নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিল দীর্ঘ দিন ধরেই। স্থানীয় মানুষের আবেদন-নিবেদনেও সারানো হয়নি বছর পঞ্চাশের পুরনো লালপোল সেতু। শেষমেষ এলাকাবাসীর আশঙ্কা সত্যি করেই ভেঙে পড়ল সেটি। সেতুর উপরে সে সময়ে পার হচ্ছিল ইট-বোঝাই একটি লরি। সেটি পড়ে খালের জলে। চালক-খালাসিকে উদ্ধার করেন গ্রামবাসীরা। সামান্য চোট পেয়েছেন তাঁরা। রবিবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনার হাড়োয়ার সোনাপুকুর-শঙ্করপুর পঞ্চায়েতের কুলগাছি খালের উপরে। সেতুটি দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ের সঙ্গে যুক্ত করেছে হাড়োয়াকে। এটি বানিয়েছিল ক্যানাল ইরিগেশন দফতর। রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও তাদের। ঘটনার খবর পেয়ে সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইঞা বলেন, “দফতরের সচিবকে নির্দেশ দিয়েছি, অবিলম্বে যেন ওই এলাকায় বাস্তুকারদের পাঠানো হয়। দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।” |
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, লালপোল সেতুটি লোহার বিমের উপরে কংক্রিটের তৈরি। প্রায় ১৩০ ফুট লম্বা। চওড়ায় ২০-২২ ফুট। হাড়োয়া ও ভাঙড়ের মধ্যে ট্রেকার, ভ্যান, অটো-সহ নানা গাড়ি যাতায়াত করে এটির উপর দিয়ে। বড় ট্রাক-লরিও আসে মালপত্র নিয়ে। দু’দিকের বেশ কিছু গ্রামের মানুষ প্রতি দিন এর উপর দিয়ে চলাচল করেন। কিন্তু মেরামতির অভাবে সেতুটির জীর্ণ দশা।
স্থানীয় পঞ্চায়েতের প্রধান হান্নান মোল্লা বলেন, “সেতু সারাতে বহু বার আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।” প্রধান জানান, বাসিন্দাদের পারাপারের জন্য আপাতত বাঁশ দিয়ে অস্থায়ী একটি সেতু তৈরি করে দেওয়া হবে।
কী ভাবে ঘটল দুঘর্টনা?
লরির চালক সরিফুল সর্দার ও খালাসি বুল্লা মোল্লারা জানিয়েছেন, তাঁরা এ দিন ইট নিয়ে যাচ্ছিলেন ভাঙড়ের দিকে। উল্টো দিক থেকে একটি বালি-বোঝাই লরি দেখে দাঁড়িয়ে যান তাঁরা। সেতুর অবস্থা যে ভাল নয়, তা জানতেন সরিফুল। ওই লরিটি পেরিয়ে গেলে তাঁরা ধীর গতিতে লরি নিয়ে সেতু পেরোচ্ছিলেন। প্রায় পৌঁছেও গিয়েছিলেন। সামনের চাকা সেতু পেরোতে না পেরোতেই হঠাৎ সেতুটি দুলে ওঠে। তারপরেই একটা শব্দ। সেতু ভেঙে ফুট কুড়ি নীচে জলে পড়ে লরি। তবে পাড়ের কাছাকাছি এসে যাওয়ায় লরিটি জলে ডুবে যায়নি। সামান্য চোট পান চালক-খালাসি। স্থানীয় বাসিন্দা লালমিঞা মোল্লা, হাজি মহম্মদ মোল্লা, আরশাদ মোল্লা-সহ অনেকে ছুটে আসেন। তাঁরাই উদ্ধার করেন চালক-খালাসিকে।
স্থানীয় মানুষের কাছে এই সেতুর গুরুত্ব খুবই বেশি। সেতুর এক দিকে হাড়োয়ার ঝুঝুরগাছা। ভাঙড়ের দিকে কুলগাছি এলাকা। হাড়োয়ার দিকে এই সেতু পেরিয়ে হাড়োয়া সেতুতে পৌঁছনো যায়। ওই সেতু পেরিয়ে যেতে হয় হাড়োয়া বাজার, হাসপাতাল-সহ বহু জায়গায়। কলকাতার সঙ্গেও যোগাযোগ হয় এই সেতু পেরিয়ে। ভাঙড়ের দিক দিয়ে ইস্টান বাইপাসগামী কুলটি রোডে ওঠা যায় এই সেতু পেরিয়ে। সেতুর দু’পারের রাস্তাও খুবই খারাপ। তবু বহু মানুষকে নানা প্রয়োজনে প্রতি দিন যাতায়াত করতে হয় এই এলাকা দিয়ে।
স্থানীয় বাসিন্দা লালমিঞা, হাজি মহম্মদেরা বলেন, “এই এলাকার বহু মানুষ মাছের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের নিয়মিত কলকাতা বা অন্য আরও জায়গায় যেতে হয়। এই সেতুটিই একমাত্র ভরসা। এখন কী হবে বুঝতে পারছি না।” |