সরব রেজ্জাক, ক্ষিতিও
কৃষক-মৃত্যু চললে মুখ বন্ধ নয়, সাফ কথা বুদ্ধের
কের পর এক কৃষিজীবীর আত্মহত্যার ঘটনায় রাজ্য সরকারের সমালোচনায় সুর চড়ালেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বললেন, “আমরা চাই, চাষির মৃত্যু বন্ধ হোক। এ জন্য সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে। চাষি মারা যাবে, আর আমরা মুখ বুজে থাকব, এ চলতে পারে না!” তাঁর কথায়, “কৃষকেরাই এ রাজ্যের রাজনীতির মূল ভিত্তি। কৃষকদের দুর্দিন নেমে এলে আমাদেরও আন্দোলনে নামতে হবে।”
বস্তুত, নানা ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের ‘ভুল-ভ্রান্তি’র বহর দেখে আট মাসের মাথায় সুর চড়াতে শুরু করেছে প্রধান বিরোধী দল সিপিএম। দলের ২১ তম হুগলি জেলা সম্মেলন উপলক্ষে রবিবার রিষড়ার সমাবেশে বুদ্ধবাবুর ‘আক্রমণাত্মক’ ভঙ্গিও সেই কৌশলের স্পষ্ট ইঙ্গিত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সমালোচনার পাশাপাশিই আত্মসমালোচনাও উঠে এসেছে বুদ্ধবাবুর কথায়। এবং তা-ও সেই ‘দৃপ্ত’ ভঙ্গিতে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেছেন, “কিছু মানুষ আমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিলেন। তার কারণ খুঁজতে হবে। সরকার, পুরসভা, পঞ্চায়েতে কী ভুল করেছি, তা শোধরাতে হবে। কিছু ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি হয়েছিল। মানুষ সে সব ভাল ভাবে নেয়নি। সব ভুল ধুয়ে-মুছে সাফ করে দিতে হবে!”
রিষড়ায় দলীয় সম্মেলনে। রবিবার দীপঙ্কর দের তোলা ছবি।
রিষড়ার পোড়ামাঠে এ দিনের সমাবেশে বুদ্ধবাবু বলেন, “ধান কেটে কৃষক ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কোথায় বিক্রি হবে, জানেন না। সারের কালোবাজারি হচ্ছে। রাজ্যে ২৪ জন কৃষিজীবী ইতিমধ্যেই আত্মহত্যা করেছেন। সব থেকে বেশি আত্মহত্যা করেছেন বর্ধমানে। ধানের ফলন ভাল হল, অথচ বিক্রি হল না। প্রচুর আলু এখনও হিমঘরে। নতুন আলুর কী হবে, কী দাম পাবেন চাষিরা, কেউ জানে না!” দিন কয়েক আগেই এই জেলারই হরিপালে আত্মঘাতী হন কৃষিজীবী গণেশ দুর্লভ। তাঁর নাম উল্লেখ করে বুদ্ধবাবু এ দিন বলেন, “সারের কালোবাজারি হচ্ছে। এ দিকে সরকার বলছে, কিছুই জানে না! এমন চললে চাষি তো মরে যাবে! আমাদের সময়ে এ সব হত না!”
কৃষকদের আত্মহত্যা প্রসঙ্গে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় আবার বীরভূমের মহম্মদবাজারে এ দিনই বলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ ব্যাপারে যা বলেছেন, তা যথার্থ। সিপিএম অযথা জলঘোলা করছে! তবে একটা প্রশ্ন, সিঙ্গুর- নন্দীগ্রাম-নেতাই নিয়ে সিপিএম কী করেছে, তার জবাব দিক!” পার্থবাবুর কথায়, “মমতা যখন জমি নিয়ে আন্দোলন করছিলেন, ২৬ দিন অনশন করলেন, যে সব বন্ধুরা এখন কুমিরের কান্না কাঁদছেন, তখন তাঁরা কোথায় ছিলেন?”
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, সিপিএমের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বুদ্ধবাবুর বিপরীত মেরুর বাসিন্দা বলে পরিচিত প্রাক্তন ভূমিমন্ত্রী আব্দুর রেজ্জাক মোল্লাও এ দিন কৃষকদের আত্মহত্যা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতার মন্তব্যকে তীব্র কটাক্ষ করেছেন। কৃষকেরা আত্মহত্যা করছেন বলে মুখ্যমন্ত্রী বা সরকার মানতে নারাজ। একটি অনুষ্ঠানে এ দিন এই নিয়ে প্রশ্নের জবাবে রেজ্জাক বলেন, “দেনার দায়ে চাষিরা আত্মহত্যা করছে বলে সরকার মানতে চাইছে না। আমি তো রোগের কথা (মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, কৃষকদের ‘পার্সোনাল রোগ’) জানি না। তা হলে হয়তো কৃমি খুব বিরক্ত করছিল বলে চাষিরা আত্মহত্যা করছে!”
দলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্মেলন উপলক্ষে এ দিনই ডেবরার বালিচকে প্রাক্তন মন্ত্রী তথা আরএসপি-র কার্যনির্বাহী রাজ্য সম্পাদক ক্ষিতি গোস্বামী বলেছেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেকে তো কৃষক-দরদি হিসাবে তুলে ধরছিলেন। তা হলে এখন কৃষকদের কথা ভাবছেন না কেন?” তাঁর বক্তব্য, রাজ্য সরকার যাতে কৃষকদের স্বার্থে পদক্ষেপ করে, তার জন্য তাঁরা আন্দোলন সংগঠিত করবেন।
রিষড়ার সমাবেশে এ দিন বাম সরকারের কৃষিনীতির সঙ্গে বর্তমান সরকারের তুলনা টানেন বুদ্ধবাবু। তাঁর দাবি, বাম আমলে কুইন্ট্যাল প্রতি পাটের দর দেওয়া হত ৪ হাজার টাকা। তৃণমূল সরকার দাম দিচ্ছে ২ হাজার টাকা। বুদ্ধবাবুর কটাক্ষ, “এ ক’মাসেই এই হাল!” সরকার সরাসরি ধান না-কিনলে রেশনের কী হবে, প্রশ্ন তোলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী।
সিঙ্গুরের জেলায় দাঁড়িয়ে প্রত্যাশিত ভাবেই সিঙ্গুর নিয়ে মমতার সরকারকে কটাক্ষ করেছেন বুদ্ধবাবু। তাঁর কথায়, “সিঙ্গুরে আমরা কী করতে চেয়েছিলাম, আপনারা জানেন। কিন্তু এর ভবিষ্যৎ কী, কেউ জানে না! ওখানে না হয়েছে চাষবাস, না হয়েছে কারখানা। এটাই কি রাজ্যের ভবিতব্য?” বর্তমান সরকারের শিল্পনীতির সমালোচনা করে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, বাম আমলে ২০০১-২০১০ সালের মধ্যে যেখানে রাজ্যে ৯ হাজার কোটি টাকা লগ্নি হয়েছিল, সেখানে নতুন সরকার আসার পরে আট মাস কেটে গেলেও কোনও লগ্নিই হয়নি।
তৃণমূল নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে আইন-শৃঙ্খলার ‘অবনতি’ নিয়েও সরব হয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন প্রশাসনিক প্রধান। তাঁর মতে, ‘অপরাধ’ বাড়ার কারণ “অপরাধীরা বুঝে গিয়েছে, আমাদের সরকার এসেছে!” তবে তাঁরা যে ‘বসে বসে’ মার খাবেন না, সে কথাও স্পষ্ট বলেছেন বুদ্ধবাবু।
সুহৃদ দত্ত, অরূপ বসুমল্লিক, মোজ্জামেল হোসেন, গোপাল কচ-সহ একাধিক ‘প্রভাবশালী’ সিপিএম নেতার নাম হুগলির বিভিন্ন জোনাল কমিটি থেকে বাদ পড়েছে। বুদ্ধবাবু এ দিন বলেন, “নেতা হব বললেই নেতা হওয়া যায় না। আলোচনা করে এ সব ঠিক হবে। আমরা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিশ্বাস করি।” এই সূত্রেই তৃণমূলের নাম না-করে তাঁর কটাক্ষ, “অন্য দলে এ সব হয় না। এক জন যা বলেন, তা-ই হয়!”
সিপিএমের একাংশের মতে, এ দিন সমাবেশ যে মাঠে হয়েছে, তা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর সাপেক্ষে তুলনায় ছোট। কিন্তু তৃণমূল নেত্রীর সিঙ্গুর আন্দোলনের সময় থেকে যে ভাবে সিপিএমের পায়ের তলার জমি সরেছে এই জেলায়, সে কথা মাথায় রেখেই এ দিন ‘ছোট মাঠে’ সভা করার সিদ্ধান্ত হয়। পুলিশের হিসেবে, এ দিন হাজার পাঁচেক মানুষের জমায়েত হয়েছিল বুদ্ধবাবুর সভায়। যা দেখে ‘সন্তুষ্ট’ বুদ্ধবাবু শুরুতেই বলেন, “জমায়েত কী রকম হবে, ভাবছিলাম। এখন তো দেখছি জি টি রোড বন্ধ হয়ে গিয়েছে!” প্রসঙ্গত, এ দিন জি টি রোড সংলগ্ন ওই মাঠে ওই সমাবেশের জেরে বেলা সওয়া ৩টে থেকে ঘণ্টাখানেকের জন্য যান চলাচল কার্যত স্তব্ধ হয়ে পড়ে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.