সর্বদলীয় বৈঠকের পরে কেটে গিয়েছে প্রায় দেড় মাস। কিন্তু এখনও কাটোয়া মহকুমা প্রশাসন মঙ্গলকোটের সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের ফেরানোর কোনও ব্যবস্থা করেননি। এই অভিযোগ তুলে চিঠি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করলেন মঙ্গলকোটের সিপিএম বিধায়ক শাহজাহান চৌধুরী।
মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠানো চিঠিতে শাহজাহান চৌধুরী অভিযোগ করেছেন, মঙ্গলকোট, খেঁড়ুয়া, বনপাড়া-সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের ১৬৫ জন ঘরছাড়া। গত এক মাসে প্রশাসন সিপিএমের তাদের ঘরে ফেরাতে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি। তাই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁদের ফেরানোর জন্য ‘জরুরি পদক্ষেপ’ করতে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
গত ৮ ডিসেম্বর কাটোয়া মহকুমাশাসকের কার্যালয়ে সিপিএমের ঘরছাড়াদের ফেরাতে একটি সর্বদলীয় বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে সিপিএমের পক্ষ থেকে ১৬৫ জনের একটি তালিকা পেশ করা হয়েছিল। পাশাপাশি, এক সপ্তাহের মধ্যে ঘরছাড়াদের ফেরানোর দাবি জানিয়েছিল তারা। মহকুমাশাসকের কাছে দেওয়া ওই তালিকা অনুযায়ী, মঙ্গলকোটের ৬৯ জন, ঝিলু ২ পঞ্চায়েতের বনপাড়া গ্রামের ১৪ ও ভাল্যগ্রামের খেঁড়ুয়ার ৪০ জন সিপিএম কর্মী-সমর্থক ঘরছাড়া। ওই বৈঠকে স্থির হয়, প্রাথমিক তদন্তের পরেই ঘরছাড়াদের গ্রামে ফিরিয়ে দেবে মঙ্গলকোট থানার পুলিশ।
খেঁড়ুয়া গ্রামের সিপিএম নেতা তথা সিটু-র শ্যামবাজার শাখার সম্পাদক অশোক ঘোষ বাবার মৃত্যুর পরে পারলৌকিক কাজ করতেও গ্রামে ঢুকতে পারেননি। সিপিএমের অভিযোগ, বিধানসভা নির্বাচনের আগে থেকেই মঙ্গলকোটের বিভিন্ন জায়গায় সন্ত্রাস চালাচ্ছে তৃণমূল। মঙ্গলকোট, ঝিলু ২ ও ভাল্যগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় তার প্রভাব পড়েছে সব থেকে বেশি।
সিপিএমের ভাগীরথী-অজয় জোনাল কমিটির সম্পাদক দুর্যোধন সরের ক্ষোভ, “পুলিশ-প্রশাসন প্রথম থেকেই ঘরছাড়াদের ফেরানোর ব্যাপারে উদ্যোগী হচ্ছিল না। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে জানানোর পরে সর্বদলীয় বৈঠক হয়। সেখানে নির্দিষ্ট ঠিকানা-সহ ঘরছাড়াদের তালিকাও দেওয়া হয়। কিন্তু মাসখানেক কেটে গেলেও তদন্ত শেষ হল না।” শাহজাহান চৌধুরীর দাবি, “প্রশাসন যে ঘরছাড়াদের ফেরাতে ব্যর্থ, সে কথা বলার অবকাশ রাখে না। তাই মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে হস্তক্ষেপ করতে অনুরোধ জানিয়েছি।” বস্তুত, মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে ইতিমধ্যেই ঘরে ফিরেছেন ভাঙড়, শাসন-সহ বেশ কয়েকটি জায়গার সিপিএম কর্মী-সমর্থকেরা।
মঙ্গলকোটের তৃণমূল নেতা অপূর্ব চৌধুরী বলেন, “ঘরছাড়াদের ফেরাতে প্রশাসন যা পদক্ষেপ করবে, তাতে আমরা সহযোগিতা করব। তবে ঘরছাড়াদের ফেরাতে কেন দেরি হচ্ছে, তা প্রশাসনই বলতে পারবে।”
কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি দীনবন্ধু পালের মতে, “ঘরছাড়াদের ফেরাতে প্রশাসনের আরও দ্রুত পদক্ষেপ করা উচিত ছিল।” বিজেপি-র মঙ্গলকোটের নেতা অলোকতরঙ্গ গোস্বামীর দাবি, “প্রথম থেকেই প্রশাসনের মনোভাব ছিল, দেরি করে ঘরছাড়াদের ফেরানো হবে। এখন তা আরও স্পষ্ট হচ্ছে।”
মহকুমাশাসক (কাটোয়া) দেবীপ্রসাদ করণম বলেন, “পুলিশকে তদন্ত করে ঘরছাড়াদের ফেরানোর ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছিল।” মঙ্গলকোট থানার ওসি দীপঙ্কর সরকার জানান, তদন্ত শেষ করে প্রাথমিক রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। দু’-এক দিনের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পাঠানো হবে। এসডিপিও (কাটোয়া) ধ্রুবজ্যোতি দাস বলেন, “খুব তাড়াতাড়ি আরও একটি সর্বদলীয় বৈঠক করা হবে। তার পরে দ্রুত ঘরছাড়াদের ফেরানো হবে।” |