ডাকাতি রুখতে গিয়ে গুলিতে নিহত ব্যবসায়ী
বাড়িতে ঢুকে পড়া সশস্ত্র ডাকাতদের বাধা দিতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেলেন এক ব্যবসায়ী। বন্দুকের বাঁটের আঘাতে গুরুতর জখম হয়েছেন তাঁর দাদা। শনিবার রাত দু’টো নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ শহরতলির বারুইপুরের কাজিপাড়া এলাকার হরিহরপুরে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত ব্যবসায়ীর নাম সিরাজুল মোল্লা (৪৪)।
দুষ্কৃতীদের গুলিতে সিরাজুলের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই রবিবার সকালে ওই এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। বারুইপুর-আমতলা এবং বারুইপুর-উস্তি রোডে শুরু হয় অবরোধ। ঘেরাও হয় স্থানীয় থানাও। শেষমেশ পুলিশকর্তারা এলাকায় গিয়ে দোষীদের গ্রেফতার করা হবে বলে আশ্বাস দেওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) কঙ্করপ্রসাদ বারুই জানান, ব্যবসায়ী খুনের ঘটনায় তিন জনকে আটক করা হয়েছে। পুলিশের হাতে আটক সুলতান নামে এক জনের বাড়িতে ভাঙচুর চালায় উত্তেজিত জনতা।

সিরাজুল মোল্লা।
ডাকাতির খবর পেয়ে এ দিন কাজিপাড়ায় যান বারুইপুর (পশ্চিম) কেন্দ্রের বিধায়ক তথা বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কাছে স্থানীয় থানার পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা এবং টহলদারির অভাবের অভিযোগ করা হয়। এ বিষয়ে জেলার উচ্চপদস্থ পুলিশকর্তাদের সঙ্গে তিনি আলোচনা করবেন বলে জানান বিমানবাবু।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কাজিপাড়ায় রাস্তার লাগোয়া বাড়ি সিরাজুলের। জ্যাম-জেলি তৈরির দু’টি কারখানা রয়েছে তাঁর। একটি কাজিপাড়ায়, অন্যটি বারুইপুর বাইপাস লাগোয়া খোদাবাজারে। পুলিশ জানায়, শনিবার রাতে মোটরবাইকে চেপে জনা দশেক সশস্ত্র দুষ্কৃতী সিরাজুলের বাড়ির সামনে যায়। একতলায় লোহার গেট ভেঙে ভিতরে ঢুকে পড়ে তাদের কয়েক জন। দোতলায় ঘুমিয়ে ছিলেন ওই পরিবারের সকলে। প্রথমে দুষ্কৃতীরা ঢোকে সিরাজুলের দাদার দুই মেয়ে, সিমরন এবং শাহিনার ঘরে। সিমরনের কথায়, “একতলায় দরজা ভাঙার শব্দে মাঝরাতে আচমকা ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। তার পরেই হুড়মুড়িয়ে ঘরে ঢুকে পড়ে পাঁচ-ছয় জন। বন্দুক দেখিয়ে আলমারির চাবি চায়। আমাদের মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে গলার হারও খুলে নেয় ওরা।” ওই তরুণী জানান, দুষ্কৃতীরা বাংলায় কথা বলছিল। মাঙ্কি-ক্যাপে মুখ ঢাকা ছিল সকলের। এক জন তাঁকে জিজ্ঞাসা করে, ‘কাকা (সিরাজুল) কোন ঘরে শুয়েছে?’
ব্যবসায়ীর মৃত্যুতে এলাকাবাসীর বিক্ষোভ।
তদন্তকারীরা জেনেছেন, সিমরনদের ঘরে ‘কাজ’ শেষ করে পাশের ঘরে যায় ডাকাতেরা। সেখানে ছিলেন সিরাজুলের দাদা শামসুর এবং তাঁর স্ত্রী। ঘরের আলো জ্বালিয়ে একই কায়দায় তাঁদের কাছে আলমারির চাবি চাওয়া হয়। দিতে রাজি হননি শামসুর। কিন্তু বন্দুকের বাঁট দিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করে চাবি ছিনিয়ে নেয় দুষ্কৃতীরা। এর পরেই তারা যায় সিরাজুলের ঘরে। সেখানে স্ত্রী রেহিনা বেগমের সঙ্গে ঘুমিয়ে ছিলেন ওই ব্যবসায়ী। পুলিশ জানিয়েছে, ডাকাতেরা আলমারির চাবি চাইতেই রুখে দাঁড়ান সিরাজুল। তখনই তাঁর বুকে গুলি চালিয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। পরে রেহিনার কাছ থেকে চাবি ছিনিয়ে বিনা বাধায় লুঠপাট চালানোর পরে সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে চলে যায় ডাকাতেরা। রক্তাক্ত অবস্থায় সিরাজুল এবং শামসুরকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সিরাজুলকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।
পুলিশ জানায়, আট-দশ জনের একটি ডাকাতদল হানা দিয়েছিল। তাদের মধ্যে পাঁচ-ছয় জন ঢুকেছিল সিরাজুলের বাড়িতে। তদন্তকারীদের অনুমান, মাঙ্কি-ক্যাপ পড়ে থাকলেও দুষ্কৃতীদের মধ্যে কাউকে চিনে ফেলেছিলেন সিরাজুল। সেই কারণেই সম্ভবত তাঁকে গুলি করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, ওই ঘটনায় আটক সুলতানের বাড়ি সিরাজুলের খোদাবাজারের কারখানার কাছে।

ছবি: পিন্টু মণ্ডল



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.