আমরি-কাণ্ডের পরে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা কেমন, তা খতিয়ে দেখতে ফায়ার অডিট কমিটি তৈরি করেছে রাজ্য সরকার। অথচ, খাস মহাকরণের অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থাই যথাযথ নয় বলে মানছেন দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান। তিনি বলেন, “খাস মহাকরণেই অগ্নি-নির্বাপণের যথেষ্ট ব্যবস্থা নেই। তা ‘ফুল-প্রুফ’ করার পরিকল্পনা নিয়েছি আমরা।”
মন্ত্রী জানিয়েছেন, মহাকরণের অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা ঢেলে সাজার কাজ কল্যাণীর একটি সংস্থার সঙ্গে যৌথ ভাবে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। তিনি বলেন, “এই কাজে কত খরচ হবে, তা ওই সংস্থাকে আমরা জানাতে বলেছি। খরচের বিষয়টি জানার পরে আমরা সবিস্তার রিপোর্ট পাঠাব মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। তাঁর অনুমোদন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কাজ শুরু করে দেব।” মন্ত্রী জানান, নয়া এই অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা করা হচ্ছে মহাকরণের ‘মেন’ এবং ‘অ্যানেক্স’ দুই অংশের জন্যই।
দমকল বিভাগ সূত্রের খবর, আগুন প্রতিরোধে এবং আগুনের বিরুদ্ধে চটজলদি ব্যবস্থা নিতে দমকলের দু’টি কন্ট্রোল রুম খোলা হবে। একটি হবে মহাকরণের মধ্যে। অন্যটি লালবাজারে। মন্ত্রীর কথায়, “পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় রেখে আমরা এই ব্যবস্থা করতে চাই বলে লালবাজারেও একটি কন্ট্রোল রুম খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দু’টি কন্ট্রোল রুমই ২৪ ঘণ্টা কাজ করবে।” |
বাক্স আছে, নেই অগ্নি-নির্বাপণ যন্ত্র। রবিবার, মহাকরণে। ছবি: সুমন বল্লভ |
পাশাপাশি, মন্ত্রী ও উচ্চপদস্থ কর্তাদের ঘর থেকে শুরু করে পুরো মহাকরণেই ‘স্মোক অ্যালার্ম’ এবং ‘হিট অ্যালার্ম’ লাগানো হবে। মহাকরণ চত্বর জুড়ে বসানো হবে ‘ক্লোজ্ড সার্কিট টেলিভিশন’, যা অগ্নি-নিরাপত্তার পাশাপাশি মহাকরণের নজরদারিতেও কাজে লাগবে। এ ছাড়া, শট সার্কিটের সম্ভাবনা রুখতে বিভিন্ন জায়গায় ‘মাল্টিপল সার্কিট ব্রেকার’ বা এমসিবি-ও বসানো হবে। মন্ত্রী জানিয়েছেন, পূর্ত (ইঞ্জিনিয়ার) বিভাগের সঙ্গে দমকল বিভাগ যৌথ ভাবে এই কাজ করবে।
আগুন প্রতিরোধ ব্যবস্থা যে মহাকরণে নিশ্ছিদ্র নয়, তার প্রমাণও মিলেছে একাধিক বার। ২০০৮ সালে মহাকরণের নিজস্ব দমকল দফতরেই আগুন লাগে। সে সময়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথিও নষ্ট হয়ে যায়। ২০০৯ সালে আগুন লেগেছিল একতলার সমবায় অফিসে। যদিও তাতে তেমন কোনও ক্ষতি হয়নি। পূর্ত দফতর সূত্রে অবশ্য বলা হচ্ছে, ইতিমধ্যেই মহাকরণে এমসিবি ব্যবস্থা যথেষ্ট ভাল। তবে আগুন প্রতিরোধে অবিলম্বে অ্যালার্মগুলি লাগানো উচিত বলে মনে করে পূর্ত দফতর।
তবে, এত কিছুর পরেও মহাকরণে অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা নিশ্ছিদ্র করা যাবে না বলে স্বীকার করে নিচ্ছেন খোদ মন্ত্রীই। তার প্রধান কারণ, পুরো মহাকরণ জুড়েই মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিদ্যুতের তার। মন্ত্রীর কথায়, “এই জঙ্গল এক দিনে তৈরি হয়নি। তাই এক দিনে সব পাল্টে ফেলাও সম্ভব নয়। তবে আমরা ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছি। কিছু দিনের মধ্যেই পুরো মহাকরণের বৈদ্যুতিক সার্কিটও ঢেলে সাজা হবে।” |