সম্পাদকীয় ১...
আদর্শের নাম চিন
বাক্-স্বাধীনতা বস্তুটি রাষ্ট্রের পছন্দের নহে। পছন্দ হইবার কথাও নহে, কারণ নাগরিকের চিন্তার স্বাধীন প্রকাশ হইলে রাষ্ট্রের কিঞ্চিদধিক সমস্যা অনিবার্য। কখনও সমালোচনায় সমস্যা, কখনও তোষণে সমস্যা, কখনও অন্য কোনও প্রকার। কিন্তু, নাগরিকের মত প্রকাশের স্বাধীনতার সহিত রাষ্ট্রের অস্বাচ্ছন্দ্যের সম্পর্ক অনস্বীকার্য। কাজেই, সুযোগ পাইলে বাক্-স্বাধীনতা খর্ব করিবার চেষ্টা সরকারমাত্রেই করিয়া থাকে। জরুরি অবস্থা হইতে তসলিমা নাসরিনের বই নিষিদ্ধ করা, সলমন রুশদির বিরুদ্ধে জারি হওয়া ফতোয়াকে গ্রাহ্য করা বাক্-স্বাধীনতায় রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের উদাহরণ ভারতে নেহাত কম নাই। এখন মতপ্রকাশের দ্রুততম এবং সহজতম মাধ্যম হইল ইন্টারনেট। ফলে, সেই ইন্টারনেটে মানুষের স্বাধীনতা খর্ব করিবার তাগিদ সব সরকারই কম-বেশি অনুভব করিতেছে। চিনের ন্যায় দেশে সরকারের সমস্যা কম সেইখানে নাগরিকের কণ্ঠ রোধ করিতে রাষ্ট্র চক্ষুলজ্জায় ভোগে না। ফলে, রাষ্ট্রের মর্জি হইলে যে কোনও ওয়েবসাইটকেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করিয়া দেওয়া চলে। কিন্তু, ভারত বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যায় দেশের তো আবার গণতন্ত্রের গর্ব করিবার দায় আছে, ফলে এই সব দেশের সরকারকে অছিলার সন্ধান করিতে হয়। অছিলা অবশ্য এখনও দূষণহীন পরিবেশের ন্যায় বিরল হইয়া পড়ে নাই, ফলে সামান্য চেষ্টাতেই তাহা জুটিয়া যায়। ভারতের জুটিয়াছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরও। লক্ষণীয়, দুইটি দেশের সরকারই দেশের স্পর্শকাতর প্রশ্নের অভ্যন্তরে এই অছিলা খুঁজিয়া পাইয়াছে। ভারতে সরকারের বক্তব্য, ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদির মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক অসম্প্রীতি বাড়িতে পারে, দাঙ্গাও নাকি অসম্ভব নহে। আর, মার্কিন সরকার বলিয়াছে, ইন্টারনেটে মেধাস্বত্ব নয়ছয় হইতেছে। অতঃপর, দুই দেশের সরকারের দুই দাওয়াই ভারত সরকার বলিয়াছে, স্যোশাল নেটওয়ার্কিং সাইটে কী লেখা হইতেছে, তাহার উপর নজরদারি রাখিতে হইবে; আর মার্কিন সরকার স্টপ অনলাইন পাইরেসি অ্যাক্ট (সোপা) এবং প্রোটেক্ট ইন্টেলেকটুয়াল প্রপার্টি অ্যাক্ট (পিপা) নামক দুইটি আইন প্রণয়নে উদ্যোগ করিয়াছে।
মূল কথাটি হইল, সব দেশই এখন চিন হইয়া উঠিবার সাধনায় রত। প্রবণতাটি অতি বিপজ্জনক, কারণ চমকপ্রদ আর্থিক বৃদ্ধির সহস্র ঢক্কানিনাদও চিনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলিকে ঢাকিয়া রাখিতে পারে নাই। চিন কোন পথে চলে, তাহা গোটা বিশ্ব জানে। সময় সুযোগ বুঝিয়া মানবাধিকারের প্রশ্নে চিনের নিন্দা করিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও কখনও পিছপা হয় নাই। কিন্তু, মনের গহনে চিন হইয়া উঠিবার ইচ্ছাটি, দেখা যাইতেছে, ষোলো আনা রহিয়াছে। অবদমিত ইচ্ছামাত্রেই মারাত্মক, কারণ তাহা বিচিত্র রূপে প্রকাশ হয়। যেমন, চিন হইয়া উঠিবার ইচ্ছাটি বাক্-স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের প্রবণতায় প্রকাশ হইতেছে। নেতারা কেন নিজেদের দেশটিকে চিন বানাইতে চাহেন, তাহা বোঝা কঠিন নহে। চিন এমন একটি দেশ, যেখানে কোনও বিপ্লব মাথা তুলিতে পারে না, নেতাদের মনোকামনার ঊর্ধ্বে আর কাহারও কণ্ঠ শোনা যায় না। এমন দেশ চালানো সহজ। উত্তর কোরিয়া বা কিউবাও হয়তো এমনই ‘আদর্শ’ হইয়া উঠিতে পারিত, কিন্তু অর্থনীতির মাপকাঠিতে তাহারা কলিকা পায় না। চিন এখনও পর্যন্ত একমাত্র উদাহরণ, যেখানে সম্পূর্ণ গণতন্ত্রহীন একটি পরিবেশে প্রবল আর্থিক বৃদ্ধি (উন্নয়ন কি না, তাহা ভিন্ন প্রশ্ন) হইতেছে। আর্থিক সংকটে জেরবার নেতাদের নিকট চিনের মডেলটি আকর্ষণীয় বোধ হইতেই পারে। কিন্তু, মানবাধিকারের উপর বুলডোজার চালাইয়া যে সফল ভাবে দেশ চালানো যায় না, বিংশ শতাব্দীতে তাহার বহু এবং বিচিত্র উদাহরণ আছে। নেতারা ইতিহাসমনস্ক হউন, চিন হইবার সাধনাটি বন্ধ করুন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.