রাজ্যের কারা ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী অকণ বরার বিরুদ্ধে হত্যার ষড়যন্ত্রে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠল। ২০০৯ সালের যোগদল হত্যাকাণ্ড নিয়ে সিবিআই তদন্তের দাবি তুললেন, অকণেরই একদা ঘনিষ্ঠ দুলাল বরা। অবশ্য মন্ত্রী অকণ বরা জনসভায় দাঁড়িয়ে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। বিষয়টিকে রাজনৈতিক চক্রান্ত বলে তিনি দাবি করেছেন। মন্ত্রিসভার এক সদস্যের বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগ নিয়ে সরাসরি মন্তব্য না করলেও, মুখ্যমন্ত্রীর দফতর সূত্রে খবর, দুলালবাবুর অভিযোগ গুরুত্ব দিয়েই দেখা হচ্ছে। এমন কী গত কালই অকণ বরার ঘনিষ্ঠ ওসি, প্রদীপ বরাকে অবিলম্বে সোনাপুর থানা থেকে বদলি করে দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে প্রদীপ বরা টানা চার বছর ওই থানার ওসি ছিলেন। আজ আসুর তরফেও ডিমোরিয়ায় অকণ বরাকে কালো পতাকা দেখানো হয়।
২০০৯ সালের ১৩ ডিসেম্বর রাতে, সোনাপুরের যোগদল এলাকায় হরকান্ত দলৈ (৪৫), তাঁর স্ত্রী স্বপ্না দলৈ (৪০) এবং সন্তান সবিতা দলৈ (১২), অতুল দলৈ (৬), প্রতিভা দলৈ (৯) ও আত্মীয়ের ছেলে তুকুন দলৈ (৬)-কে হত্যা করা হয়। এর মধ্যে তুকুন ও অতুলের মাথা দু’টি প্রথমে পুলিশ পায়নি। স্বপ্নাদেবী ও পাশের বাড়িতে থাকা হরকান্তবাবুর বৌদি দু’জনেই সোনাপুর ধনীরাম বরুয়া হার্ট সিটির কর্মী ছিলেন। পর দিন দুপুরে একটি কুকুর বাচ্চার মাথা মুখে করে ‘হার্ট সিটি’র পাহাড় থেকে নেমে আসে। বাচ্চার মাথা দেখেই স্থানীয় মানুষের সন্দেহ হয়। পুলিশ আসে। পরীক্ষার পরে জানা যায়, সেটি অতুলের মাথা। মাথাটিতে চোখ ও কান ছিল না। পুলিশ কুকুর ‘হার্ট সিটি’র ঝোপ থেকে দ্বিতীয় মাথাটিও উদ্ধার করে। এরপরেই উত্তেজিত জনতা ‘হার্ট সিটি’ আক্রমণ করে। আগুন লাগায়। এমনকী স্বপ্নাদেবীর বাড়িতেও আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ঘটনাস্থলে আসেন স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী অকণ বরা। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ অভিযোগ তোলেন, অদ্ভুত বিষয় নিয়ে গবেষণা চালানো ডাক্তার ধনীরামই শিশু-মৃত্যুর জন্য দায়ী। এই এলাকায় ‘হার্ট সিটি’ রাখা যাবে না। মুণ্ড রহস্য নিয়ে পুলিশ ‘হার্ট সিটি’র ছয় কর্মীকে আটক করে। ঘটনার সময় ধনীরামবাবু বেঙ্গালুরু ছিলেন। ১৭ ডিসেম্বর ধনীরামবাবু ফেরেন। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও প্রমাণের অভাবে গ্রেফতার করা যায়নি। তিনি অবশ্য দাবি করেন, “কে এইসব কাণ্ড করেছে আমি জানি। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। হার্ট সিটির জমি দখল করার চক্রান্ত করছে একটি চক্র।” ঘটনার তদন্তভার সিআইডির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল।
গত কাল অকণবাবুর একদা ঘনিষ্ঠ দুলাল বরা অভিযোগ করেন, পুরো হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা মন্ত্রী অকণ বরার মস্তিষ্কপ্রসূত। দুলালবাবুর দাবি: অকন তাঁর ব্যবসায়ী সঙ্গীদের নিয়ে হার্ট সিটির জমি দখল করে, সেখানে পাঁচ তারা হোটেল তৈরির ছক কষছিলেন। দুলালবাবুর দাবি, অকণের পরিকল্পনা মতো অর্জুন বরদলৈ নামে এক ভাড়াটে হত্যাকারীকে ৫ লক্ষ টাকা দিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটান। স্থানীয় থানার ওসি প্রদীপ বরা সব জানতেন। তিনিই ফরেনসিক প্রমাণ লোপাটের জন্য যোগদলে স্বপ্নাদেবীর ঘরে আগুন লাগান। হার্ট সিটি ভাঙচুরের সময়ও পুলিশ ইচ্ছাকৃতভাবে নিষ্ক্রিয় ছিল। শিশুদের মাথা কেটে অর্জুনই হার্ট সিটির ভিতরে ছুড়ে ফেলে। পরের দিন অকন ও তাঁর সমর্থকরাই ধনীরামের বিরুদ্ধে মানুষকে উত্তেজিত করে তোলেন। তবে পুলিশ ‘চেষ্টা’ করলেও হার্ট সিটি পুরো পোড়ানো যায়নি। ধনীরাম বরুয়াকেও গ্রেফতার করা যায়নি। দুলালবাবু বলেন, “মন্ত্রীর কাজ ফাঁস করে দেওয়ায় আমায় মেরে ফেলার চক্রান্ত হচ্ছে। সাহস থাকলে ঘটনার নিরপেক্ষ সিবিআই তদন্ত হোক। আমি সব তথ্যপ্রমাণ দিতে রাজি।”
মন্ত্রী অকণ বরা অবশ্য সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। সোনাপুরে এক জনসভায় তিনি বলেন, “আমি এই ঘটনায় জড়িত না। চক্রান্ত করে আমায় ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে। এতদিন কোথায় ছিলেন দুলাল বরা? হঠাৎ করে এই সব গল্প ফেঁদে আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করার সস্তা চেষ্টা চলছে।” তবে জাতীয়তাবাদী যুব ছাত্র পরিষদ, কার্বি ও টিয়া ছাত্র সংস্থা, ভুমি সুরক্ষা সমিতি-সহ ৮টি সংগঠন ঘটনার সিবিআই তদন্ত দাবি করেছে। বিজেপি সাংসদ বিজয়া চক্রবর্তী বলেন, “অবিলম্বে অকণকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিক মুখ্যমন্ত্রী।” |