ফের উল্টে গেল অবৈধ কয়লা বোঝাই লরি। শনিবার গভীর রাতে জামুড়িয়ার কুনস্তরিয়া এরিয়ায় ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে লরিটি উল্টে যায়। চালক ও খালাসি পলাতক। এই ঘটনার পরে ফের খনি অঞ্চলে অবৈধ কয়লা কারবারের রমরমা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোরও।
পুলিশ জানায়, শনিবার রাত ১২টা নাগাদ কয়লা পাচারের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। বেআইনি কয়লা বোঝাই একটি লরিকে তাড়া করা হয়। কুনস্তরিয়া এরিয়ার একটি খাটালের কাছে পুলিশের গাড়ির সঙ্গে সামান্য ধাক্কাও হয় লরিটির। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেটি উল্টে যায়। স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের অবশ্য দাবি, চারটি লরি অবৈধ কয়লা নিয়ে যাচ্ছে, পুলিশকে সে খবর দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ আসার আগেই তিনটি লরি পালিয়ে যায়। একটির সঙ্গে পুলিশের গাড়ির ধাক্কা লাগে।
গত মাস ছয়েক ধরে খনি এলাকায় অবৈধ কয়লার কারবার প্রায় বন্ধ রয়েছে বলে দাবি করে আসছিল পুলিশ। কিন্তু সম্প্রতি খনি এলাকার নানা জায়গা থেকে কয়েকটি কয়লা বোঝাই ট্রাক আটক করে পুলিশ। দিন দশেক আগেই জামুড়িয়ার চাঁদা মোড়ে একটি কয়লা বোঝাই লরি উল্টে যাওয়ায় চাপানউতোর শুরু হয়। এ দিনের লরি উল্টে যাওয়ার ঘটনার পরে এলাকায় ফের অবৈধ কয়লা কারবার চালু হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে নানা পক্ষ। |
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, কাঁটাগোড়িয়ায় অবৈধ খনন চলছে। সেখান থেকে কাটা কয়লা এনে রাখা হয় তপসির একটি ডিপোয়। তার পরে লরিতে করে পাচার হয়। স্থানীয় তৃণমূল নেতা দীনবন্ধু মণ্ডলের অভিযোগ, “সিআইএসএফ ক্যাম্প, ইসিএলের নিরাপত্তা আধিকারিকের ও এরিয়ার জেনারেল ম্যানেজারের বাংলোর সামনে দিয়ে প্রতি দিন সন্ধ্যায় অবৈধ কয়লার গাড়ি যায়। আমরা নিয়মিত পুলিশকে জানিয়ে আসছি। শনিবার রাতেও আমরাই খবর দিই।” রবিবার সকালে স্থানীয় সিআইএসএফ ক্যাম্পে বিক্ষোভ দেখা তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। তাঁদের অভিযোগ, রোজ অবৈধ কয়লার গাড়ি যাতায়াত করলেও তা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে না। ক্যাম্পের আধিকারিক ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে বিক্ষোভ থামে।
সিপিএমের অজয় জোনাল কমিটির সম্পাদক মনোজ দত্তের দাবি, কাঁটাগোড়িয়া থেকে এক কিলোমিটার দূরে নর্থ সিহারসোল কোলিয়ারির পাশে অবৈধ কয়লা খনন চলছে। তিনি জানান, ২০০৮ সালে ইসিএল জানিয়েছিল, এই অবৈধ খননের জেরে তাদের খনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অবৈধ খনির সুড়ঙ্গ এগিয়ে আসছে। এর জেরে এলাকায় ধোঁয়া, আগুন বেরোনোর সম্ভাবনা ছিল। মনোজবাবু বলেন, “২০১০ থেকে পুলিশ ও ইসিএলের অভিযানে ওই জায়গায় অবৈধ খনন বন্ধ হয়। আবার সেখানে খনন শুরু হয়েছে। জল ঢুকে যাওয়ার কারণে নর্থ সিহারসোল বন্ধ করা হয়েছে। সম্প্রতি ইসিএল প্রস্তাব দিয়েছে, ওখানে খোলামুখ খনি হবে। কিন্তু শ্রমিক সংগঠনগুলির বাধায় তা তারা করতে পারছে না।” তাঁর দাবি, “অবৈধ খননের জেরে ভূগর্ভ বিপন্ন বলে প্রতিপন্ন করতে পারলেই ইসিএলের পক্ষে খোলামুখ খনি চালু করা সহজ হবে। তাই পুলিশ এবং ইসিএল কয়লা কারবার বন্ধে উদ্যোগী নয়।” ইসিএলের সদর দফতরের এক আধিকারিক অবশ্য বলেন, “ইসিএল খোলামুখ খুলতে চাইলে তা করবেই। এ জন্য অবৈধ খননে মদত দেওয়ার প্রশ্ন নেই।”
বিজেপি-র আসানসোল জেলা সম্পাদক পবন সিংহের আবার দাবি, জামুড়িয়ায় কাঁটাগোড়িয়া, নর্থ সিহারসোল, সাতগ্রাম, বেনালি, শ্রীপুর, এবি পিট, পরিহারপুর, বৈজয়ন্তীপুরে দেদার অবৈধ কয়লা কারবার চলছে। প্রকাশ্যে গরুর গাড়ি, সাইকেলে কয়লা পাচার হচ্ছে। তাঁর অভিযোগ, “কয়লা কারবারে শাসক পক্ষও যুক্ত। কাঁটাগোড়িয়ায় তৃণমূলের মদতেই কয়লা কাটা চলছে। পুলিশের গাড়িতে ধাক্কা লাগল, অথচ কোনও পুলিশকর্মী আহত হল না। কিন্তু লরি উল্টে গেল। পুলিশ নিজেদের ভাবমূর্তি ঠিক রাখতে এমন নাটক করেছে।” জামুড়িয়ার ব্লক তৃণমূল সভাপতি পূর্ণশশী রায় অবশ্য কয়লা কারবারে তাঁদের দলের কারও জড়িত থাকার কথা সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বলেন, “আমরা বারবারই পুলিশের কাছে কয়লা কারবার বন্ধের দাবি জানাচ্ছি। তা বন্ধ না হলে বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীকে জানাব।”
আসানসোলের এডিসিপি ভাস্কর মুখোপাধ্যায় রবিবার বলেন, “পুলিশ খবর পেলেই কয়লার গাড়ি আটকাচ্ছে। জামুড়িয়ার চাঁদায় পুলিশের তাড়া খেয়ে ওই গাড়িটি পাল্টি খায়। কাল রাতেও একই ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ভিত্তিহীন। কয়লা কারবার বন্ধে অভিযান চলছে।” |