিবার। যেমন, শিক্ষকদের কথাই যদি ধরি। কোনও একটা বিষয় পড়ার সময় তোমার কোথাও আটকে গেল। সেটা অন্য কোনও বিষয়ের এক জন শিক্ষক ভাল বলতে পারবেন। তুমি স্বচ্ছন্দে সেই শিক্ষকের কাছে ব্যাপারটি বোঝার জন্য সময় চাইতে পারো। তিনি তোমাকে না চিনলেও তাঁর সময় ও সুযোগ মতো ব্যাপারটি তোমাকে বুঝিয়ে দেবেন।
আই এস আই-এর হোস্টেলটা আমাদের সেকেন্ড হোমের মতো। ছাত্র-সংখ্যা কম হওয়ায় এখানে প্রায় সবাই সবাইকে চেনে। আর সুবিধে-অসুবিধে সব কিছুই ভাগ করে নেওয়া হয়। পড়াশোনাটা সাধারণত আমরা ‘গ্রুপ স্টাডি’ আকারে করি। এতে আমাদের খুব সুবিধেই হয়। যে যখন যে বিষয়টা ভাল বুঝতে পারে সে ক্লাসের বাকিদের সঙ্গে সেটা নিয়ে আলোচনা করে। আবার কোনও সিনিয়র কোনও বিষয়ে খুব ভাল। পরের দিন হয়তো তার পরীক্ষা। তা হলেও আমরা তার কাছে গিয়ে ভিড় করতে পারি বিষয়টি বোঝবার জন্য।

Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.