নিজস্ব সংবাদদাতা • গুয়াহাটি |
যানজটের ঠেলা কাকে বলে টের পেলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রী, সকলেই। তিন ঘণ্টার পথ পার হতে লাগল ন’ঘণ্টা। আর কোনও উপায় না দেখে বিলাসবহুল, বুলেটপ্রুফ গাড়ি ছেড়ে ধোঁয়া-ধুলোর পথে মোটর সাইকেলে সওয়ারি হয়ে শিলং পৌঁছলেন কেন্দ্রীয় জলসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ভিনসেন্ট পালা। সাধারণ যাত্রীদের নিত্য দুর্ভোগ একদিন ভোগ করেই মন্ত্রীর হুঙ্কার, “স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বা অন্য কারও আপত্তি মানা যাবে না। মেঘালয়ে রেলপথ চালু করতেই হবে।”
গুয়াহাটি থেকে শিলং—সড়ক যোগাযোগ এখন দুঃস্বপ্নেরই নামান্তর। খাতায়-কলমে দূরত্ব মাত্র ১০০ কিলোমিটার। গাড়িতে সময় লাগে খুব বেশি হলে ৩ ঘণ্টা। কিন্তু দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাক, সড়ক নির্মাণের বিলম্বিত লয়, ট্রাফিক পুলিশের অনুপস্থিতি আর নিত্য দুর্ঘটনা মিলিয়ে সেই পথ পার হতে লাগছে ৯, ১০ কিংবা ১২ ঘণ্টা। রেলপথ না থাকায় ৪০ নম্বর এই জাতীয় সড়ক হয়েই অসম থেকে ত্রিপুরা, বরাক উপত্যকা ও মিজোরাম যেতে হয়। সাধারণ যাত্রী তো দূর অস্ৎ, ভিআইপিদের জন্যও কপ্টার পরিষেবা সীমিত। ফলে মন্ত্রীদের জন্যও এই পথই ভরসা। মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী শিলং ছেড়ে গারো পাহাড়ে নিজভূমে যেতে বা গুয়াহাটি যেতে হলে ওই যানজটের পথেই কপাল ঠুকে রওনা হয়ে পড়েন।
গত শনিবার ফের যানজটে আটকান মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর দেহরক্ষীরা রাস্তায় নেমে প্রায় ৪০ কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির ফাঁক-ফোঁকর দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ির পথ করান। ক’দিন আগে দিল্লি থেকে শিলং আসছিলেন ভিনসেন্ট পালা। কিন্তু মাওইয়ং পৌঁছবার পরেই গাড়ি নট নড়ন-চড়ন। অথচ বিকেল চারটের মধ্যে তাঁকে শিলং পৌঁছতেই হত। বাধ্য হয়ে বাইকের পিছনে চেপে বসেন। পৌঁছন শিলং। ফিরেই বিরক্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, “রাজ্যে রেলপথ বসাতেই হবে। শীতে স্টার্ট বন্ধ হয়ে রাস্তা জুড়ে ট্রাক দাঁড়িয়ে। যে যেমন করে পারছে গাড়ি নিয়ে পাহাড়ি পথে উঠছেন। একটিমাত্র রাস্তায় চারটি রাজ্যের ব্যক্তিগত গাড়ি, যাত্রী পরিবাহী গাড়ি, ট্রাক চলছে। এ ভাবে যানজট কমা সম্ভব নয়।” গত বছরের শেষ দিকেও, মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা একাধিকবার যানজটে আটকে সকালের অনুষ্ঠানে বিকেলে হাজির হন। যানজটের চোটে অ্যাম্বুলেন্সের ভিতরেই প্রসূতিরা মা হয়েছেন, জীবিতদের মৃত্যু হয়েছে। পরিস্থিতি বদলাতে ট্র্যাফিক বিভাগকে নিত্য নির্দেশ দিচ্ছেন মন্ত্রীরা। কিন্তু পরিস্থিতি বদলায়নি।
রাজ্যে, রেলপথ চালু করার বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রক সবুজ সংকেত দিয়েছে। সমীক্ষাও হয়েছে। কিন্তু বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ বৃদ্ধি ও পরিবেশ ধ্বংসের আশঙ্কায় কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তাতে বাধ সাধছে। পালা বলেন, “ওরা ওদের কাজ করুক। আমরা আমাদের কাজ করব। রেললাইন বসাবোই।” |