বীরভূমের পাঁচামিতে বন্ধ হয়ে থাকা পাথর খাদান ও পাথর ভাঙার কলগুলি (ক্রাশার) খোলার জন্য জেলা প্রশাসনকে ‘শান্তি কমিটি’ গঠন করার নির্দেশ দিলেন রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। রবিবার সিউড়িতে তিনি জেলা প্রশাসনের আধিকারিক ও দলের বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক করার পরে, মহম্মদবাজার ব্লকের পাঁচামি পাথর শিল্পাঞ্চল ঘুরে দেখেন। পাঁচামি থেকে ফেরার পথে সাগরবাঁধি মোড়ে খাদান ও ক্রাশার খোলার দাবিতে মন্ত্রীর গাড়ি আটকান আদিবাসীরা। তাঁরা রাস্তায় বসে পড়েন। মন্ত্রীর আশ্বাস পেয়ে তাঁরা পথ ছাড়েন।
২০১০ সালের গোড়ায় খাদান ও ক্রাশারের মালিক পক্ষের সঙ্গে আদিবাসীদের ‘অশান্তি’র জেরে পাঁচামি পাথর শিল্পাঞ্চলের পাথর খাদান ও ক্রাশারগুলি বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ দিন পরে প্রথম চালু হয় ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল মিনারেল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ট্রেডিং কর্পোরেশন’-এর খাদান-ক্রাশার। পরে আরও কিছু খাদান-ক্রাশার চালু হয়।
প্রশাসন সূত্রের খবর, এ দিন সার্কিট হাউসের বৈঠকে শিল্পমন্ত্রী পাঁচামির পরিস্থিতি নিয়ে খোঁজ নেন। জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা তাঁকে জানান, কয়েকটি খাদান ও ক্রাশার চালু হয়েছে। এর পরেই মন্ত্রী ‘শান্তি কমিটি’ গঠন করে সমস্ত বন্ধ খাদান-ক্রাশার খুলে রাজস্ব আদায় বাড়াতে বলেন প্রশাসনিক কর্তাদের। |
সেখানেই মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ‘জেলা আদিবাসী গাঁওতা’র নেতারা পাঁচামির অবৈধ খাদান ও ক্রাশার বন্ধ করা এবং পাঁচামির সার্বিক উন্নয়নের দাবি সংবলিত স্মারকলিপি দেন। এর প্রেক্ষিতে প্রশাসনকে ওই এলাকার রাস্তা, স্বাস্থ্য, পানীয় জল ও রেশন ব্যবস্থার উন্নতির নির্দেশ দেন পার্থবাবু। পরে জেলাশাসক বলেন, “শিল্পমন্ত্রী শান্তি কমিটি গঠন করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা পাথর শিল্পাঞ্চলে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফেরাতে চেষ্টা করছি।” তিনি জানান, সরকারি হিসেব অনুযায়ী পাঁচামিতে ৩৭টি খাদানের মধ্যে ১২-১৩টি চলছে। ৪০০-৪৫০ ক্রাশারের মধ্যে কমবেশি ২৫০টি চালু হয়েছে।
দুপুরে পার্থবাবু কর্পোরেশনের পাঁচামির হাতগাছা ‘স্টোনমাইন প্রজেক্ট’-এর খাদান-ক্রাশার পরির্দশন করেন। তাঁর অভিযোগ, “কর্পোরেশনের ৪৯৫ একর জায়গার মধ্যে ২২০ একর জায়গা বেদখল হয়ে গিয়েছে।” গাঁওতা নেতৃত্ব মন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেন, “আদিবাসীদের অনেক জমিই খাদান ও ক্রাশার মালিকরা দখল করে নিচ্ছে।” মন্ত্রীর আশ্বাস, “প্রশাসনকে দেখতে বলেছি।” পাথর ব্যবসায়ী সংগঠনের তরফেও মন্ত্রীর কাছে খাদান-ক্রাশার চালুর আর্জি জানানো হয়। বোলপুরের শিবপুর মৌজায় রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের অধিগৃহীত ২১০ একর জমির ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে পার্থবাবু বলেন, “ওই জমি নিয়ে আন্দোলন হয়েছিল, এ কথা মাথায় রাখতে হবে। তাই ওই জমির ব্যাপারে এখনই কিছু ভাবছি না।” শ্রীনিকেতন-শান্তিনিকেতন উন্নয়ন পর্ষদের ৫ একর জায়গায় বোলপুরে একটি উন্নতমানের আইটি হাব গড়ার কথাও জানান শিল্পমন্ত্রী। তাঁর আশ্বাস, রাজ্য সরকার অধিগৃহীত আমোদপুর সুগার মিল খোলারও চেষ্টা চলছে। |