অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের রান্না করা নিয়ে কাজিয়া শুরু হয়েছে কংগ্রেস-সিপিএমের মধ্যে। সমস্যাটি পাড়া ব্লকের হরিহরপুর গ্রামের।
পঞ্চায়েত ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হরিহরপুর গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের নিজস্ব ভবন নেই। তাই দীর্ঘদিন ধরে পালা করে তিন বাসিন্দার বাড়িতে রান্না হত। কংগ্রেস-সিপিএমের মধ্যে বিবাদে সেই রান্না দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। সম্প্রতি কাজ শুরু হলেও ফের কংগ্রেস ও সিপিএমের মধ্যে বিবাদ দেখা দিয়েছে। পাড়া সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্প আধিকারিক দিলীপ মণ্ডল বলেন, “৬ ফেব্রুয়ারি এই সমস্যা নিয়ে প্রোজেক্ট লেবেল মনিটারিং কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। সহমতের ভিত্তিতে আমরা সমস্যার সমাধান করতে চাইছি।”
হরিহরপুর গ্রামের অঙ্গনওয়াড়িকেন্দ্র নিয়ে সমস্যা দীর্ঘদিনের। কারণ এই গ্রামের তিনটি অঙ্গনওয়াড়িকেন্দ্রের নিজস্ব কোনও ভবন নেই। সিপিএম সমর্থক হিসেবে পরিচিত তিন বাসিন্দার বাড়িতে রান্না হত। অভিযোগ, রাজ্যে পালাবদলের পরে কংগ্রেসের কর্মীরা দাবি করেছিলেন, সিপিএমের বদলে তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে রান্না করতে হবে। পাড়ার কংগ্রেস বিধায়ক উমাপদ বাউরির কাছে এ বিষয়ে আবেদন করে সিডিপিও-র কাছে দাবি জানিয়েছিলেন তিন কংগ্রেস কর্মী। কিন্তু গ্রামের সিপিএম পঞ্চায়েত সদস্য নুর আলমের কাছে রান্নার চাল থাকায় তাঁরা সেই চাল দিতে অস্বীকার করেন বলে অভিযোগ কংগ্রেসের। এর ফলে বন্ধ ছিল রান্নার কাজ। সিপিএমের আরও অভিযোগ, গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যকে এড়িয়ে শিশু বিকাশ দফতরে চাপ দিয়ে নিজেদের বাড়িতে রান্না করছেন কংগ্রেস কর্মীরা।
ঘটনা হল ৩১ ডিসেম্বর থেকে তিন কংগ্রেস কর্মীর বাড়িতেই শুরু হয়েছে রান্না এবং শিশুদের খাবার দেওয়া। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দীননাথ লোধার দাবি, “সমস্ত জায়গাতেই গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যকে রেখে অঙ্গনওয়াড়িকেন্দ্র চালানো হয়। কিন্তু হরিহরপুর গ্রামে তার ব্যতিক্রম হয়েছে।” তাঁর অভিযোগ, “গ্রামের বাসিন্দাদের ডেকে বৈঠক করে কোথায় রান্না হবে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরিবর্তে প্রশাসনকে প্রভাবিত করে রান্না শুরু করেছে কংগ্রেসের কর্মীরা।” পঞ্চায়েত সদস্য নুর আলম বলেন, “সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে আমার কাছে রান্নার চাল আছে। রান্নার কাজ দেখা, শিশুদের খাবার দেওয়া হচ্ছে কি না তা দেখার দায়িত্ব পঞ্চায়েত সদস্যের। কিন্তু আমাকে অন্ধকারে রেখে রান্নার ভার বদল করার জন্য আমার কাছে থাকা চাল দিতে রাজি হয়নি।” যদিও সিডিপিও বলেন, “গ্রামবাসীদের দু’টি গোষ্ঠীর বিবাদে রান্না বন্ধ ছিল। বঞ্চিত হচ্ছিল শিশুরা। সেই কারণে রান্না শুরু করা হয়েছে। কোনও বিধি ভাঙা হয়নি।”
আর বাসিন্দাদের দাবি, শিশুরা যাতে খাবার থেকে বঞ্চিত না হয় সে জন্য গ্রামে স্থায়ী অঙ্গনওয়াড়িকেন্দ্র গড়া হোক। ব্লক প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, স্থায়ী অঙ্গনওয়াড়িকেন্দ্র নির্মিত হলে রান্না কোন দলের সদস্যদের বাড়িতে হবে, সেই বিবাদের নিষ্পত্তি হবে বলে তাঁর আশা। সিডিপিও বলেন, “টাকা পড়ে রয়েছে। কিন্তু জায়গা না থাকায় ভবন নির্মাণ করা যাচ্ছে না। জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। খাস জমির সন্ধান চলছে।”
অন্য দিকে, কংগ্রেস নেতা রামজান মির্ধার দাবি, “সিপিএমরে লোকেদের বাড়িতে রান্না হত। কিন্তু শিশুরা ঠিক মতো খাবার পেত না। তাই আমাদের কর্মীরা নিজেদের বাড়িতে রান্না করার দাবি তুলেছিল। আমরা চাই না, রাজনৈতিক বিবাদ শিশুদের থাবারের উপরে পড়ুক। একটা সহমত তৈরির চেষ্টা করেছিলাম। তারা রাজি হয়নি।” দীননাথবাবু বলেন, “আমরা চাই গ্রামে নিজস্ব ভবন তৈরি হোক। দলগত ভাবে প্রয়োজনীয় সাহায্য করব।” এ প্রসঙ্গে সিডিপিও বলেন, “আগের বৈঠকে কমিটির চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক উপস্থিত ছিলেন না। তাই বৈঠক স্থগিত ছিল। এ বার কমিটির সমস্ত সদস্য ও গ্রামের দুই গোষ্ঠীকে নিয়ে বৈঠক করা হবে।” বিডিও তমোঘ্ন কর বলেন, “আশা করছি সমস্যার সমাধান মিলবে।” |