স্কুল কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে সমস্যায় পড়েছে ময়ূরেশ্বর থানার কোটাসুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬২ জন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। এমনই অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দা, অভিভাবক এবং ছাত্র-ছাত্রীদের। স্কুল কর্তৃপক্ষ অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
বর্ধমানের একটি স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিক ব্যবহারিক পত্রের প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ এ বার পরীক্ষার্থীদের পুরনো প্রশ্নপত্রে নেওয়া পরীক্ষাগুলি বাতিল বলে ঘোষণা করে। তারা ঠিক করে নতুন প্রশ্নপত্র তৈরি করে পুনরায় পরীক্ষা নেওয়া হবে। সেই মর্মে সংসদ তরফে সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তিও জারি করা হয়। সমস্ত স্কুলকে চিঠি দিয়ে জানানো হয় ২৩ ও ২৪ ডিসেম্বর বাতিল করা প্রশ্নপত্র, সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক অফিসে জমা দিয়ে নতুন প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করতে হবে। ৪ থেকে ২০ জানুয়ারির মধ্যে নতুন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নিয়ে ২৫ জানুয়ারির মধ্যে উত্তরপত্র-সহ আনুষঙ্গিক কাগজপত্র সংসদকে জমা দিতে হবে।
অভিযোগ, নির্দিষ্ট দিন পার হলেও কোটাসুর উচ্চ বিদ্যালয় নতুন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেয়নি। স্কুল কর্তৃপক্ষ বাতিল প্রশ্নপত্র আঞ্চলিক অফিসে জমা দিয়ে নতুন প্রশ্নপত্র সংগ্রহের কাজটিও এখনও করেননি। বাতিল প্রশ্নপত্রেই তাঁরা ৬-১১ জানুয়ারি পর্যন্ত পরীক্ষা নিয়েছেন। শুক্রবার সংসদ থেকে ফোন পেয়ে কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। তখনই স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁদের ‘ভুলে’র কথা বুঝতে পারেন। তাঁরা নতুন প্রশ্নপত্রে ফের পরীক্ষা নেওয়া হবে বলে পরীক্ষার্থীদের জানান। ঘটনা চাউর হতেই পরীক্ষার্থীদের মধ্যে শোরগোল পড়ে যায়। কর্তৃপক্ষের ‘গাফিলতি’র দায় নেওয়ার ব্যাপারে তাদের আপত্তির কথা জানায়। নতুন করে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যাপারে তারা খানিকটা বেঁকেও বসেছে। ছাত্র-ছাত্রীদের ক্ষোভ, “স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের ফের নতুন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিতে হবে বলে জানিয়েছেন। এতে আমরা মানসিক ভাবে চাপে পড়েছি। জানি না কী হবে! স্কুল কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতেই আমরা ভুগছি।” ঘটনার ফলে ওই স্কুলের বিজ্ঞান ও ভূগোল বিভাগের মোট ৬২ জন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী দুঃশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
প্রধান শিক্ষক কল্পতরু চট্টোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেন, “গাফিলতি নয়। আসলে সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি জারির কথা জানতে পারিনি। সরকারি ভাবেও আমাদের চিঠি দিয়ে জানানো হয়নি। তবে পরীক্ষার্থীদের দুশ্চিন্তার কোনও কারণ নেই। সংসদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমাদের মত ঘটনা রাজ্যের আরও বেশ কিছু স্কুলে ঘটেছে। ওই সব স্কুলের পরীক্ষার্থীদের জন্য সংসদ নতুন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষার সুযোগ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।” কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষের ভুলের দায় ওই ছাত্র-ছাত্রীদের কেন বহন করতে হবে এ বিষয়ে অবশ্য কোনও জবাব মেলেনি। অথচ একই থানার লোকপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ দে জানালেন, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ চিঠি দিয়ে সমস্তটাই জানিয়েছিল। সেই মত তাঁরা বর্ধমানের আঞ্চলিক অফিস থেকে নতুন প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে পরীক্ষা নিয়েছেন। ঘটনাচক্রে ‘অভিযুক্ত’ স্কুলটির এই মুহূর্তে কোনও পরিচালন সমিতি না থাকায়, জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) বিমলকুমার ঘোষ স্কুলটির প্রশাসনিক দায়িত্বে আছেন। তাঁর বক্তব্য, “স্কুল-প্রশাসক হিসেবে আমার দায়িত্ব কেবল বেতন সংক্রান্ত কাগজপত্রে সই করা। তবে এ রকম কিছু ঘটে থাকলে স্কুল কর্তৃপক্ষ গাফিলতির দায় এড়াতে পারেন না। রাজ্যের এতগুলি স্কুল চিঠি পেলেন। আর ওই স্কুল পেল না? এটাকে অজুহাত ছাড়া কী-ই বা বলা যেতে পারে। অভিযোগ তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |