|
|
|
|
সবার উপরে ভারত সত্য |
ওয়ার্ল্ড ম্যাপ খুলুন। ডাইনে ঘেঁষে, একটু নীচে, সিঙাড়ার মতো দেখতে, ওই যে, পেয়েছেন?
সেই দেশের কয়েকটা খবর দিই। এমন আরও ঢের আছে। রিপাবলিক ডে’তে খুঁজলেই হয়! |
|
• ২৬ জানুয়ারি আমজনতার দিন। তাই সবার একটু মিষ্টিমুখ হোক। পৃথিবীতে আম উৎপাদনের রেস-এ তুড়ি মেরে ফার্স্ট ভারত। প্রত্যেক বছর গড়ে প্রায় সওয়া কোটি টন আম ভারতীয় গাছে ধরে। হিসেব কষলে দাঁড়ায় সমস্ত পৃথিবীর আম উৎপাদনের ৫১.১%। আরও হিসেবের পর দেখা যাচ্ছে, যে ভারতের এই মোট উৎপাদনের ওজন প্রায় ৮০,০০০ নীল তিমি’র সমান। আঁটি সুদ্ধু অবশ্য। |
|
|
|
• এই হল ভারতীয় রেল-এর স্বাভাবিক ছবি। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নিয়োগকারী সংস্থা। ১৫ লাখের ওপর মানুষ কাজ করেন এখানে। রোজ ১৪,৩০০ ট্রেন বোঝাই করে চলমান প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ যাত্রী, বেশির ভাগই রিজার্ভেশন ছাড়া। প্রতিটি ট্রেনের মোট যাত্রাপথের হিসেব ধরলে, সাড়ে তিন বার চাঁদে ঘুরে আসা যাবে। এখানেই তো একই ঘাটে থাকে প্যালেস অন হুইল্স এবং গরিব রথ। |
|
|
• শূন্য, তুমি কোথা হইতে আসিতেছ? উত্তরও তো জানা: ভারত আমার ভারতবর্ষ। আর্যাবর্ত, ব্রহ্মগুপ্ত, লীলাবতী, কণাদের স্বজাতি আমরা, ‘পাই’-এর রহস্যও পিথাগোরাসের আগেই নাকি জেনেছিলেন বুধায়ন। শুধু কি গণিত? শিক্ষার প্রাচীন ইতিহাসে আমাদের অনেক গৌরব। নালন্দা তো ছিলই, তারও বহু আগে, খ্রিস্টপূর্ব, এমনকী বুদ্ধপূর্ব যুগেই ছিল তক্ষশীলা ‘বিশ্ববিদ্যালয়’, অক্সফোর্ড কেমব্রিজ তখন সুদূর ভবিষ্যৎ। তা, এখনও তো আমাদের পড়ুয়ারা বিলেত আমেরিকায় প্রথম সারিতে? ঠিকই, তবে কিনা, সম্প্রতি প্রসিদ্ধ ‘পিসা’ প্রকল্পে দুনিয়ার পাঁচ লাখ ছাত্রছাত্রীর অঙ্ক, বিজ্ঞান, আর ‘রিডিং স্কিল’-এর পরীক্ষা হল। সে পরীক্ষায় ৭৩টি দেশের মধ্যে ভারত দ্বিতীয় হয়েছে। শেষ থেকে। হ্যাঁ, আমরা কিরগিজস্তানকে হারিয়ে দিয়েছি! |
|
|
• কপিলবস্তুর সেই রাজকুমার শুনলে আরও এক বার হাসতেন। ২০১০-১১ সালে সব দেশের মধ্যে অস্ত্র আমদানিতে প্রথম হয়েছে ভারত। দু’নম্বরে চিন। এত অস্ত্র কেন? ওই একই উত্তর: চিন। অস্ত্রসজ্জায় চিনের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্য ভারত ৮০০০ কোটি ডলার খরচ করেছে। আগামী পাঁচ বছরে খরচ হবে আরও অন্তত পাঁচ হাজার কোটি ডলার। একটা কথা আছে অস্ত্র যদি জমানো হয়, সেই অস্ত্র এক দিন না এক দিন ব্যবহার হবেই। বোমারু বিমান, রণতরী, ডুবোজাহাজ, সাঁজোয়া গাড়ি, ইত্যাদি ইত্যাদি আয়ুধসম্ভারে সমৃদ্ধ দুই প্রতিবেশীকে দেখে যদি মহাভারত মনে পড়ে, অবাক হওয়ার কিছু নেই। তবে আসল অস্ত্রের তো নাম করতে নেই, সেই পারমাণবিক প্রস্তুতি কোথায় কোন শমীবৃক্ষে নিহিত, দেবা ন জানন্তি... |
|
|
• ইদানীং গল্পটা একটু টোল খেয়েছে, তবু, ভারত এখনও ‘শাইনিং’, ৭ শতাংশ আয়বৃদ্ধি চিন ছাড়া কেউ ভাবতেও পারে না। একুশ শতক আমাদের। এই তো, গোটা দুনিয়ায় যত হতদরিদ্র মানুষ, তার ৪২ শতাংশ মহান ভারতে, চিন বহু যোজন পিছনে। কিংবা আন্তর্জাতিক সংস্থা আই এফ পি আর আই-এর তথ্য দ্রষ্টব্য: এ দেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় ৪৪ শতাংশ শিশুর ওজন যা হওয়া উচিত, তার চেয়ে কম। আফ্রিকার দরিদ্রতম দেশগুলিও এতটা পারেনি। আর একটা শুনবেন? শতকরা ৫২ জন বিবাহিতা নারী এবং ৭২ শতাংশ শিশু রক্তাল্পতায় ভোগে। সরকারি হিসেব। ভারত সরকার, আজ্ঞে। |
|
|
|
• মকর সংক্রান্তির দিন অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলবর্তী জেলাগুলোয় জমিয়ে হল মোরগের লড়াই।
সেই টুর্নামেন্টে বাজি ধরা হল প্রায় ২০০ কোটি টাকার। আগের বারের চেয়ে ১০০ কোটি বেশি। |
|
|
• টিপু সুলতান বনাম ইংরেজ, লড়াইয়ে এক নেটিভ সেপাই ধরা পড়ল। টিপুর বাহিনী তার নাকটি কেটে ছেড়ে দিল। এক দিশি বৈদ্য নতুন নাক তৈরি করে দিলেন। ব্রিটিশ জার্নালে সে খবর পড়ে সার্জন জে সি কার্পু পরীক্ষানিরীক্ষা শুরু করলেন। ১৮১৬: আধুনিক চিকিৎসায় শুরু হল ‘প্লাস্টিক সার্জারি’। কিন্তু বৈদ্যের গুরু কে? সুশ্রুত। তাঁর পদ্ধতিতে দু’হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে অস্ত্রোপচার চলছিল ভারতে। সুশ্রুত এক ব্যক্তি, না কি তাঁর সংহিতা বহু চিকিৎসকের সম্মিলিত জ্ঞান, জানা যায় না। কিন্তু চিকিৎসাশাস্ত্র ও রসায়নের এমন রচনা বিশ্বে বিরল। ১২০ রকমের সার্জারির যন্ত্রের উল্লেখ রয়েছে, তার ৫৬টির বিশদ বর্ণনা। ব্যবহারের আগে যন্ত্রগুলি জলে ফুটিয়ে নেওয়া হত, রোগীকে অজ্ঞান করা হত নানা মদিরা দিয়ে। ১৪ রকম পদ্ধতিতে ১৫ রকম ফ্র্যাকচার সারানোর কথা বলা হয়েছে। আধুনিক বিজ্ঞান এ সব পদ্ধতির পুনরাবিষ্কার করেছিল উনিশ শতকে। |
|
|
• পৃথিবী ই-মেল-এ চড়ে পাঁইপাঁই ঘুরুক, আমাদের সেই পুরনো ডাকব্যবস্থা, জয় হো! ইন্টারভিউয়ের চার দিন পর তার ডাক-পাঠানো চিঠি পেতে পারি, বা অজস্র চিঠি না-ই পেতে পারি, তবু ডাকবাক্স থেকে বেরোতে পারি না। তাই ভারতে এখনও প্রায় দেড় লাখ পোস্ট অফিস, পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি। বিশ্বের উচ্চতম পোস্ট অফিসটিও এখানেই হিমাচল প্রদেশের হিকিম-এ। |
|
|
• ছবিটা দেখে বিমর্ষ হবেন না। এই মেয়ে যে জন্মাতে পেরেছে, সে ওর পরম সৌভাগ্য। এ দেশে এখন বছরে কয়েক লাখ কন্যাভ্রূণকে মেরে দেওয়া হচ্ছে। আধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে জন্মের আগেই ছেলে না মেয়ে সেটা দিব্যি চিনে নেওয়া যায় তো, তাই ভারী সুবিধে হয়েছে, আগের মতো গলা টিপে, বালিশ চাপা দিয়ে, নুন খাইয়ে সরাতে হয় না। প্রতি হাজার পুরুষ পিছু নারীর সংখ্যা ২০০১-এ নেমে গিয়েছিল ৯৩৩-এ। ২০১১’য় একটু উঠেছে, ৯৪০। ভরসা? তা হবে। |
|
|
• দেশের রাস্তায় এই মুহূর্তে ২০ কোটি গরু হাঁটছে। হাঁটছেন বলা ভাল অবশ্য। কারণ ২০০৩ সালে সংসদে একটি গরু’র অধিকার সনদ পেশ করা হয়েছিল। সেটি এখনও আইন হয়নি, কিন্তু আর কোথাও কি এমন বিল পেশ করা সম্ভব? |
|
|
• জিতলে সপ্তম স্বর্গ, নয়তো গলায় খড়্গ সরল রেখায় চলে ভারতীয় ক্রিকেট। বিশ্বজয় সুদূর অতীত, তবু ব্যাট উঁচিয়ে চলছি, কারণ আমাদের বোর্ড-এর অর্থনৈতিক জোর ধুরন্ধর। যে কোনও সুপারতারকাকে নিলামে তোলা আমাদের বাঁ হাতের খেল। শুধু আমেরিকাকে পেলে, কে বিগ ব্রাদার দেখিয়ে দিতাম! আক্ষরিক অর্থেই নয়, প্রকৃত অর্থেও আমরা শিখরে। পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু ক্রিকেট মাঠ হিমাচলের চৈল-এ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৪৪৪ মিটার উঁচু। পাটিয়ালার মহারাজকে ইংরেজরা শিমলায় ঢুকতে না দেওয়ায়, তিনি রেগেমেগে পাহাড় সমান করে এ মাঠ বানান। |
|
|
• টাটানগর শুনেছেন, এ বারে শুনুন স্ন্যাপডিল.com নগর। স্ন্যাপডিল, যারা অনলাইন জিনিস কেনা-বেচা করে, উত্তরপ্রদেশের শিবনগর গ্রামের উন্নয়নের ভার নিয়েছে। মানে জলের ব্যবস্থা, রাস্তা বানানো, স্কুল মেরামত ইত্যাদি। কৃতজ্ঞ গ্রামবাসী তাই গ্রামের নাম বদলে ফেললেন। |
|
|
• ‘বাচ্চাদের খেলা’ বলে তুচ্ছ করলে মস্ত ভুল হবে। আসলে ওরা সাপ নয়, পাপ। আর মই? অবশ্যই পুণ্যের প্রতীক। তার মানে খেলাটা কর্মফলের। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে কবি এবং সন্ত জ্ঞানদেব এই মর্মেই তৈরি করেছিলেন ‘মোক্ষপট’। উনিশ শতকে এ খেলা ইংরেজদের ভারী পছন্দ হল, তারাও তো তখন ভিক্টোরীয় নৈতিকতা নিয়ে ব্যতিব্যস্ত। দেখতে দেখতে ইংল্যান্ড হয়ে খেলাটি ছড়িয়ে পড়ল বিভিন্ন ব্রিটিশ উপনিবেশে। চতুরঙ্গ থেকে শতরঞ্জ হয়ে দাবার অভ্যুত্থানের কাহিনি আমরা খুব জানি, কিন্তু সাপলুডোর দিগ্বিজয়কে ভারতের ইতিহাসে তার প্রাপ্য গৌরব দেওয়া হয়নি। খুব অন্যায়। |
|
|
• ভারতের মন ইয়া বড়। যা করে, একটু বেশি বেশিই করে ফেলে। এই যেমন ধরুন আমাদের সিনেমা। ঘুম থেকে উঠেই অ্যানাউন্সমেন্ট, দিন গড়াতে না গড়াতে অ্যাকশন আর তার পরই রিলিজ। এই ট্রেন্ড-এর চোটে আমরাই এখন পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ফিল্ম তৈরি করি। দশ গোল হলিউডকে। গত বছর সারা দেশে বিক্রি হয়েছিল ৩২০ কোটি টিকিট। হিরো হওয়ার খোঁজে কত জন মুম্বইতে নিখোঁজ, সে খবর অবশ্য এখনও এসে পৌঁছয়নি। |
|
|
• ২০০১-এ কৃত্রিম উপগ্রহগুলি একটি ছবি তোলে, যা খুঁটিয়ে দেখার পর বোঝা যায়, সেটি এলাহাবাদের ছবি। মহাকুম্ভ চলাকালীন এলাহাবাদ। পরিসংখ্যান ঘেঁটে আরও জানা যায়, যে একটি কোনও ইভেন্ট-এ এর আগে এত মানুষ কোথাও, কখনও জমা হননি। সে বার গঙ্গায় পা ডুবিয়েছিলেন প্রায় ৬০ মিলিয়ন মানুষ। এর মধ্যে অন্তত ১ মিলিয়ন বিদেশ থেকে এসেছিলেন। কত জন হারিয়ে গিয়েছিলেন, সেই ছবিও কি উপগ্রহগুলি তুলেছিল? কে জানে! |
|
|
|
|
|
|
|