পথিক গুহ তাঁর লেখা ‘গতকালটি ছিল না’ (২০-১২) প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন যে, লেমাইত্রে ১৯২৭ সালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে সর্বপ্রথম বিশ্বের প্রসারণশীলতার কথা বলেছিলেন। কিন্তু এই তথ্যটি ঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে মহাবিশ্বের সৃষ্টি সংক্রান্ত যে বৈজ্ঞানিক তত্ত্বটি নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বেশি সংখ্যক বিজ্ঞানীর কাছে গ্রহণযোগ্য, সেই তত্ত্বের উদ্ভাবনের দুটি দিক একটি তাত্ত্বিক, অন্যটি ব্যবহারিক। আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদের সমীকরণে গতিশীল বিশ্বের ইঙ্গিত ছিল। তাই স্থিতিশীল বিশ্বের ধারণায় বিশ্বাসী আইনস্টাইন তাঁর সমীকরণে ‘মহাজাগতিক ধ্রুবক’ নামে একটি বাড়তি পদ যোগ করেন (১৯১৭ সাল) যাতে বিশ্বকে স্থিতিশীল দেখানো যায়। কিন্তু, ওই বছরেই ওলন্দাজ বিজ্ঞানী উইলিয়ম দ্য সিটার আইনস্টাইনের পরিমার্জিত সমীকরণকে ব্যবহার করেই বস্তুশূন্য অথচ প্রসারণশীল বিশ্বের এক ছবি তুলে ধরেন। এর পর ১৯২২ সালে রুশ বিজ্ঞানী আলেকজান্দার ফ্রিডম্যান আইনস্টাইনের (মহাজাগতিক ধ্রুবক বর্জিত) মূল সমীকরণটি থেকে অঙ্ক কষে প্রসারণশীল বিশ্বের তত্ত্ব উপস্থাপিত করেন। কিন্তু, তুলনায় অপরিচিত রুশ গবেষণাপত্রে প্রকাশিত ফ্রিডম্যানের বক্তব্য সেই সময় উপেক্ষিত হয়। অবশেষে ১৯২৯ সালে হাব্লের পযর্বেক্ষণলব্ধ ফলপ্রকাশের পর ফ্রিডম্যানের বক্তব্যের যাথার্থ্য উপলব্ধি করা যায়। যে হেতু দ্য সিটারের বস্তুশূন্য প্রসারণশীল বিশ্বের ছবিটির সঙ্গে বাস্তবের মিল নেই, তাই ফ্রিডম্যানকেই তত্ত্বগত ভাবে প্রসারণশীল বিশ্বের ধারণার জনক বলা যায়। |
মহাবিশ্বে। সুপারনোভার অবশেষ ০৫০৯-৬৭.৫ পৃথিবী থেকে
এক লক্ষ সত্তর হাজার আলোকবর্ষ দূরে। নাসার তোলা ছবি। ছবি: রয়টার্স |
অন্য দিকে, ১৯২৭ সালে লেমাইত্রে মহাজাগতিক ধ্রুবককে মেনে নিয়ে প্রসারণশীল বিশ্বের যে তাত্ত্বিক ধারণা দেন তাতে একটি পর্যায়ে বিশ্বের প্রসারণ প্রায় থমকে গিয়েছিল বলে ধরে নেওয়া হয়। প্রায় একই সময়ে ব্রিটিশ পদার্থবিদ আর্থার স্ট্যানলি এডিংটনও ওই ধরনের একটি ধারণা দেন। তাই এডিংটন-লেমাইত্রের ওই তত্ত্বকে দ্বিধাগ্রস্ত প্রসারণশীল বিশ্বের (Hesitating Expanding Universe) তত্ত্ব বলা হয়। অবশ্য ওই তত্ত্ব পরে খারিজ হয়ে যায়। তবে এ কথা ঠিক যে, গ্যালাক্সিগুলির প্রসারণের কারণ হিসাবে উদ্ভূত মহাবিস্ফোরণ তত্ত্বের প্রথম প্রবক্তা ছিলেন লেমাইত্রে। যদিও ওই তত্ত্বের পূর্ণাঙ্গ, গ্রহণযোগ্য ও পর্যবেক্ষণগত ভাবে সমর্থিত বর্তমান রূপটির জনক ছিলেন আর এক প্রতিভাধর রুশ বিজ্ঞানী জর্জ গ্যামো। যিনি ফ্রিডম্যান ও হাব্লের ফলের উপর নির্ভর করে তাঁর তত্ত্বটি দাঁড় করান। আসলে মনে রাখতে হবে যে, গ্যালাক্সিগুলির প্রসারণের কারণ সুদূর-অতীতের মহাবিস্ফোরণ হলেও প্রসারণশীল বিশ্বের তত্ত্ব ও মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব এক নয়।
উৎপল মুখোপাধ্যায়। বারাসত সত্যভারতী বিদ্যাপীঠ, উত্তর চব্বিশ পরগনা
|
লেখকের সংযোজন: ফ্রিডম্যান প্রসারণশীল বিশ্ব ধারণার জনক? রুশ গবেষণাপত্রে বক্তব্য প্রকাশের জন্য তিনি উপেক্ষিত? মানা যায় না। আসলে, ১৯১৭ থেকে ১৯২৭ পর্যন্ত সময়টা বেশ জটিল। তত্ত্ব এবং তথ্য দুটোই কাজে লাগিয়ে মহাবিশ্ব সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ একটা ধারণা কারও একার পক্ষে তখন দেওয়া সম্ভব হয়নি। আমেরিকান জ্যোতির্বিজ্ঞানী ভেস্টো স্লিফার তো ৪১টা গ্যালাক্সির ছুটে পালানো দেখেও কিছু বুঝতে পারেননি। যেমন পারেননি ব্রিটিশ বিজ্ঞানী আর্থার এডিংটন। আর ফ্রিডম্যান তো গতিশীল বিশ্বের কথা বললেও, গবেষকদের পর্যবেক্ষণের সঙ্গে তাঁর তত্ত্বের যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করেননি। দ্রষ্টব্য: (১) ‘লেমাইত্রে-হাব্ল রিলেশনশিপ’, মাইকেল ওয়ে, হ্যারি নাসবমার, ফিজিক্স টুডে, অগস্ট ২০১১, পৃ-৮, (২) ‘হু ডিসকভারড দি এক্সপানন্ডিং ইউনিভার্স’, হ্যারি নাসবমার, লিডিয়া বিয়েরি, arXiv:1107.2281v2; (৩) ‘ডিসকভারিং দ্য এক্সপান্ডিং ইউনিভার্স’, হ্যারি নাসবমার , লিডিয়া বিয়েরি, কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস, (৪) ‘মিস্ট্রি অফ দি মিসিং টেক্সট সলভ্ড’, মারিয়ো লিভিয়ো, নেচার, ১০ নভেম্বর, ২০১১, পৃ-১৭১।
|
সংখ্যালঘু-কল্যাণে কী কী কাজ হয়েছে |
আনন্দবাজার পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত ‘প্রতিশ্রুতি রাখছে না সরকার, ফের ক্ষোভ সংখ্যালঘু নেতাদের’ (১৩-১) শীর্ষক সংবাদের প্রতি রাজ্য সরকারের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে।
সংবাদটি ভিত্তিহীন।
উক্ত প্রতিবেদনে এমন অভিযোগ করা হয়েছে যে, বর্তমান রাজ্য সরকার সংখ্যালঘুদের কল্যাণে কোনও কাজ করেনি। এই বিষয়ে প্রকৃত তথ্য হল এই যে, রাজ্য সরকার ১-৬-২০১১ থেকে ১০-১-২০১২ এই তারিখের মধ্যেকার কালপর্বে নিম্নলিখিত কাজগুলি করেছে
১) ২০১০-’১১ বর্ষে ৬ লক্ষ ৮৪ হাজার ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ১১১ কোটি ২৩ লক্ষ টাকা প্রাক্-মাধ্যমিক এবং মাধ্যমিক-উত্তর বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে। ৩১-৩-২০১২ পর্যন্ত আরও ৮ লক্ষ ৭৭ হাজার ছাত্রছাত্রীর মধ্যে একই বৃত্তি প্রদান করা হবে।
২) আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি ২০ তল বিশিষ্ট ভবন এবং ১২ তল বিশিষ্ট হজ টাওয়ার নির্মাণের জন্য রাজারহাট নিউটাউনে যথাক্রমে ২০ একর এবং ৫ একর জমি বরাদ্দ করা হয়েছে।
৩) ৪৫০০ সংখ্যালঘু তরুণ-তরুণী দক্ষতা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে। ৩১-৩-২০১২-র মধ্যে আরও ৫০০০ তরুণ-তরুণীকে উক্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
৪) গত সাত মাসে ইন্দিরা আবাস যোজনার অধীন ৩২৭৯টি গৃহ, ১৪৫৮টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, বিদ্যালয়গুলিতে ৮৯৬টি অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ এবং ১৫৫টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে।
৫) বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য নির্দিষ্ট সমাধিক্ষেত্রের সীমানা-প্রাচীর নির্মাণের উদ্দেশ্যে ৬ কোটি টাকা মঞ্জুর করা হয়েছে।
উমাপদ চট্টোপাধ্যায়। তথ্য অধিকর্তা, তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ, মহাকরণ, কলকাতা-১ |