গত সাত বছর ধরে হুগলি জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে রামমোহন-১ অঞ্চল পঞ্চায়েত বাগানের ‘ডাক’ করতো। বাগান থেকে প্রতি বছর গড়ে প্রায় চার লক্ষ টাকার আম বিক্রি হত। বহু দূর থেকেও অনেকে আসত এখানকার আম কিনতে। মরশুমে প্রায় পঁচিশ জন শ্রমিক দৈনিক মজুরিতে কাজ পেত তিন মাস। কিন্তু গত বছরে বাগানের ডাক হয়নি। ফলে কার্যত অনাথ হয়ে পড়েছে বাগান। একটু বড় হতেই স্থানীয় দুষ্কৃতিরা গাছের ডালপালা ভেঙে আম লুঠে নিয়ে যায়। গাছগুলির অবস্থাও ভাল নয়। বিভিন্ন ধরনের অর্কিড বাসা বেঁধেছে গাছের গায়ে। শুষে নিচ্ছে রস। পোকামাকড়ের উপদ্রব বেড়েছে। এখন আছে ৬০টি গাছ। শীঘ্রই গাছগুলির উপযুক্ত যত্ন না নিলে আরও গাছ নষ্ট হয়ে যাবে। বাগানকে কেন্দ্র করে একটা পিকনিক স্পট তৈরি করেছে জেলাপরিষদ। জন প্রতি পাঁচ টাকা প্রবেশ মূল্য। সাত জন কেয়ারটেকার দৈনিক মজুরিতে কাজ করেন। সারা দিনের কাজ, কোনও ছুটি নেই। সামান্য মজুরিতে তাঁরাও আর পেরে উঠছেন না।
দীর্ঘ দিন যাবৎ হুগলি জেলাপরিষদই এই বাগান দেখভাল করে। নিয়ম, তিন বছর অন্তর অন্তর বাগানের ডাক হবে নতুন করে। গত বছরই শেষ ডাকের মেয়াদ শেষ হয়েছে। মূলত রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য পঞ্চায়েতের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। যাঁরা এত দিন বাগান ডাকতেন, তাঁরা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির জন্য ডাক দেওয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এখনই উপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলে হারিয়ে যাবে এই ঐতিহ্যশালী বাগান। |
অন্য দিকে রামমোহনের স্মৃতিমন্দিরটির অবস্থাও বেশ খারাপ। এর নকশা এঁকেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ১৯১৬-তে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন রামমোহনের নাতনি হেমলতা ঠাকুর। ১৯৩৯-এ স্মৃতিসৌধের কাজ শেষ হয়। তার পর থেকে দীর্ঘ অবহেলা। এটি দেখাশোনার দায়িত্ব হুগলি জেলাপরিষদের। দরজা-জানলা ভাঙা, লোহার কড়িবরগায় মরচে, আলো নেই। ঘরের কোণে ঝুল। রামমোহনের জীবনীমূলক ছবিগুলো ধুলোয় ধূসর। স্মৃতিমন্দিরকে ঘিরে ইটের প্রাচীরটির প্রবেশপথের রেলিং ভাঙা। তাই সেখানে গরু-ছাগলের অবাধ বিচরণ। রাতের অন্ধকারে চলে অসামাজিক কাজকর্ম।
পূর্ববর্তী সরকারের তথ্য-সংস্কৃতি বিভাগ পাঁচ লক্ষ টাকা জেলাপরিষদকে দিয়েছিল স্মৃতিমন্দিরের মেরামতির জন্য। কথা ছিল, রাধানগরে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে রামমোহনের নামে যে মেলা হয়, তার আগেই কাজ শেষ করা হবে। অথচ টাকাটা সাত মাস পড়ে ছিল। গত মাসে কাজ শুরু হলেও চলছে ঢিমেতালে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি ছিল, এত পুরনো স্মৃতিমন্দিরটির ছাদ নতুন করে তৈরি করা হোক। কারণ মন্দিরের গায়ে গজিয়ে ওঠা বট-অশ্বত্থের চারার শিকড় চলে গেছে প্রতিটি দেওয়ালের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। যার জন্য দরকার অতিরিক্ত টাকা। কিন্তু তা না করে ওপর ওপরই ছাদ মেরামত করা হচ্ছে। ফলে বর্ষাকালে আবার ডালপালা মেলবে বট-অশ্বত্থের লুকোনো শাখা। অর্থাৎ এই টাকাটা পুরোটাই অপচয় হবে।
দেবাশিস শেঠ। খানাকুল, হুগলি
|