ওঁরাও লড়াই করে জায়গা করে নিয়েছেন। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর সংসারে থেকেও আর্থিক দুরাবস্থা ঘোচানোর তাগিদে একজোট হয়ে পরিশ্রম করেছেন। অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর হার না মানার ওই মানসিকতার জেরেই পরিবারের হাল ধরেছেন। ফলে কয়েক বছর আগেও সামান্য কিছু টাকার জন্য যাদের দোরে দোরে ঘুরতে হত, তাঁরাই এখন টাকা ফি মাসে রোজগার করছেন। আর ওই কৃতিত্বের জন্যই আজ, শনিবার কলকাতার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওঁদের সংবঝনা জানাবেন। ‘ওঁরা’ মানে কোচবিহারের কুমুদবালা বর্মন, সন্ধ্যা বর্মন, শেফালি দাস, নুরজাহান বিবি, পদ্মারানি পাল-সহ মোট ৪৮ জন। সকলে জেলার চারটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যা। জেলার অজ পাড়াগাঁয়ে থেকেও স্বনির্ভর গোষ্ঠী গড়ে যাঁরা সংসারের হাল ফেরানোর লড়াইয়ে নজির গড়েছেন। শুক্রবার কোচবিহার জেলা প্রশাসন ও গ্রামোন্নয়ন সেলের উদ্যোগে ওই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তাঁরা কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। জেলা গ্রামোন্নয়ন সেলের ডেপুটি প্রজেক্ট ডিরেক্টর (মনিটরিং) অমল আচার্য বলেন, “জেলায় এখন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সংখ্যা ১৯ হাজার ৯৩৪। |
কলকাতা রওনা হওয়ার আগে। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব। |
তার মধ্যে পারফম্যান্সের ভিত্তিতে মুখ্যমন্ত্রীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের জন্য ওই ৪টি গোষ্ঠীকে বেছে নেওয়া হয়েছে। তাঁরা এমন সংবর্ধনা পেলে অন্যদের উসাহও বাড়বে।” অতিরিক্ত জেলাশাসক সি মুরুগন বলেন, “স্বনির্ভর গোষ্ঠী গড়ে সাফল্যের স্বীকৃতি হিসাবেই মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের পুরস্কার দেবেন।” জেলা প্রশাসন ও গ্রামোন্নয়ন সেল সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে বিভিন্ন জেলার কয়েকটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে মুখ্যমন্ত্রী সংবর্ধনা জানাবেন। ওই তালিকায় কোচবিহারের তুফানগঞ্জ-১ ব্লকের দশভূজা মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী, মা মঙ্গলচন্ডী স্বনির্ভর গোষ্ঠী ছাড়াও কোচবিহার-১ ব্লকের নবি স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও লোকনাথ স্বনির্ভর গোষ্ঠী রয়েছে। ব্যাঙ্ক ঋণ সময় মতো মেটানো, নিশ্চিত মাসিক রোজগার, সদস্যদের একতা এমনকী, ব্যবসায়িক ভাবনা ও উৎপাদিত সামগ্রীর বিক্রি সংক্রান্ত বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখে তাদের বাছাই করা হয়। ওই মহিলাদের মুখেই শোনা গেল তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর সাতকাহন। জেলার তুফানগঞ্জ-১ ব্লকের মারুগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের ভেলাকোবার দশভূজা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কথাই ধরা যাক। কুমুদবালা বর্মন, সন্ধ্যা বর্মন, চন্দনা সরকার, শ্যামা সেনের মতো ১১জন বিপিএল পরিবারের মহিলা মিলে প্রায় পাঁচ বছর আগে ওই গোষ্ঠী গড়েন। নিজেদের জমানো টাকা আর ব্যাঙ্ক ঋণ নিয়ে সকলে বাঁশ থেকে চাটাই তৈরির ব্যবসা শুরু করেন। এলাকারই এক মহাজন ওই সব চাটাই কিনে ভিন্ন রাজ্যে পাঠাচ্ছেন। ওই গোষ্ঠীর সদস্যা কুমুদবালা বর্মনের কথায়, “এখন ফি মাসে গড়ে প্রত্যেকে ২ হাজার টাকা রোজগার করছি। সংসার চালাতে ওই টাকা খরচ হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার পেলে আমাদের উৎসাহ আরও বেড়ে যাবে। কয়েকটা বছর তো কম কষ্ট করিনি।’’ মা মঙ্গলচণ্ডী স্বনির্ভর গোষ্ঠী আবার আর্থিক লাভের মুখ দেখেছে গাভী পালনের কাজে নেমে। কোচবিহার-১ ব্লকের সুটকাবাড়ির নবি স্বনির্ভর গোষ্ঠী পোল্ট্রি ফার্ম, পানিশালার লোকনাথ স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা শীতলপাটি তৈরি করে সংসারের হাল ধরেছেন। তুফানগঞ্জ-১ ব্লকের বিডিও তাপস সিংহরায়, উওমেনস ডেভলপমেন্ট অফিসার রিনি বসুরা ওই ঘটনায় উচ্ছ্বসিত। বিডিও তাপসবাবু বলেন, “এ ধরনের পুরস্কার ব্লকে আগে আসেনি। ওদের সাফল্য অন্য গোষ্ঠীগুলির কাছে তুলে ধরা হবে।” |