|
|
|
|
|
|
|
বিষয়: ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্য |
আমি এখন মণিপুরে। আমার খুব প্রিয় জায়গা। এখানকার শীতে ভেজা রোদ্দুর গায়ে মেখে, স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে মেলামেশা করে কয়েকটা দিন কাটাব। প্রত্যেকটা দিনই অবশ্য কাজে একেবারে ঠাসা, কিন্তু তবুও এক বার কেইবুল লামজাও ন্যাশনাল পার্কে ঘুরে আসার চেষ্টা করব। একটা পৃথিবীর একমাত্র ভাসমান ন্যাশনাল পার্ক। খুবই স্পেশাল, নিঃসন্দেহে।
ভারতের উত্তর-পূর্ব প্রান্তের রাজ্যগুলি সব সময়ই আমার মনের খুব কাছাকাছি থাকে। তাই এখানে ফিরে আসতে পেরে খুব ভাল লাগছে। যখন প্রথম কুইজমাস্টার হিসেবে শো করতে আরম্ভ করি, তখন বহু বার এই ‘আট বোন’-এর রাজ্যগুলিতে এসেছি। বস্তুত, কয়েক বছর আগে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে টেলিভিশনের জন্য একটা ‘নর্থ ইস্ট কুইজ’ করেছিলাম। শিলং-এর কাছে বড়পানি লেকের ধারে এই কুইজের ১৪টা এপিসোডের শুটিং হয়। মেঘালয়ের অপূর্ব পরিবেশে একটা গেস্টহাউসে দিন সাতেক ছিলাম তখন।
নাগাল্যান্ড আর মিজোরাম অপূর্ব সুন্দর। সিকিমও! যদিও আমি গ্যাংটক ছাড়া সিকিমের আর কিছু এখনও দেখিনি।
উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলির মধ্যে অসমেই আমি সবচেয়ে বেশি কুইজ করিয়েছি। গুয়াহাটিতে প্রথম ওপেন কুইজ করেছিলাম সেই ১৯৮৮ সালে। আরিব্বাস, চ-ব্বি-শ বছর হয়ে গেল! মনে আছে, সে দিন এক কাণ্ড হয়েছিল। কুইজের প্রিলিমিনারি রাউন্ড চলছে, হঠাৎ পায়ের নীচে মাটি কেপে উঠল। এক ছোট ভূমিকম্প... কিন্তু সে অন্য গল্প।
আপাতত মণিপুর থেকে সুপ্রভাত জানাই তোমাদের। |
|
১৯৮৭ সালে মিজোরাম রাজ্যটির জন্ম। এটি ভারতের ২৩তম রাজ্য। এই রাজ্যের সরকারি ভাষা মিজো, কিন্তু এখানে প্রায় সকলেই ইংরেজি বোঝেন, বলেন। মিশনারিরা একটি মিজো লিপিও তৈরি করেছিলেন। মূলত রোমান লিপির ওপর ভিত্তি করে, মিজো ভাষার উচ্চারণগত বৈশিষ্ট্যগুলিকে মিলিয়ে তৈরি হয় এই লিপি, এবং সেই অনুযায়ী বানানবিধি। মিজো বর্ণমালায় অক্ষরের সংখ্যা ২৫। |
|
|
জানো কি |
• ১৮৯১ সালের অ্যাংলো-মণিপুরি যুদ্ধের পর ব্রিটিশরা মণিপুরকে ব্রিটিশ ভারতের সঙ্গে যোগ করে নেয়। দেশীয় রাজা-শাসিত মণিপুর ১৯৪৯ সালের ১৫ অক্টোবর স্বাধীন ভারতে যোগ দেয়। ১৯৭২ সালে মণিপুর একটি সম্পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা পায়। মণিপুর সাংস্কৃতিক ভাবে অতি সমৃদ্ধ। এই রাজ্যের নামেই একটি ধ্রুপদী নৃত্যশৈলী আছে মণিপুরী নাচ। নাচের এই আঙ্গিকটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রচেষ্টায় সর্বভারতীয় পরিচিতি পায়। তিনি গুরু বুধিমন্ত্র সিংহ, গুরু নব কুমার এবং আরও কয়েক জন খ্যাতনামা নৃত্য প্রশিক্ষককে শান্তিনিকেতনে সাদর আমন্ত্রণ জানান। তার পর, শান্তিনিকেতন থেকেই নাচের এই শৈলী ক্রমে জনপ্রিয় হতে থাকে। |
ইন্ডিয়ান রাইনো |
অসম বললেই চায়ের কথা মনে পড়ে। এই রাজ্যটি কিন্তু পৃথিবীর সবচেয়ে জীববৈচিত্র্য-সমৃদ্ধ অঞ্চলগুলির একটি। এখানে নিরক্ষীয় বৃষ্টি-অরণ্য (ট্রপিকাল রেন ফরেস্ট), পর্ণমোচী অরণ্য, নদী-পার্শ্ববর্তী তৃণভূমি, বাঁশঝাড় তো আছেই, বহু জলজ বাস্তুতন্ত্রও আছে। অসমের কাজিরাঙা এবং মানস ন্যাশনাল পার্ক ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেড সাইট হিসেবে স্বীকৃত। এগুলি এশীয় গণ্ডারের বাসস্থল। তা ছাড়াও রয়েছে বহু বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী। |
|
• ১৯৭২ সালে অসমের খাসি, জয়ন্তিয়া এবং গারো পাহাড়গুলিকে নিয়ে একটি পৃথক রাজ্যের জন্ম হয়। তার নাম মেঘালয়। মজার ব্যাপার, এই রাজ্য ভাগ পর্যন্ত শিলং ছিল অসমের রাজধানী (১৮৭৪ সাল থেকে)। মেঘালয়ে প্রচুর বৃষ্টি হয়। রাজ্যটি পৃথিবীর অন্যতম বেশি বৃষ্টির এলাকা। এখানে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ গড়ে ২৬০০ থেকে ৪০০০ মিলিমিটার। সোহরা (চেরাপুঞ্জি)-তে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১২,০০০ মিলিমিটারেরও বেশি।
• অরুণাচল প্রদেশের ভূপ্রকৃতি পার্বত্য। আর তাই, এই রাজ্যটিতেই ভারতের সবচেয়ে বেশি জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। বছর তিন-চারেক আগে প্রায় ৪০টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি করার পরিকল্পনা হয়। তার মধ্যে বেশ কয়েকটির কাজ ইতিমধ্যেই আরম্ভ হয়ে গিয়েছে।
|
নাগাল্যান্ড তার উদ্ভিদ ও প্রাণী জগতের বিপুল বৈচিত্র্যের জন্য খ্যাত। এই রাজ্যের ছ’ভাগের এক ভাগ ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অরণ্যে ঢাকা। নাগাল্যান্ডের ‘জাতীয়’ পাখি ব্লিথস ট্রাগোপান একটি বিপন্ন প্রজাতির পাখি। গোটা দুনিয়ায় মোট ২৫০০ ব্লিথস ট্রাগোপান আছে, তার মধ্যে ১০০০টি রয়েছে নাগাল্যান্ডেই। |
ব্লিথস ট্রাগোপান |
|
• প্রাচীন হিন্দু গ্রন্থে প্রায়শই সিকিমকে ‘ইন্দ্রের উদ্যান’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইংরেজরা দখল করার আগে বহু বছর ধরে সিকিম একটি স্বাধীন দেশ ছিল। বস্তুত, ১৯৪৭ সালে ভারতের সঙ্গে যোগ দেওয়া হবে কি না, তা ঠিক করার জন্য যখন সিকিমে গণভোট নেওয়া হয়, তখন যোগ দেওয়ার প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যাত হয়। অনেক পরে, ১৯৭৫ সালে সিকিম ভারতে যোগ দেয়। ২০০৬ সালে ভারত ও চিনের ব্যবসায়ীদের জন্য ঐতিহাসিক নাথু লা (লা মানে তিব্বতি ভাষায় পাস বা গিরিপথ, কাজেই ‘নাথু লা পাস’ কথাটি ঠিক নয়) খুলে দেওয়া হয়। পথটি প্রাচীন ‘সিল্ক রুট’-এর অংশ।
• ব্রিটিশরা যখন ভারত শাসন করত, সেই সময় ত্রিপুরা রাজ্যের নাম ছিল ‘হিল টিপেরা’। এই রাজ্যটি বহু প্রাচীন, এবং বহু রাজপরিবার এই রাজ্যটি শাসন করেছে। উত্তর-পূর্ব ভারতে এখনও রেলপথ নেই। এই অঞ্চলে আগরতলাই শেষ রাজ্য-রাজধানী, যেখানে রেল যোগাযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গেও রেলপথ গড়ে তোলার আলোচনা চলছে। |
|
বলো তো |
১ উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি রাজ্যে কমপক্ষে ত্রিশটি, সম্ভবত পঞ্চাশটি, ভাষা আছে এবং অসংখ্য আঞ্চলিক উপভাষা রয়েছে। কোন রাজ্যের কথা বলছি?
২ মণিপুরে গিয়ে তুমি যদি সাগোল কাঙ্গজেই-তে যোগ দাও, তা হলে তোমায় কী করতে হবে?
৩ উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি রাজ্যে এক সনাতন মাতৃতান্ত্রিক প্রথা প্রচলিত আছে। সেখানে পরিবারের কনিষ্ঠতম কন্যা সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয় এবং বৃদ্ধ মা-বাবা ও অবিবাহিত ভাইবোনদের দেখভাল করে। কোন রাজ্য?
৪ নাগাল্যান্ডে ১৯৬৭ সালে কোন ভাষাটি রাজ্যের সরকারি ভাষার স্বীকৃতি পায়? ৫ দেশের ক্ষুদ্রতম হাইকোর্টটি কোন রাজ্যে রয়েছে?
৬ ভারতে সাক্ষরতার হারে এক নম্বর রাজ্য কেরল। দ্বিতীয় স্থানে উত্তর-পূর্ব ভারতের কোন রাজ্যটি রয়েছে? |
|
উত্তর |
১) অরুণাচল প্রদেশ, ২) পোলো খেলতে হবে, ৩) মেঘালয়, ৪) ইংরেজি, ৫) সিকিম, ৬) মিজোরাম। |
|
|
|
|
|
|