শ্রমিক বিক্ষোভের জেরে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে সমস্যা দেখা দিল আরামবাগ মহকুমার মায়াপুর ২ পঞ্চায়েতের বলুন্ডি ও তিরোল পঞ্চায়েতের ডোঙ্গাবাথান গ্রামে। বিক্ষোভকারী শ্রমিকেরা দাবি করেছেন, মাটি কাটার মাপজোক ছাড়াই তাঁদের মজুরি দিতে হবে। গোটা হুগলি জেলা জুড়েই একশো দিনের কাজে গতি আনতে যখন নানা পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে, তখন আরামবাগের তৃণমূল বিধায়ক কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরার গ্রাম বলুন্ডিতেই এই পরিস্থিতি হওয়ায় গুঞ্জন শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলেও। শ্রমিকেরা দাবি করেছেন, বিধায়ক নিজেই তাঁদের মাপজোক ছাড়া টাকা পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন। এ কথা অস্বীকার করে কৃষ্ণচন্দ্রবাবু বলেন, “আমার নাম ভাঙিয়ে অন্যায় দাবি করছেন শ্রমিকেরা।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, গত সোমবার থেকে মহকুমার ৬৩টি পঞ্চায়েতের প্রতিটি সংসদে অন্তত একটি করে একশো দিনের প্রকল্পের কাজ শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবারই মায়াপুর ২ নির্মাণ সহায়ক অমল সরকার বলুন্ডি গ্রামের তালপুকুর সংস্কারের কাজ শুরু করার প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। সে সময়ে পঞ্চায়েত অফিসে শ্রমিকেরা তাঁকে ঘেরাও করে হেনস্থা করেন বলে অভিযোগ। শ্রমিকদের দাবি, মাটি কাটার কাজে জমি মাপজোক করা যাবে না। মজুরি প্রতিদিনই মিটিয়ে দিতে হবে। তাঁদের বক্তব্য, “বিধায়ক বলছেন, কাজে গেলেই হাতে হাতে ১৩০ টাকা পাওয়া যাবে। মাপজোকের প্রশ্ন আসছে কেন?”
মঙ্গলবার বলুন্ডি গ্রামের এই অশান্তির পর থেকে ওই পঞ্চায়েতেরই গোপীনাথপুর গ্রামে ওই প্রকল্পে একটি শ্মশান উন্নয়নের কাজও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। একই কারণে তিরোল পঞ্চায়েতের ডোঙ্গাবাথান গ্রামের মোল্লাপুকুর খননের কাজ শুরু হওয়ার সাত দিনের মধ্যেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এখানে শ্রমিকেরা নির্মাণ সহায়ককে কাজের মাপে ‘কারচুপি’ করতে বাধ্য করেন বলে অভিযোগ। পঞ্চায়েত প্রধান সিপিএমের সান্ত্বনা বাগ বিডিওকে বিষয়টি লিখিত ভাবে জানিয়েছেন। আরামবাগের বিডিও মৃণালকান্তি গুঁই বলেন, “পুনরায় কাজের পরিমাপ করা হবে।”
নির্মাণ সহায়ক অমলবাবুও ঘটনার কথা জানিয়েছেন ব্লক প্রশাসনকে। বিডিও বলেন, “অভিযোগ পেয়ে সরেজমিনে তদন্ত হয়েছে। পুরো বিষয়টি মহকুমাশাসককে জানিয়েছি। পঞ্চায়েত এবং ব্লক প্রশাসনের বক্তব্য, “শ্রমিকেরা বিধায়কের নাম করে অন্যায় দাবি করছেন। কাজ করছেন না। ঘেরাও করে মানসিক নির্যাতন করছেন আধিকারিকদের।” অথচ তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে একশো দিনের প্রকল্পের ১২ লক্ষ টাকা পড়ে রয়েছে পঞ্চায়েত অফিসে।
কৃষ্ণচন্দ্রবাবু বলেন, “আমি শ্রমিকদের বলে দিয়েছি, সরকারি নিয়মকানুন মেনে কাজ হবে। ফাঁকি দিয়ে মজুরির কোনও প্রশ্ন নেই। প্রশাসনকে এ সব আবদার কঠোর হাতে দমন করতে বলেছি।” মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগী বলেন, “মাটি কাটার মাপজোকের বিষয়টি নিয়ে কিছু এলাকায় অসুবিধা আছে। প্রকল্পের নিয়মকানুন নিয়ে ব্যাপক প্রচার চলছে। প্রাথমিক এই সমস্যা দ্রুত কেটে যাবে।” |