|
|
|
|
রাতারাতি সভা মেদিনীপুরে |
বুদ্ধ-বিমানের কাছে গণতন্ত্র শিখব না, পাল্টা মুকুলের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
চব্বিশ ঘণ্টার ব্যবধানে মেদিনীপুরের কলেজ মাঠ সাক্ষী রইল রাজ্য-রাজনীতির দুই প্রধান পক্ষের পিঠোপিঠি সমাবেশের। দলের জেলা সম্মেলন উপলক্ষে সমাবেশে বুধবার এই মাঠ থেকেই রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ‘সন্ত্রাস’, ‘প্রতিহিংসা’, ‘গণতন্ত্র খর্ব করা’, ‘অকর্মণ্যতা’র অভিযোগ তুলেছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্রের মতো সিপিএমের শীর্ষ নেতারা। আর বৃহস্পতিবার একই মাঠের মঞ্চ থেকে সিপিএমের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। বাম আমলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরে নির্যাতনের নানা ঘটনা তুলে ধরে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় এ দিন বললেন, “বুদ্ধ-বিমানদের কাছ থেকে গণতন্ত্র শিখব না!”
পুলিশের হিসাবে বুধবার সিপিএমের সমাবেশে লোক হয়েছিল হাজার পঁচিশ। আর এ দিন তৃণমূলের সমাবেশে হাজার ষাটেরও বেশি। যা দেখে উচ্ছ্বসিত মুকুলবাবুর মন্তব্য, “২৪ ঘণ্টা আগে এই মাঠেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যেরা সভা করেছিলেন। আমাদের সভায় মমতা আসছেন না, সবাই জানতেন। তবু সিপিএমের সভার মোকাবিলা হবে জেনেই এত মানুষ এসেছেন।” সিপিএমকে ‘হুঁশিয়ারি’ দিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, “বিধানসভা ভোটের আগেও এই মাঠে সভা করে বুদ্ধদেববাবুরা বলেছিলেন, ওঁরা নাকি ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। বুধবারও এই মাঠ থেকে অনেক লম্বা লম্বা কথা বলেছেন! অথচ মাঠের এক-তৃতীয়াংশও ভরাতে পারেননি! আজকের সভা দেখিয়ে দিচ্ছে, পঞ্চায়েত ভোটেও ওঁদের ঘুরে দাঁড়ানোর জায়গা নেই।” |
|
লোকারণ্য। বৃহস্পতিবার মেদিনীপুর কলেজ মাঠে তৃণমূলের সমাবেশ। সৌমেশ্বর মণ্ডলের তোলা ছবি। |
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব সমাবেশকে সিপিএমের ‘পাল্টা’ বলতে না-চাইলেও মুকুলবাবুর বক্তব্যই ‘জবাবি সভার’ সুর বেঁধে দেয়। পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতিতে ৪ ফেব্রুয়ারি মেদিনীপুর শহরে সমাবেশ করার কথা ছিল তৃণমূলের। কিন্তু সিপিএম ১ তারিখ সমাবেশ করছে জেনেই তড়িঘড়ি পরের দিনই সমাবেশের ডাক দেয় রাজ্যের প্রধান শাসক দল। জনসমাগমে সিপিএমকে ছাপিয়ে যাওয়ারও ‘চ্যালেঞ্জ’ নেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। যে কারণে এ দিন জেলার বিভিন্ন রুটের বেসরকারি ১২০০ বাস ভাড়া করে নেওয়া হয়েছিল। হাজার দু’য়েক লরি, কয়েকশো ট্রেকারও ভাড়া নেওয়া হয় সমর্থকদের সমাবেশে আনার জন্য। ফলে জেলায় পরিবহণ ব্যবস্থাই ভেঙে পড়েছিল বলে অভিযোগ।
তৃণমূল সরকার প্রতিহিংসা চালাচ্ছে, রাজ্যে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই বলে যে সব অভিযোগে বুধবারের সমাবেশে সরব হয়েছিলেন সিপিএম নেতারা, তার জবাবে এ দিন মুকুলবাবু বলেন, “তৃণমূলের জন্মের পরে আমরা পাঁশকুড়া লোকসভার ভোটে জিতেছিলাম। তার পর কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটে আমাদের প্রার্থী দিতে দেওয়া হয়নি।” একদা মহাকরণ থেকে মমতাকে বার করে দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে মুকুলবাবু বলেন, “তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গেলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে যারা চুলের মুঠি ধরে মহাকরণ থেকে বার করে দিয়েছিল, সেই বুদ্ধ-বিমানদের কাছে গণতন্ত্র শিখব না!” সিপিএম বিধায়ক সুশান্ত ঘোষের জেলে থাকা নিয়ে মুকুলবাবুর মন্তব্য, “কঙ্কাল পাওয়া গেল। পুলিশ যখন ভাল করে তদন্তই শুরু করেনি, সুশান্ত ঘোষ চলে গেলেন আদালতে। আদালতের নির্দেশে গ্রেফতার হয়েছেন তিনি।”
পটাশপুরের তৃণমূল বিধায়ক জ্যোতির্ময় কর বলেন, “সিপিএম হলে মেরে লাশ গায়েব করে দিত! আমাদের সরকার আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে। নির্দোষ প্রমাণ হলে যে কেউ ছাড়া পেয়ে যাবে। আর দোষী হলে জেলেই থাকতে হবে।” নেতাই-কাণ্ডে সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক দীপক সরকারের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনা উচিত বলেও এ দিন মন্তব্য করেন মুকুলবাবু।
|
|
|
|
|
|