সম্পাদকীয় ২...
‘জনাদেশ’!
নতা সুবিচার চাহে। ইহা অন্যায্য নহে। অস্বাভাবিকও নহে। প্রশ্ন হইল, বিচারের রীতিপদ্ধতি নির্দিষ্ট। বিধিসমূহ বিদ্যমান। সেই বিধি ও পদ্ধতি কি সর্বদাই জনতার আকাঙ্খার সহিত সঙ্গতিশীল? প্রশ্নটি জরুরি। কারণ, নানা সময়েই দেখা গিয়াছে, উত্তেজনার বশে জনতা যাহা দাবি করিতেছে, তাহা বিধিবদ্ধ বিচারপদ্ধতির সহিত সঙ্গতিপূর্ণ নহে। এমতাবস্থায় কী করণীয়? শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি মহোদয় একটি সতর্কবার্তা শুনাইয়াছেন। তাঁহার মতে, বিচারকের আসনে বসিলে জনমনোরঞ্জনের দায় থাকিলে চলিবে না। জনতার বাঞ্ছাকল্পতরু হইবার দায় বিচারকের নাই। তিনি তাহাই করিবেন, যাহা বিধিবদ্ধ বিচাররীতি আজ্ঞা করিবে। কথাটি বিবেচনা দাবি করে। বিভিন্ন সময় এমন কিছু মামলা উঠিয়া আসে, যাহা জনতার কোনও না কোনও তীব্র আবেগের সহিত জড়িত। সুতরাং, প্রতিক্রিয়া থাকে বিপুল। সেই প্রতিক্রিয়া কি অন্য কোনও অর্থে একটি ‘জনাদেশ’-এর ন্যায় ধর্মাধিকরণের উপর চাপ সৃষ্টি করে। দৃশ্যত, অনেক সময়ই করে। সেই চাপ বিচারপ্রক্রিয়ার সহিত সঙ্গতিপূর্ণ হইতে পারে, না-ও পারে। তাই বলিয়া চাপটিকে উড়াইয়া দেওয়া যায় না। অথচ, ধর্মাধিকরণ, পদ্ধতিগত ভাবেই, মত-নিরপেক্ষ। যে তরফ অধিকতর যুক্তি ও প্রমাণ সহকারে স্বীয় বক্তব্য পেশ করিয়াছে বলিয়া বিচারপতি মনে করিবেন, জয় সেই পক্ষেরই হইবার কথা। জনমত তাহা চাহিলেও তাই, না-চাহিলেও।
প্রশ্নটি সাম্প্রতিক কালে সবিশেষ প্রাসঙ্গিক হইয়া উঠিয়াছে। পরিভাষায় যাহাকে ‘অ্যাক্টিভিজম’ বলা হয়, বিচারব্যবস্থা কতকটা সেই পথেই অগ্রসর, এমন একটি অভিযোগ শুনা যাইতেছে। বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ইহার ভিতর এমন একটি ঘূর্ণিপাক বিজড়িত, যাহা বিচারপ্রক্রিয়া এবং জনমতকে কার্যত পাশাপাশি আনিয়া দেয়। এই দুইয়ের ভিতর কি কোনও পারস্পরিক প্রভাব কাজ করে? শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতির ইঙ্গিত মানিলে কিন্তু এমন একটি সম্ভাবনা উড়াইয়া দেওয়া যায় না। বিচারবিভাগ ঠিক কত দূর অগ্রসর হইতে পারে, জাতির ‘বিবেক’ হইয়া উঠিবার দায়িত্ব বিচারবিভাগের আছে কি না, এমন কিছু প্রশ্ন উত্তর দাবি করে। সাম্প্রতিক পশ্চিমবঙ্গেও করে। ইতিপূর্বে, প্রধান বিচারপতি ইহা স্পষ্ট করিয়া দিয়াছিলেন যে, নিম্ন আদালতের ক্ষেত্রে জামিন মঞ্জুর করাই বিধি এবং তাহা না-করাই ব্যতিক্রম। অথচ, ঘটনা ইহাই যে, জামিন মঞ্জুর বা না-মঞ্জুরের ক্ষেত্রে জনমতের একটি প্রবল চাপ থাকিয়াই যায়। গণমাধ্যমও প্রকারান্তরে একটি চাপ সৃষ্টি করে। সেই চাপ সর্বদা বিচারের নীতিকে মান্য করিতেছে কি না, এমন একটি প্রশ্ন উঠিতেই পারে। ‘আমরি’-কাণ্ডের ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের জামিন না-দিবার ব্যাপারেও জনমতের কোনও ভূমিকা আছে কি না, তাহাও ভাবিয়া দেখিবার বিষয়। বিচারব্যবস্থার প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা রাখিয়াও সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির শলাটি বিবেচনা করা দরকার। স্মর্তব্য, প্রকৃত বিচারব্যবস্থা আদালতের পরিসরে কোনও একটি ঘটনাকে পূর্ব-নির্ধারিত কোনও দৃষ্টিকোণে বিচার করিতে চাহে না। কোনও একটি ঘটনা ঘটিয়াছে। তাহার ভিতর অসঙ্গতি আছে বলিয়াই তাহা বিচারাধীন। অতঃপর, আদালতের প্রাঙ্গণে সেই কাজটি যে প্রকৃতই অপ-কর্ম, তাহা প্রতিপন্ন হওয়া প্রয়োজন। ইহা কোনও ‘অপরাধী’র জন্য আড়াল নির্মাণ নহে। ইহা আসলে কোনও অপ-কর্মকে যথাযথ ভাবে চিহ্নিত করিবার প্রক্রিয়া। সেই প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ভাবে চলা প্রয়োজন। বিচারব্যবস্থার সহিত অপরাধীর যোগসাজশ যেমন অবাঞ্ছিত, তেমনই জনমতের চাপও কাঙ্খিত নহে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.