ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে থাকা আর পাঁচটা দলের একটি নয়, এখন ‘ক্ষমতাসীন’ দল তৃণমূল কংগ্রেস। তফাৎটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে মণিপুরের বিধানসভা নির্বাচন।
পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূল এ বার মণিপুর নির্বাচনে যা খরচ করছে, যে ভাবে সংগঠিত প্রচার চালাচ্ছে, তার ৫ শতাংশও অরুণাচল বা অসম নির্বাচনে দেখা যায়নি। ফলে অরুণাচল বা অসম নির্বাচনে প্রদেশ তৃণমূল বা প্রার্থীদের মুখে নাগাড়ে যে অভিযোগ শুনতে হয়েছে, মণিপুরে সেই ছবিটা নেই। বরং প্রচারে কোথাও কোথাও রাজ্যের ক্ষমতাসীন কংগ্রেসকে কয়েক কদম পিছনে ফেলে দিয়েছে তারা। মণিপুরের ভোটপ্রচারে তৃণমূল কংগ্রেসের হেলিকপ্টার আকাশে ঘন ঘন চক্কর কাটছে। দলের পরিদর্শক-সাংসদরা প্রত্যন্ত এলাকায় প্রচার চালাচ্ছেন। সব মিলিয়ে মণিপুর নির্বাচনে অনেকটা আত্মবিশ্বাসী ‘কিম’ দিদির দল।
২০০৯ সালে অরুণাচল প্রদেশে তৃণমূল লড়তে নামে। সে বার দলের পাঁচ প্রার্থী জিতলেও প্রাক-নির্বাচনী প্রচারে বার বার কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছ থেকে কোনও সাহায্য না মেলার অভিযোগ তুলেছিলেন ডোমিন লোয়া ও তাঁর দলবল। সেবার মুকুল রায়, সৌগত রায়, সুলতান আহমেদরা দিন তিনেক অরুণাচলে ছিলেন। প্রার্থীরা দুঃখ করে একান্তে বলতেন, পতাকা, ফেস্টুন, ব্যানার সব কলকাতা থেকে নিজের খরচে আনাতে হচ্ছে। নেহাত কংগ্রেস টিকিট দেয়নি, না হলে এত হ্যাপা কে পোহাতো?” তবে অরুণাচলের প্রার্থীরা প্রত্যেকেই ছিলেন ক্ষমতাবান ও অর্থবান। সে রাজ্যের ‘নিয়ম মেনে’ ভোট কেড়েছেন তাঁরা। দল যাই হোক, পাঁচটি আসনেও তাঁরা জিতেছেন। অসমের ক্ষেত্রে টাকা পাঠায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। বার তিনেক রাজ্য কমিটিও গড়া হয়। সাংসদ কে ডি সিংহ ও তাপস-শতাব্দীরা প্রচারে আসেন। কিন্তু অসমে যেমন প্রার্থী বাছাই ত্রুটিপূর্ণ ছিল, তেমনই প্রদেশ তৃণমূলের দলীয় কোঁদল ও আর্থিক নয়ছয় এমন জায়গায় পৌঁছয় যে নির্বাচনের আগে কার্যত ভেঙে পড়ে সংগঠন। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কেউ হাল ধরার জন্য ছিলেন না। কংগ্রেস ১০১টি আসনে লড়ে ১টি আসনে জেতে।
তবে, মণিপুরের প্রাক-নির্বাচন পর্বের ছবিটা এ বার একেবারে আলাদা। দল এখন একটি অঙ্গরাজ্যে ক্ষমতায়। কলকাতা থেকে অর্থের জোগান আসছে। আসছে পোস্টার, পতাকা, ব্যানার, টুপি এমন কী ছাতাও। বছরের প্রথম থেকে মাটি কামড়ে পড়ে রয়েছেন দলের পর্যবেক্ষক তথা যুব নেতা সৌরভ চক্রবর্তী।
৬০টি কেন্দ্রের ৪৭টিতে প্রার্থী দিয়েছে তৃণমূল। এর মধ্যে সংরক্ষিত পাহাড়ি আসনেই ১৫ জন। গত কাল কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা দলের সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়, সাংসদ কে ডি সিংহ হেলিকপ্টারে চূড়াচাঁদপুরে প্রচার সেরে এলেন।
দিনের পর দিন বিরূপ আবহাওয়া ও প্রত্যন্ত পাহাড়ি গ্রামে ঘুরে জনসভা করছেন অপর সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন। বোর্নভিটা কুইজ কনটেস্টের জোরে ডেরেক শিক্ষিত মণিপুরিদের কাছে অতি-পরিচিত মুখ। রাজ্যে কংগ্রেস-বিরোধী পরিবর্তনের হাওয়াকে হাতিয়ার করে ময়দানের প্রাক্তন ফুটবলার সোমাতাই সাইজা ‘সোসো’ ছাড়াও ৮ জন যুব প্রার্থী দিয়েছে তৃণমূল। সৌরভবাবু বলেন, “আমাদের বড় সাফল্য ৭ জন বর্তমান বিধায়ক আমাদের
টিকিটে লড়ছেন।”
পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র পরিষদের প্রাক্তন নেতা সৌরভ মণিপুরে এনএসইউআই-কে ভেঙে বের করে এনেছেন দুই ছাত্র নেতা প্রেমানন্দ ও সু সু মেইতেইকে। ৮ জন প্রাক্তন মন্ত্রী, ১ জন প্রাক্তন স্পিকারও তৃণমূলের জার্সিতে মাঠে নেমেছেন।” সৌরভদের আশা, সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও অন্তত দ্বিতীয় স্থানে তাঁরা থাকবেন। সরকার গঠনে তৃণমূলই কংগ্রেসের বড় সহায় হতে পারে।
দলের প্রদেশ সভানেত্রী তথা প্রাক্তন সাংসদ কিম গাংতে, মমতা দিদির পাশে কিম দিদি। উপজাতি প্রসঙ্গ টেনে, সদর হিল আন্দোলনে জড়িয়ে কুকি জনজাতির কিম দলের অনেককে চটিয়েছিলেন। তবে সৌরভ বলছেন, “কিমই আমাদের প্রধান ‘তারকা প্রচারক’।” তবে কিম-এর ভরসা সেই ‘মা মাটি ও মানুষ’-এই। তাঁর কথায়, চানু-মনোরমার রাজ্যে গ্ল্যামার, অস্ত্র বা অর্থ নয়, মেয়েদের লড়াইকেই সম্মান জানাবেন মানুষ। |