|
|
|
|
এনবিএসটিসি |
কর্মী ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে দিনভর বিক্ষোভ-সমাবেশ |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার ঠিকাদার নিযুক্ত কর্মীদের সরানোর নির্দেশের জেরে কর্মী মহলে ক্রমশ ক্ষোভ-হতাশা দানা বাঁধছে। বৃহস্পতিবারও মালদহ, রায়গঞ্জ-সহ উত্তরবঙ্গের নানা ডিপোয় প্রায় দিনভর বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছেন ঠিকাদার নিযুক্ত কর্মীরা। বালুরঘাট ডিপোয় বিক্ষোভের জেরে প্রায় ৬ ঘণ্টা বাস চলেনি। তার উপরে দিনহাটায় কাজ হারানোর আশঙ্কায় ডিপোর মধ্যেই দু’জন ঠিকাদার নিযুক্ত কর্মী আত্মহত্যার হুমকি দেন বলে একটি সূত্রের খবর। সহকর্মীরা তাঁদের নিরস্ত করেন।
কোন দু’জন কর্মী আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছেন তাঁদের নাম জানাতে চাননি ডিপোর নেতা-কর্মীরা। তবে আন্দোলনরত কর্মীরা জানিয়েছেন, নির্দেশ প্রত্যাহার না-হওয়া পর্যন্ত তাঁরা বিক্ষোভ চালিয়ে যাবেন। সিটুর উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ ঠিকাদার শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক বিষ্ণু দত্ত বলেন, “আমরা সকলকে বলেছি, আত্মহত্যার কথা ভাববেন না। বরং লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।” দিনহাটা ডিপো ইনচার্জ জয়ন্ত দত্ত বিষয়টি শুনেছেন। তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
এ দিন বালুরঘাট ডিপোর ঠিকাদার নিযুক্ত দুই অস্থায়ী মহিলা কর্মী প্রীতি কর্মকার ও মঞ্জু মোহান্ত কান্নায় ভেঙে পড়েন। দু’জনেরই বক্তব্য, “মাসে ৩৫০০ টাকা মাইনে পেতাম। তাতে সংসার চলত। এখন কী হবে জানি না।” বালুরঘাটে ছাঁটাই হওয়া কর্মীদের মধ্যে রয়েছেন তৃণমূল অনুমোদিত শ্রমিক সংগঠনের সদস্য রূপক মোহান্ত। তাঁর আক্ষেপ, “আমাদের সরকার। অথচ আমাদের কথাই
ভাবছে না।” এই অবস্থায় ইনটাক ও সিটু যৌথ মঞ্চ গড়ে লাগাতার ধর্না, বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। কোচবিহারে মুখে কালো কাপড় বেঁধে মিছিল করেছেন শঙ্কিত কর্মীরা। সব কটি সংগঠনকে সামিল হওয়ার আর্জি জানিয়েছে যৌথ মঞ্চ। রায়গঞ্জ ডিপোর ৬টি ডিভিশনে ঠিকাদার নিযুক্ত কর্মীরা ডিপো দেখভালের কাজ করতে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। তাতে ডিপোয় যন্ত্রাংশ চুরির আশঙ্কা বেড়েছে বলে সংস্থা সূত্রের খবর। এনবিএসটিসির ম্যানেজিং ডিরেক্টর সি মুরুগন বলেন, “সব দিক খতিয়ে দেখেই সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন আন্দোলন কেন হবে? আমরা ঠিকাদার নিযুক্ত কর্মীদের রাখব না। নিজস্ব কর্মীদের বিভিন্ন ডিপোয় পাঠিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে।”
এনবিএসটিসির চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ জানান, সংস্থার ব্যয় না কমালে অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের পিএফের টাকা মেটানো অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে। তিনি জানান, বর্তমানে স্থায়ী কর্মীদের বেতন থেকে টাকা কেটে নেওয়ার পরেও ৯২ কোটি টাকা পিএফ দফতরে বকেয়া রয়েছে। ফি মাসে ওই বকেয়ার জন্য প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা সুদের বোঝা চাপছে। এই পরিস্থিতিতে অন্তত সুদের টাকা প্রতি মাসে মেটানো না গেলে ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে সংস্থার কর্মীদের পিএফের টাকা মেটানো অনিশ্চিত হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদক তথা এনবিএসটিসির প্রাক্তন ডিরেক্টর তারিণী রায় জানান, ১৯৮৯ সাল থেকে কেন্দ্রীয় সরকার নিগমের ম্যাচিং গ্রান্টের বরাদ্দ দিচ্ছে না। দফায় দফায় তেলের দাম বেড়েছে। তাঁর বক্তব্য, “রাজ্য সরকার মন্ত্রীদের ভাতা বাড়িয়েছে অথচ ওই সংস্থার ভর্তুকি তুলে দেওয়ার কথা বলছেন। বামফ্রন্ট সরকার তো সংস্থাকে বাঁচাতে ভর্তুকি বন্ধের কথা কখনও ভাবেনি।” তারিণীবাবুর কটাক্ষ, “ডাক্তারি না জেনে চিকিৎসা করলে রোগীর যা দশা হয়, এখন তাই হচ্ছে। এখন যাঁরা দায়িত্বে আছেন তাঁদেরও সেই অবস্থা।” |
|
|
|
|
|