সঈদ আজমল।
উমর গুল।
শাহিদ আফ্রিদি।
রানা নাভেদ।
ঠিক এই মুহূর্তে বিশ্বসেরা টি-টোয়েন্টি দল গড়তে গেলে এই চারটে নাম বিবেচনার মধ্যে আসবেই। অথচ শনিবার বেঙ্গালুরুতে নতুন আইপিএল নিলামে দেড়শোর কাছাকাছি রেজিস্টার্ড প্লেয়ারের তালিকায় নাম চারটে নেই। আসলে পাকিস্তানের কারও নাম নেই। গত তিন আইপিএলের মতো এ বারও পাকিস্তানিদের ব্রাত্য করে রাখা হচ্ছে। যদিও গোটা ব্যাপারটাই হচ্ছে ঢাক-ঢাক গুড়-গুড় করে। লিখিত এবং সরকারি ভাবে কোনও নির্দেশ নেই। ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষ থেকে যা বলা হয়েছে সব মৌখিক।
বৃহস্পতিবার লাহৌর এবং করাচিতে ফোনে যোগাযোগ করে জানা গেল, পাকিস্তানি ক্রিকেটমহল এই নিয়ে রীতিমতো ক্ষিপ্ত। পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা এখন বিশ্ব জুড়ে টি-টোয়েন্টি খেলছেন। ভারত যখন অস্ট্রেলিয়া টেস্ট সিরিজে চুনকাম হচ্ছিল তখন আফ্রিদিরা একই সময়ে, কখনও একই শহরে অস্ট্রেলিয়ার টি-টোয়েন্টি সংস্করণ বিগ ব্যাশ খেলছিলেন। এঁদের কারও কারও ক্ষীণ আশা ছিল অন্তত এ বার আইপিএল থেকে তাঁদের বঞ্চিত করা হবে না। বিশেষ করে দুবাইতে বিশ্বের এক নম্বর ইংল্যান্ডকে টেস্ট সিরিজে পর্যদুস্ত করার পর যেখানে পাকিস্তানিদের আবার রমরমা ফেরত আসছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটমহলে। অথচ নয় ফ্র্যাঞ্চাইজির কেউ তাঁদের নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না। |
আইপিএলের মহাকর্তা সুন্দর রামনের সঙ্গে শনিবার মুম্বইয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি আনন্দবাজারকে বললেন, “পাকিস্তান ক্রিকেটার সম্পর্কে গত বার আমাদের যা নীতি ছিল, এ বারও তা অপরিবর্তিত। ভারতীয় বোর্ড গত বার মিডিয়াকে এ ব্যাপারে যা বিবৃতি পাঠিয়েছিল তা থেকে আমরা সরে আসিনি।” ক্রিকেটমহলে অনেকে অবশ্য আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছেন গত বছর আর এ বছরের পরিস্থিতির তফাত থাকা সত্ত্বেও কেন পাকিস্তানিদের নাম পুনর্বিবেচনা করা হল না? কেন নিলামের লম্বা তালিকায় তাঁদের আকর্ষণীয় নামগুলো নেই?
বেঙ্গালুরুর নিলামে হাতে সবচেয়ে বেশি টাকা আছে কেকেআর-সহ চারটে টিমের। মোট দশ কোটি টাকা। বাকিরা অনেকেই মোট টাকার কোটা থেকে প্লেয়ার নিয়ে ফেলেছে। যেমন পুণে নিয়েছে সৌরভকে। বেঙ্গালুরু নিয়েছে গেইলকে। কোচি টিমের মাহেলা জয়বর্ধনে এবং রবীন্দ্র জাডেজা অবশ্যই নিলামের সেরা আকর্ষণ হতে যাচ্ছেন। কোনও কোনও ফ্র্যাঞ্চাইজি চেয়েছিল এর সঙ্গে পাকিস্তানিদেরও যুক্ত করতে। আইপিএল কর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তাঁরা বলেন, পাকিস্তানিদের নিলে অনিশ্চয়তা থাকবে। ভিসা পাওয়া থেকে সব ব্যাপারে। এই উত্তর শুনে ইচ্ছুক ফ্র্যাঞ্চাইজিরা পিছিয়ে যায়।
এদের কারও কারও মনে হচ্ছে গত বার আর এ বারের পরিস্থিতি মোটেও এক নয়। পাকিস্তানিদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়েছিল মুম্বইতে ২৬/১১ ঘটে যাওয়ার পর। সেটা ছিল ২০০৮। দক্ষিণ আফ্রিকায় হওয়া ২০০৯ আইপিএলে কাউকে নেওয়া হয়নি। গত দু’বছরও না। কিন্তু এ বার মোহালির বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে পাকিস্তান খেলে যাওয়ার পর অনেকেরই মনে হয়েছিল নিষেধাজ্ঞা বুঝি কেটে গেল। বিশেষ করে যেখানে পাক প্রধানমন্ত্রী গিলানি স্বয়ং ম্যাচ দেখতে এসেছিলেন। তখন বলা হচ্ছিল ক্রিকেট একটা কূটনৈতিক শৈত্য কাটিয়ে দিল। ইদানীংকালে নতুন করে পাকিস্তান-ভারত কোনও বৈরিতাও হয়নি।
তা হলে আইপিএল কর্তারা একটা শেষ চেষ্টা করলেন না কেন? তাঁরা কি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সঙ্গে কথা বলে দেখেছিলেন? সুন্দর রামন যিনি এখন কার্যত আইপিএলের ললিত মোদী, কোনও উত্তর দিতে অস্বীকার করলেন। “যা বলেছি সেটাই আমার মন্তব্য।” বোঝা গেল ২০১২-তেও পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা আইপিএলের স্পর্শকাতর প্রসঙ্গ হয়েই থাকলেন। |