|
|
|
|
|
লুকিয়ে নয়
খোলা মনে |
স্টকিংস, টাইটস, সাসেপন্ডারস। ওই তীব্র আকর্ষণ সহ্যই হয় না আমাদের।
লুকিয়ে দেখি ওদের রূপ। বলি অশ্লীল, নষ্ট, ছি! কিন্তু এ-ও যে ফ্যাশন? চিরশ্রী মজুমদার |
ওদের কথা উঠলেই অনেকেই একটু অস্বস্তি, কুণ্ঠা বোধ করেন। এই যে স্টকিংস, বডিস্টকিংস, টাইটস, সাসপেন্ডারস এদের সম্পর্কিত ধারণাটাই আবছায়া, কুয়াশায় ঢাকা। ও সব এখানে কে আর জানে? যেতে-আসতে দেখা হয় ঠিক। হলিউড পর্দায়, ফ্যাশন ম্যাগাজিন বা শপিং মলের কোণে লুকিয়ে থাকা দোকানে। অদৃশ্য সব ছাপ্পা ওদের মাথায়, ‘প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য’, ‘ফ্যান্টাসি ওয়ার্ল্ড’ ধরনের।
সব থেকে বেশি উসখুস স্টকিংস ও বডি-স্টকিংস নিয়ে। এদের সকলের উৎপত্তি ‘হোস’ নামের একটি টুকরো আবরণী থেকে। অথচ জন্মলগ্নে রমণীয় পদপল্লবের সঙ্গে তার কোনও যোগাযোগই ছিল না। মধ্যযুগের ইউরোপে ওই পোশাকটি পরতেন অভিজাত পুরুষরা। একেবারে মোজা নয় যদিও, তার একটু নকশাদার বড়ভাই। ঠান্ডার প্রকোপ থেকে বাঁচতে গলিয়ে পরতেন। দেখতে হোত অনেকটা টাইটসের মতো। এয়ারোবিক্স, বিশেষ কোনও নাচ বা মূকাভিনয় করার সময় শিল্পীরা যেমনটা পরেন।
ষোড়শ শতাব্দীর আশেপাশে ইংল্যান্ডের রঙ্গমঞ্চে পোশাকটি খুব কাজে দিল। রানি এলিজাবেথ, শেক্সপিয়রের যুগ। নাটকের প্রয়োজনে ছেলেদের মেয়ে ও মেয়েদের ছেলে সাজার চল হয়েছিল। এই ‘ক্রসড্রেসিং’-এর সময়, রোমশ ত্বক লুকানোর জন্য ছেলেরা ত্বকরঙা স্টকিংস, বডি-স্টকিংস ব্যবহার করতেন। যেন এক পরত পেলব খোলস পরে নেওয়া। এই নকল ত্বকের কৌশলটি ভারী মনে ধরল মেয়েদের।
সুযোগ এল অনেক পরে। বিশ শতকের হলিউডে। মেয়েদের পোশাকের সেলাই আস্তে আস্তে হাঁটুর ওপরে উঠছে, তখনই সিল্কের স্বচ্ছ স্টকিংস পরা শুরু। ঢাকা-ই আছে, তবু সবই যেন দেখা যায়। রহস্য রহস্য খেল। খোলামেলা পোশাক পরলেও বডিস্টকিংস বন্ধুর মতো সঙ্গে থাকে। এই প্রায়-অন্তর্বাসটি একই সঙ্গে শরীরে সেঁটে থাকা উর্ধ্ববাস ও অধোবাস। অল্প স্বল্প মেদকে চেপে ধরে তন্বী করে তোলে। ওপরে ছোট ঝুলের পোশাক পরলেও শরীর মোটেও প্রকাশ্যে আসে না। ব্যক্তিগতের ইশারা থাকে, কিন্তু সযত্ন আড়ালে।
যেমন ‘সিডাকটিভ’ তেমনি ‘হাই ফ্যাশন’। লাস্যময়ী অভিনেত্রীরা ব্যবহার করেন টেক্সচারড স্টকিংস ও বডিস্টকিংস। বুনোট ও গঠন-বিন্যাসে অভিনব। স্বচ্ছ ছাড়াও রঙিন, ডিজাইনার, লেস বা জালিদার নানা রকম হয়। পরলেই চেনা চেহারাটা আমূল বদলে যায়। হঠাৎ করে জংলি বাঘিনি বা জালে ধরা মৎস্যকন্যা। নকল খোলস অর্থাৎ লেপার্ড প্রিন্টেড বা নেট স্টকিংস পরার ফল। উলের তৈরি লেস-ফ্রিলে সাজানো স্টকিংস আবার তুলনায় নিরীহ, ভিক্টোরিয়ান আমলের রাজকন্যা মনে হয়। নাইলন স্টকিংসের গ্লাভস সংস্করণ তো বিউটি কনটেস্টের শেষ রাউন্ডে প্রায়ই দেখে থাকবেন। ব্রহ্মাণ্ডসুন্দরী হওয়ার পর সুস্মিতা সেন-এর সেই অবিস্মরণীয় অভিব্যক্তিটি মনে করুন। কোন জিনিসটির কথা হচ্ছে বুঝে গেছেন আশা করি।
স্টকিংস নামক এই সুন্দর পোশাকটি নিয়ে একটি মহা মুশকিল আছে। ইলাস্টিক সব সময় বিশ্বস্ত থাকে না, নির্দিষ্ট স্থান থেকে পিছলে নেমে আসে। এই ‘ওয়ার্ডরোব ম্যালফাংশন’ জনিত সঙ্কট থেকে মুক্তি পেতে স্টকিংসকে একেবারে নিম্নাঙ্গের অন্তর্বাসের সঙ্গে সেলাই করে দেওয়া হয়। বা একেবারে ওপরের অংশে একটা গার্টার বেল্ট লাগিয়ে নেওয়া হয়। নয়তো ক্লিপ দেওয়া বেল্ট বা সাসপেন্ডারস। পোশাকটাকে আঁকড়ে ধরে থাকে। স্থানচ্যুত হতে দেয় না।
বহু পরিচিত লেগিংস বা টাইটসও গড়নের দিক দিয়ে স্টকিংসেরই কাছাকাছি। স্টকিংসের ধারণাটাকেই একটু অদলবদল করে নিয়ে এই রংচঙে পোশাকের জন্ম। স্টকিংসের অ্যাডাল্ট আঘ্রাণ নেই তার মধ্যে, মিষ্টি মিষ্টি ব্যাপার, গঠনটা স্পষ্ট বোঝা গেলেও পা-টা শুধুই সুন্দর হয়ে ওঠে ওতে। কাপড়টা স্বচ্ছ তো নয়ই, পুরুও একটু বেশি। ট্রাউজার্সের বদলি বললেই ঠিক হবে।
প্ররোচনা বা উসকানি নয়, স্টকিংস পরিবারের ইচ্ছেটা কিন্তু আপনাকে আরও একটু সুন্দর করে তোলা। সেই রূপ দেখে কেউ কেউ মোহাচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে, লুকিয়ে তাকাচ্ছে। এর মূলে তো অসচেতনতা, শরীর বিষয়ে সমাজের একাংশের পাখি-পড়া ছুঁৎমার্গ। সে সব ছুঁড়ে না ফেললে, ওই শেকলে আটকে গেলে, শুধু ফ্যাশন নয়, জীবনেরও অনেকটাই ফাঁকি থেকে যায়। |
|
|
|
|
|