বামফ্রন্ট ক্ষমতায় থাকাকালীন কখনও কৃষকের আত্মহত্যার ক্ষেত্রে চাষে বিপর্যয়ের কথা স্বীকার করেনি। ক্ষমতায় আসার পরে এখন সেই সুর রপ্ত করেছে তৃণমূল। এমনই অভিযোগ করলেন সিপিআই (এমএল) লিবারেশন-এর পলিটব্যুরো সদস্য কার্তিক পাল। সিপিএম এবং কংগ্রেস যখন আত্মঘাতী চাষিদের বাড়ি যাওয়ার কর্মসূচি নিয়েছে, তার আগেই তাঁরা বর্ধমানের তেমন পাঁচ চাষির বাড়িতে ঘুরে এসেছেন বলে জানিয়েছেন কার্তিকবাবু।
শনিবার বর্ধমানে কার্তিকবাবু জানান, তাঁরা যে পাঁচ চাষির বাড়িতে গিয়েছেন, প্রত্যেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, ঋণের চাপ ও উৎপন্ন ফসল বিক্রি করতে না পারাই আত্মহত্যার কারণ। তাঁর অভিযোগ, “পশ্চিমবঙ্গে কৃষি সঙ্কটের শুরু বামফ্রন্ট সরকারের আমল থেকে। কেন্দ্রের উদার অর্থনীতি, শিল্পনীতি, বিকল্প কৃষিনীতি গ্রহণ করতে সে সরকার ব্যর্থ হয়েছিল। রাজ্যে চাষিদের আত্মহত্যা বামফ্রন্টের আমলেও হয়েছে। তখনও বামফ্রন্ট সরকার বা সিপিএমের কৃষকসভা এই আত্মহত্যার পিছনে ফসলে বিপর্যয়ের কথা স্বীকার করেনি। এই অস্বীকার আসলে সরকার পরিচালনা করার অভ্যাস ও ভাষা। যেটা এখন রপ্ত করেছে তৃণমূল।” যে কৃষকের স্বার্থ নিয়ে আন্দোলন করে ক্ষমতায় এসেছিল তৃণমূল, সরকারে থেকে এখন তাদেরই অস্বীকার করতে চাইছে তারা, দাবি কার্তিকবাবুর।
সিপিআই (এমএল) লিবারেশন-এর দাবি, শস্যগোলা বর্ধমানে কৃষক ও খেতমজুর মিলিয়ে মোট ১৫ জন আত্মঘাতী হয়েছেন। অবিলম্বে এই ১৫ জন-সহ রাজ্যের মোট ২৫ জন আত্মঘাতী চাষির পরিবার পিছু ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তাঁদের ব্যাঙ্ক ও সমবায় সমিতিতে থাকা ঋণ মকুব করা হোক। পাশাপাশি প্রতিটি হাটে সরকারি উদ্যোগে ধান ও আলু ক্রয়, মহাজনি ও বেসকাররি ঋণ নিষিদ্ধ ঘোষণা ইত্যদি দাবি জানানো হয়। এ সব ব্যাপারে জেলাশাসকের কাছেও স্মারকলিপি দেওয়া হবে বলে সংগঠনের তরফে জানানো হয়।
সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, তারা যে সব আত্মঘাতী চাষির বাড়ি গিয়েছিল তাঁরা হলেন, ভাতারের বেলডাঙার সুশীল ঘোষ ও নিত্যানন্দপুরের সফর মোল্লা, ওই ব্লকের বেলেন্ডা গ্রামের চাষি বরুণ পাল, মেমারি-১ ব্লকের রাজপুর গ্রামের অমিয় সাহা এবং পূর্বস্থলী-১ ব্লকের চণ্ডীপুর গ্রামের তাপস মাঝি। কার্তিকবাবু বলেন, “আত্মঘাতীদের পরিবারের লোকেরা আর্থিক কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। অবিলম্বে সরকারের উচিত এই পরিবারগুলিকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া।”
এ দিকে, শনিবার পূর্বস্থলীর পারুলিয়ায় চাষি আত্মহত্যার প্রতিবাদে জনসভা করার পরের দিন রবিবার জেলা কংগ্রেসের তরফে গলসিতেও সভা করা হয়। এ দিন গলসি ব্লক ও যুব কংগ্রেসের উদ্যোগে স্থানীয় পুরষা থেকে পারাজ বাজার পর্যন্ত সাত কিলোমিটার পদযাত্রা হয়।
জেলা কংগ্রেস নেতা কাশীনাথ গঙ্গোপাধ্যায় ও ইন্তেখাব আলম বলেন, “চাষিরা বামফ্রন্টের আমলে অবহেলিত ছিল। সেই অবহেলা নিয়ে আন্দোলন করে রাজ্যের ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। এখন আত্মঘাতী চাষিদের সম্পর্কে কটূক্তি করে তারা বুঝিয়ে দিচ্ছে, ক্ষমতায় থাকা দলের কাছে দায় অস্বীকার করা ছাড়া অন্য কিছু আশা করা যায় না।” জেলা কংগ্রেসের তরফে জানানো হয়েছে, প্রতিটি ব্লকেই এমন সভা ও মিছিল করবে দল। |