জেলে বসেই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন বন্দিরা। দমদম, আলিপুর ও প্রেসিডেন্সি জেলে ওই সুবিধা চালু হয়েছে। রাজ্যের প্রতিটি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে সঙ্গে আগামী দিন বহরমপুর সংশোধনাগারেও ওই ব্যবস্থা চালু হবে বলে জানান কারামন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তী।
বহরমপুরের কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের আবাসিকদের ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধন উপলক্ষে রবিবার সকালে বহরমপুরে এসে পৌঁছন তিনি। অনুষ্ঠান শেষে সংশোধনাগার প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে শঙ্করবাবু বলেন, “এ ব্যাপারে বেসরকারি এক মোবাইল সংস্থার সঙ্গে কথা চলছে। এই মুহূর্তে দমদম, আলিপুর ও প্রেসিডেন্সি জেলের বন্দিরা সপ্তাহে এক দিন করে মাসে ৪ দিন ১০ মিনিট করে ৪০ মিনিট পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পান। আগামী দিন বহরমপুর-সহ রাজ্যের সমস্ত কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের ওই টেলিফোন ব্যবস্থা চালু হবে।” |
নতুন রাজ্য সরকারের কারামন্ত্রী হিসেবে শঙ্করবাবু এদিন বহরমপুর সংশোধনাগার ঘুরেও দেখেন। সেই সঙ্গে সংশোধনাগারের সুবিধা-অসুবিধা নিয়েও আধিকারিকদের সঙ্গে এদিন তিনি বৈঠক করেন। এর আগে ২০১০ সালের ৯ অক্টোবর ‘তল্লাশির নামে অত্যাচার ও নিম্নমানের খাবার পরিবেশন’-এর প্রতিবাদে বহরমপুর সংশোধনাগারের কয়েদি ও বিচারাধীন কয়েকশো বন্দি বিক্ষোভ দেখায়। সেই সঙ্গে তাঁরা অনশন করার কথাও জানায়। জেল-কুঠুরি থেকে ছাড়া পেয়ে জেলের ভেতরের পূর্ব দিকের পাঁচিলের দিকে এসে তারা বিক্ষোভের কারণ চিরকুটে লিখে তা থালায় আটকে পাঁচিলের বাইরে দিয়ে ছুড়ে দেয়। ওই ঘটনা প্রসঙ্গে কারামন্ত্রী বলেন, “ওই ঘটনার পরেই ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। ঘটনার তদন্ত চলাকালীন ওই ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করব না।”
কারামন্ত্রী বলেন, “নাটক, নৃত্যনাট্য, গানবাজনা, যাত্রাপালার অভিনয়ের মাধ্যমে আবাসিকদের মধ্যে সাংস্কৃতিক চর্চার বোধ গড়ে তোলা হচ্ছে। এ ছাড়াও আবাসিকদের পড়াশোনার সুবিধার জন্য ইগনু’র সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের একটি শাখা সংশোধনাগারে খোলার কথা চলছে।” আবাসিকদের শারীরিক সক্ষমতা বাড়াতে সংশোধনাগারের মধ্যে বিভিন্ন খেলাধুলোর আয়োজন রয়েছে। এর পাশাপাশি আন্তঃসংশোধনাগার ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজনের ভাবনা-চিন্তা করছে চলছে বলে শঙ্করবাবু জানান। তাঁর কথায়, “সম্প্রতি মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে আবাসিকদের নিয়ে ফুটবল প্রতিযোগিতা চলছে। এ ছাড়াও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে।” বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ হিসেবে পুতুল তৈরি, কাঠের কাজ, প্রশিক্ষণ এবং কম্পিউটার সারাই, দর্জির কাজ শেখানোর মধ্যে দিয়ে আবাসিকদের স্বনির্ভর করে তোলার কাজ চলছে সংশোধনাগারে। শঙ্করবাবু বলেন, “সংশোধনাগার থেকে বেরিয়ে আবাসিকেরা সমাজের মূল স্রোতে ফিরে গিয়ে তাঁদের যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ খুঁজে নিতে পারেন।” |
• চেষ্টা চলছে যাতে জেল থেকেই বাড়িতে ফোন করে কথা বলতে পারেন বন্দিরা।
• আন্তঃসংশোধনাগার ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে।
• বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা বাড়ানোর উদ্যোগ। |
|
এর আগে ২০০৬ সালের ২৬ নভেম্বর বহরমপুর সংশোধনাগারের আবাসিকরা রবীন্দ্রনাথের ‘তাসের দেশ’ নাটকে অভিনয় করেন। কলকাতা রবীন্দ্রসদন, দিল্লি, শান্তিনিকেতনের পাশাপাশি ওই নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে আলিপুর, প্রেসিডেন্সি, মালদহ, বালুরঘাট সংশোধনাগারের মধ্যে।
এর পরেই ২০০৯ সালে তাঁরা রবীন্দ্রনাথের ‘তোতা কাহিনি’ নাটক মঞ্চস্থ করে। ওই দু’টি নাটকের পরিচালক প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “গত এক বছর ধরে রক্তকরবীর মহড়া চলেছে।” তিনি বলেন, “কিন্তু নাটক মঞ্চস্থ হওয়ার আগে কোনও কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। সেই সঙ্গে দীর্ঘ দিন তাসের দেশ ও তোতা কাহিনি নাটক দু’টিও কোথাও অভিনীত হয়নি। এদিন কারামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ওই দু’টি নাটক পরিবেশনের সঙ্গে রক্তকরবী মঞ্চস্থের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের বন্দোবস্ত করার আবেদন জানিয়েছি।” |