দলের এক কর্মীর বৌভাতে উপস্থিত হলেন স্বয়ং কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। রবিবার দুপুরে তিনি সরাসরি হাজির হলেন কৃষ্ণশাইল গ্রামে সেই কর্মীর বাড়িতে।
বেলা তখন সাড়ে ১২টা। লোকজন ভর্তি অনুষ্ঠান বাড়িতে। জমজমাট আয়োজনের মধ্যেই সেখালিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান দিল মহম্মদ বিশ্বাসের খোদ প্রণববাবু নিজেই উপস্থিত থাকায় ভিড়ের চাপে বাড়িতে পা রাখা দায়। বিয়ে বাড়িতে সেজেগুজে তখন নবদম্পতি ব্যস্ত অতিথি আপ্যায়নে। গাড়ি থেকে নেমে প্রণববাবু সোজা চলে গেলেন অন্দরে। প্রণববাবুর হাতে তুলে দিলেন পুষ্পতবক। নববধূর হাতে উপহারের খামটি তুলে দিয়ে মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করলেন জঙ্গিপুরের সাংসদ। হরেক রকম খাবারের আয়োজন থাকলেও তুলে নিলেন মাত্র কয়েকটি কাজু বাদাম। |
সাধারণ মানুষের সঙ্গে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী যে এই ভাবে মিশে যেতে পারেন, তা জানা ছিল জঙ্গিপুরের। এমনকী ভোটের ফল বেরোনোর দিনও প্রণববাবুকে পাওয়া গিয়েছিল একেবারেই আটপৌরে মেজাজে। তাঁকে দেখা গিয়েছে মুড়ি-বাদাম খেতে। সঙ্গে লাল চা। কিন্তু পাশাপাশি, এটাও ঠিক, প্রণববাবুকে দেখা যায় দেশি-বিদেশি রাষ্ট্রনায়কদের সঙ্গে। তাঁর দিন কাটে এমন সব জায়গায়, যা কৃষ্ণশাইলের মতো গ্রামের লোক যেখানে সহজে যেতে পারেন না। গ্রামের ফজলুর রহমান বলেন, “পার্লামেন্ট বাড়িটাই কখনও দেখিনি। দিল্লিও কখনও যাইনি। কিন্তু সেখানেই বাজেট পেশ করেন আমাদের নির্বাচিত সাংসদ।” এই ‘আমাদের নির্বাচিত সাংসদ’ কথাটাই যেন বারবার ফিরে আসছিল এই দিন।
প্রণববাবুও ছিলেন বেশ খোশমেজাজে। বৌভাতের আসর থেকে বেরিয়ে সোজা চলে যান রঘুনাথগঞ্জ লাগোয়া দেউলিতে। সেখানেই প্রণববাবুর নিজের থাকার জন্য তৈরি হচ্ছে দোতলা বাড়ি। সেই নির্মাণ কাজের দেখভাল করছেন মাসুদ রেজা। তিনি বলেন, “দোতলা বাড়ির প্রতি তলায় চারটি করে ঘর। দু’টি তলাতেই রয়েছে রান্নাঘর।’’ ঠিক কাঁটায় কাঁটায় ১টা’র সময় সেই বাড়িতে ঢুকে পড়ল প্রণববাবুর গাড়ি। বাড়িতে ঢুকতেই বাঁ দিকে পুকুর। তাতে অবশ্য এখন জল নেই। তবে জেলা কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর টিপ্পনি, “দাদার পুকুরে আমরা ইলিশ চাষ করব” শুনে হো হো করে হেসে ফেললেন প্রণববাবু। হাল্কা মজার মধ্যেই প্রণববাবু বাড়িতে ঢুকে পড়লেন। সামনে ঠাকুরঘর এক তলায়। পাশেই বসার ঘর। ডান দিকে রান্নাঘর। নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ করার জায়গা বিরাট করিডরের বাঁ দিকে। প্রতিটি ঘরেই এক এক করে ঢুকলেন প্রণববাবু। কোথায় কী করতে হবে বলে দিলেন। কোথায় কী আলো লাগাতে হবে, তা-ও জানিয়ে দিলেন। তারপরে হঠাৎ ভ্রু কুঁচকে উঠল। জিজ্ঞেস করলেন, গোটা চত্বরে কোনও গাছ নেই কেন? সঙ্গে সঙ্গে ঠিক করা হল, কোথায় কোথায় গাছ লাগানো হবে।
নিজের বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা চলে গেলেন বাড়াল হেলিপ্যাডে। কবে আসবেন বাড়িতে?
মাসুদ রেজা বলেন, “আর মাস দেড়েকের মধ্যেই বাড়ি তৈরি হয়ে যাবে। প্রণববাবু থাকবেন দোতলায়। নীচের তলাটা অতিথিদের জন্য। তৈরি করা হবে একটি মন্দিরও।” |