কুলটির পরে এ বার আসানসোল। পুরসভায় কাজকর্ম নিয়ে জোটসঙ্গী তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করল কংগ্রেস।
কংগ্রেসের অভিযোগ, পুরসভায় নানা কাজে চলছে চূড়ান্ত অনিয়ম। এই অনিয়ম, অনুন্নয়ন এবং কংগ্রেস কাউন্সিলরদের প্রতি অবজ্ঞা ও লাগামছাড়া বৈষম্যের অভিযোগ তুলে শুক্রবার সন্ধ্যায় আসানসোলের মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্মারকলিপি দেন কংগ্রেস কাউন্সিলরেরা। মেয়রকে তীব্র ভাষায় আক্রমণও করা হয়। বিক্ষোভ কর্মসূচীতে নেতৃত্ব দেন খোদ পুরসভার ডেপুটি মেয়র তথা কংগ্রেস নেতা অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়। ছিলেন মেয়র পারিষদ রবিউল ইসলাম-ও। জোট শরিকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে গণ আন্দোলনে নামার হুমকিও দিয়েছেন কংগ্রেসের কাউন্সিলরেরা। তবে জোট শরিকের এই বিদ্রোহকে ঘরোয়া কোন্দল ও নাটক বলে মন্তব্য করেছে বিরোধী বাম শিবির।
কংগ্রেসের আচরণে কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়। কাউন্সিলরদের আক্রমণের মুখে পড়ে তাঁর দাবি, “ওঁরা অসত্য বলছেন। আমি বৈষম্য করি না। পুরসভায় কোনও অনিয়ম-ও হচ্ছে না।”
কংগ্রেস কাউন্সিলরদের অভিযোগ, পুরসভার ক্ষমতা দখলের আড়াই বছর পরেও তেমন কোনও উল্লেখযোগ্য উন্নয়নমূলক কাজ হয়নি। নির্বাচনের সময় এবং পরে শপথ নেওয়ার সময় একাধিক প্রতিশ্রুতি তাঁরা দিয়েছেন। কিন্তু তার সিকি ভাগ কাজও করতে উঠতে পারেনি এই পুরবোর্ড। এই অবস্থায় সাধারণ নাগরিকদের প্রশ্নবাণের মুখে পড়তে হচ্ছে কাউন্সিলরদেরই। একই সঙ্গে কংগ্রেস কাউন্সিলরেরা অভিযোগ তুলেছেন, বিএসইউপি প্রকল্পে বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে পুরসভা ধারাবাহিক ভাবে বেনিয়ম করে চলেছে, জনমানসে যা বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করছে। এছাড়া, গরিব নাগরিকদের যে সব সুযোগ সুবিধা পাওয়ার কথা তাঁরা তা পাচ্ছেন না।
এ দিন আলোচনার সময় অমরনাথবাবু মেয়রের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, “আপনি শিষ্টাচার ভুলে যাচ্ছেন। পুরসভায় এমন অনেক নীতি নির্ধারিত হচ্ছে যা জোট শরিক হিসাবে কংগ্রেসের জানা উচিত। অথচ আমাদের জানানো হচ্ছে না। আমরা অন্ধকারেই থেকে যাচ্ছি।” অমরবাবুর অভিযোগ, নিয়মিত মেয়র পারিষদদের বৈঠক হচ্ছে না। অথচ মেয়র একক ভাবে একের পর এক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।
এ দিন জল বিভাগের মেয়র পারিষদ রবিউল ইসলাম অভিযোগ করেন, পুরসভায় আড়াই বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরেও নতুন জল প্রকল্পটি চালু করার ব্যাপারে মেয়রের কোনও আগ্রহ নেই। এই অবস্থায় সাধারণ নাগরিকেরা সরাসরি রবিউলবাবুকেই দায়ী করছেন। রবিউলবাবুর কথায়, “সিপিএম যে ভাবে সবাইকে উপেক্ষা করে চলত, তৃণমূলের মেয়রও একই পদ্ধতিতে এগোচ্ছেন।” রবিউলবাবু হুমকির সুরে জানিয়েছেন, কংগ্রেসের কাউন্সিলরদের প্রতি মেয়রের এই তাচ্ছিল্য বেশিদিন তাঁরা বরদাস্ত করবেন না। তাঁরা সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে তীব্র গণ আন্দোলনে নামবেন। এক সময় তিনি মেয়রের সঙ্গে তীব্র বাদানুবাদেও জড়িয়ে পড়েন।
মেয়র অবশ্য জানিয়েছেন, অর্থের অভাবে উন্নয়ন কিছুটা থমকে আছে। এক সপ্তাহের মধ্যেই টাকা এসে যাবে। কাজও শুরু হবে। জলপ্রকল্পটিও শেষ হবে এই বছরের শেষে।
এ দিকে, কংগ্রেসের এহেন বিক্ষোভকে লোক দেখানো বলে মন্তব্য করেছেন বিরোধী বাম শিবিরের কাউন্সিলরেরা। বিরোধী নেতা প্রাক্তন মেয়র সিপিএমের তাপস রায় বলেন, “এটা স্রেফ নাটক। ঘরোয়া কোন্দল ছাড়া কিছু নয়।” তাঁদের দাবি, মুখে প্রতিবাদ না করে বোর্ডের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনুক কংগ্রেস।
দিন কুড়ি আগেই কুলটি পুরসভায় বিক্ষোভ দেখায় কংগ্রেস। উন্নয়নমূলক কাজে পুরপ্রধান তথা কুলটির বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বৈষম্যের অভিযোগ আনে তারা। সে দিন সকাল থেকে কংগ্রেসের পতাকা নিয়ে মাইকে স্লোগান দিতে দিতে পুরসভা চত্বরে ঢুকে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। প্রকাশ্যেই পুরপ্রধানের উদ্দেশ্যে মাইকে নিজেদের ক্ষোভের কথা জানান উপপ্রধান তথা কংগ্রেস নেতা বাচ্চু রায়। |