ডুয়ার্সের বন্ধ ঢেকলাপাড়া চা-বাগানের শ্রমিক-মৃত্যুর ঘটনায় রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে আদিবাসী বিকাশ পরিষদকে শনিবারই ‘পাশে’ চেয়েছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র। কিন্তু রবিবার ওই চা বাগানে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হল সূর্যকান্তবাবুকেই। ওই সিপিএম নেতাকে ঘিরে চা বাগানের ক্ষুব্ধ বাসিন্দা-শ্রমিকেরা প্রশ্ন তুললেন, “আপনারা এত দিন কোথায় ছিলেন?” কেউ কেউ বললেন, “এখন রাজনীতি করতে এসেছেন?”
২০০২-এর ২১ অগস্ট বীরপাড়ার কাছে ঢেকলাপাড়া বাগান বন্ধ করে দেন কর্তৃপক্ষ। কর্মহীন হয়ে পড়েন ৬০৪ জন শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারের লোকেরা। শ্রমিক নেতাদের দাবি, অনাহারজনিত নানা রোগে ভুগে গত ১০ বছরে ওই বাগানে শতাধিক শ্রমিক মারা গিয়েছেন। প্রাক্তন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গাঁধী ২০০৫-এ ওই এলাকারই এক বন্ধ চা বাগান পরিদর্শন করার পরে, ‘নড়েচড়ে বসে’ বামফ্রন্ট সরকার। শ্রমিকদের নানা প্রকল্পে কাজ দেওয়া হয়। আনা হয় সরকারি চিকিৎসা পরিষেবার আওতায়। |
স্থানীয় সূত্রের খবর, বামেদের বিরুদ্ধে ‘শ্রমিক-বঞ্চনা’র অভিযোগকে সামনে রেখে ওই এলাকায় গত তিন বছরে প্রভাব বাড়াতে থাকে ‘আদিবাসী বিকাশ পরিষদ’। তৃণমূল নেতৃত্বাধীন সরকার রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে, ওই বাগানে এক মাসে ন’জন শ্রমিক মারা গিয়েছেন বলে দাবি করতে থাকেন বামেরা। তাঁরা ওই ‘ঘটনায়’ রাজ্যের বিরুদ্ধে ‘চরম উদাসীনতা’র অভিযোগ তুলে সরবও হন। সূর্যকান্তবাবু এ দিন জেলার দুই বাম সাংসদ মনোহর তিরকে,মহেন্দ্র রায়, মাদারিহাট ও ধূপগুড়ির আরএসপি এবং সিপিএম বিধায়ক কুমারী কুজুর ও মমতা রায়, জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের সভাধিপতি দীপ্তি দত্ত, প্রাক্তন বিধায়ক নির্মল দাস প্রমুখকে নিয়ে ঢেকলাপাড়ায় যান। কিন্তু বাগানে ঢোকার পরেই তাঁদের ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন শ্রমিকেরা।
সূর্যকান্তবাবু বলতে থাকেন, “আমাদের সময় আমরা বন্ধ বাগানের শ্রমিকদের ভাতার ব্যবস্থা করেছি। বাগান খোলার চেষ্টাও করেছি।” কিন্তু তাঁর কথা শেষ হতে না হতেই ক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা সমস্বরে বলতে থাকেন, “এক সময় বাগানের সমস্ত শ্রমিক আরএসপি-র ইউনিয়ন করতেন। বাগান বন্ধ হওয়ার পরে বাম-নেতারা বাগানে আসা বন্ধ করেছেন। অনেক দুঃখে সব ছেড়েছুড়ে আমরা আদিবাসী বিকাশ পরিষদের ছাতার তলায় এসেছি।” শ্রমিকদের অভিযোগ, “বাম-জমানাতেই অনাহার, অপুষ্টিজনিত রোগে বাগানে একের পর এক শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা মারা যান। সে সময় সমস্ত মৃত্যু ডায়েরিয়া-জাতীয় রোগে বলে চালাতে চেষ্টা করেছিল রাজ্য সরকার। সূর্যকান্তবাবু তো তখন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন, কী করেছিলেন উনি?”
বাগানের শ্রমিক তথা আদিবাসী বিকাশ পরিষদের নেতা বসন্ত তাঁতির বক্তব্য, “এই বাগানে যখন একের পরে এক মানুষ মারা গিয়েছেন, তখন এই বাম-নেতারা বা তাঁদের সরকার মুখ লুকিয়ে ছিল। অভাবের কথা শুনে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব গত সাত মাসে তিন বার বাগানে এসেছেন। মানুষের অভাব-অভিযোগ শুনে নানা ব্যাপারে সাহায্য করেছেন। বাগান খোলার চেষ্টাও চালাচ্ছেন। এখন বাম-নেতারা রাজনীতি করতে আসছেন কোন মুখে? ওঁরা কি ভাবেন আমরা কিছু বুঝি না?” এ সব প্রশ্নের জবাব দেননি সূর্যকান্তবাবু। শ্রমিকদের ‘পাশে থাকার’ প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাগান ছাড়েন তিনি। |