ঝোড়ো ইনিংস খেলতে খেলতে চলতি মরসুমে দু’-দু’বার সে মাঠ ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিল। এবং আগের বারের মতোই ফের উদয় হয়ে দক্ষিণবঙ্গে আবার চার-ছয় হাঁকাতে শুরু করল শীত। সর্বনিম্ন তাপমাত্রাকে এক ঝটকায় নামিয়ে দিল প্রায় পাঁচ ডিগ্রি। নদিয়া, বাঁকুড়ায় তৈরি করে দিল শৈত্যপ্রবাহের পরিস্থিতি।
এটাই কি এ মরসুমে শীতের শেষ ইনিংস?
আবহবিদেরা এখনও নিশ্চিত নন। তাঁরা জানাচ্ছেন, জম্মু-কাশ্মীরের দিকে ফের একটা পশ্চিমী ঝঞ্ঝা এগিয়ে আসছে। সেটা কতটা শক্তিশালী হয়, তার উপরেই নির্ভর করছে শীত আর এক দফায় নিজের অস্তিত্ব জাহির করবে কি না। অভিজ্ঞতা বলছে, কলকাতায় কোনও কোনও বার ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নীচে নেমেছে।
অর্থাৎ শীতের স্থায়িত্ব নিয়ে আবহবিদেরা আশা ছাড়ছেন না। বস্তুত শনিবার বিকেলের পরে কনকনে ভাবটা মহানগরে যেমন জাঁকিয়ে বসেছে, তাতে ফের এক বার শীতের দাপুটে ব্যাটিংয়ের ইঙ্গিত পাচ্ছেন অনেকে। রবিবার সকালে ঠান্ডা ভালই মালুম হয়েছে। আকাশ পরিষ্কার থাকায় চড়চড়িয়ে রোদ উঠলেও বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে উত্তুরে হাওয়ার জোর। আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, সারা দিন রোদের তীব্রতা বেশি থাকার অর্থ, রাতে তাপমাত্রা আরও কমবে। শনিবার কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৬.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পারদে পতন প্রায় পাঁচ ডিগ্রি!
তবে রবিবার যে এমন কাণ্ড ঘটবে, শনিবার দুপুরের পরে উত্তুরে বাতাসের বহর দেখে আলিপুর আবহাওয়া দফতর পূর্বাভাস দিয়েই রেখেছিল। কলকাতার সঙ্গে তামাম দক্ষিণবঙ্গে তাপমাত্রা নেমেছে। দমদমে এ দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। নদিয়ার কৃষ্ণনগরে ৬ ধাপ নেমে হয়েছে ৭ ডিগ্রি। এ দিন সেখানে শৈত্যপ্রবাহ বয়েছে। আবহবিদদের পূর্বাভাস, আজ সোমবার কলকাতা ও আশপাশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আরও নামবে।
এ বার ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ ইস্তক গোটা উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারত জুড়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়েছে দফায় দফায়। কাশ্মীর দিয়ে এক-একটা পশ্চিমী ঝঞ্ঝা ঢুকেছে, আর ঠান্ডায় কুঁকড়ে গিয়েছে পুরো উত্তর ভারত। টানা তুষারপাতে কাশ্মীর-হিমাচল-উত্তরাখণ্ড বিপর্যস্ত। এমনকী, পঞ্জাবের পাঠানকোটেও বরফ পড়েছে, চল্লিশ বছর পরে। হরিয়ানা, পঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশের অনেক জায়গায় তো মাসখানেক ধরে সূর্যের মুখই দেখা যায়নি।
উত্তর ভারতের এই শীত-পরিস্থিতির জেরে মধ্য ভারতেও ডিসেম্বর থেকে দফায় দফায় শৈত্যপ্রবাহ বয়েছে। এ দিনও মধ্যপ্রদেশের বড় এলাকা ছিল শৈত্যপ্রবাহের কবলে। আবহবিদদের পূর্বাভাস, আজ, সোমবারও শৈত্যপ্রবাহ থাকবে। যার কামড় পূর্ব ভারতেও টের পাওয়া যাবে। কলকাতা-সহ গোটা দক্ষিণবঙ্গে শীতের তৃতীয় ইনিংস শুরুর মূলেও মধ্যপ্রদেশ থেকে আসা ওই হিমেল বাতাস।
এবং বঙ্গোপসাগর থেকে নতুন কোনও হাওয়া ঢুকে না-পড়লে আপাতত কয়েক দিন দক্ষিণবঙ্গে তারই দাপট বজায় থাকবে বলে জানিয়েছেন আবহবিদেরা। |